সময়ের আগেই শেষ হলো পদ্মা রেল প্রকল্প; ১,৮৪৫ কোটি টাকা সাশ্রয়
নির্ধারিত সময়ের আগেই পদ্মা রেল লিঙ্ক প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ায় প্রাথমিক বাজেট থেকে ১ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
প্রকল্পটি ২০২৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড ছিল ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।
এখন ডিসেম্বরের প্রথম দিন থেকেই পুরো রেলপথ চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে বিদেশি অর্থায়নে সম্পন্ন হওয়া কয়েক বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পটি সক্ষমতার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ নিয়ে চালু হচ্ছে। এর কারণ মূলত জনবল ও রোলিং স্টকের ঘাটতি।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে ঢাকাকে যশোরের সঙ্গে যুক্ত করা বহুল প্রত্যাশিত ১৬৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথে দৈনিক ২৪টি ট্রেন পরিচালনার পরিকল্পনা থাকলেও প্রাথমিকভাবে চলবে ৮টি ট্রেন।
ব্যয় সাশ্রয়ের উদ্যোগ
উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। তবে এখন তা সংশোধিত হয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৪০১ কোটি টাকায়।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের হাতে আসা প্রকল্পটির নথিতে দেখা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যয় সাশ্রয় করে ১ হাজার ২২৩.৬৫ কোটি টাকা বাঁচানো হয়েছে। আর ৬২১.৮৯ কোটি টাকা সাশ্রয় করা হয়েছে ডিপি দ্বিতীয়বার সংশোধন করে।
প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'সময়মতো প্রকল্প শেষ করার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। প্রকল্পের বাজেট প্রণয়নকালে মূল্যস্ফীতির বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়েছিল। তবে সাত মাস আগেই প্রকল্প শেষ হওয়ায় মূল্যস্ফীতির বাড়তি খরচ এড়ানো গেছে।
'এছাড়া আমরা বাস্তবায়ন পর্যায়ে ব্যয়সাশ্রয়ী কৌশল নিএচি। নিশ্চিত করেছি, শুধু অতি প্রয়োজনীয় হলেই যেন খরচ করা হয়, যাতে এক টাকাও অপচয় না হয়।'
প্রকল্পের একটি নথি অনুযায়ী, ডিজাইন ও জরিপ ফি-র ৪৪.৬৩ কোটি টাকা, সিগন্যালিং ও টেলিযোগাযোগে ৪.৮০ কোটি টাকা এবং পরিবেশগত সুরক্ষায় ১২.৬২ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
পাশাপাশি লেভেল ক্রসিং গেট, নদী শাসন ও ব্যালাস্টলেস ট্র্যাক নির্মাণসহ প্রভিশনাল খাতে ৬৭৬.৩৩ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
এছাড়া পণ্যের মূল্য সমন্বয় থেকে ১ হাজার ৩৪১.১৮ কোটি টাকা ও ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সি থেকে ৮৫৫.৯১ কোটি টাকা সাশ্রয় করা হয়েছে।
মানবসম্পদ ও রোলিং স্টকের ঘাটতি
প্রকল্প পরিচালনায় জনবলের ঘাটতি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশ রেলওয়ে এখনও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় ১ হাজার ৬৮০টি পদ সৃষ্টির অনুমোদন পায়নি। ফলে প্রকল্প পরিচালনায় বিদ্যমান কর্মী ও কিছু আউটসোর্স করা কর্মীর ওপরই নির্ভর করতে হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার শাহাদাত আলী টিবিএসকে বলেন, 'আমরা প্রয়োজনীয় অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করলেও এখনও পর্যন্ত তা পাইনি। তাই বিদ্যমান জনবল এবং আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এ রুটের কার্যক্রম শুরু করতে হবে।'
বর্তমানে রেলওয়ে সব ক্যাটাগরিতেই জনবল সংকটে রয়েছে। প্রয়োজনীয় জনবলের মাত্র অর্ধেক নিয়ে কাজ করছে তারা।
শাহাদাত আলী বলেন, 'বিদ্যমান জনবল সংকটের কারণে প্রকল্পের আওতাঅধীন নতুন ১৪টি স্টেশনের মধ্যে মাত্র ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন চালু করা হবে।'
রোলিং স্টকের ঘাটতি কার্যক্রমে আরও বাধা সৃষ্টি করছে।
প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, 'রোলিং স্টকের ঘাটতি থাকলেও অন্যান্য চলমান প্রকল্পের মাধ্যমে আগামী বছর বাড়তি স্টক পাওয়া যাবে। শুরুতে আটটি ট্রেন পরিচালনা করা হবে। তবে চাহিদা বাড়লে ডাবল ট্রিপ চালানোর সুযোগ থাকবে।'
নতুন রেলপথটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার গতিতে চলার উপযোগী করে নির্মাণ করা হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে এ লাইনে ট্রেন ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলবে। এতে ঢাকা থেকে যশোর যাত্রার সময় ৮ ঘণ্টার থেকে কমে মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টায় নেমে আসবে।
চীনের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড, পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিমি অংশ গত বছরের ১০ অক্টোবর চালু হয়। এ অংশে বর্তমানে পাঁচটি ট্রেন চলছে।