প্রতি চারজনে একজন স্ট্রোক রোগীর বয়স ৫০-এর কম: বিএসএমএমইউ গবেষণা
দেশে প্রতি ১ হাজার জনের মধ্যে প্রায় ১৩.৬ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। আশঙ্কাজনক বিষয় হলো, এদের মধ্যে ২৩ শতাংশ রোগীর বয়স ৫০ বছরের কম। অর্থাৎ প্রতি চারজন স্ট্রোক রোগীর একজনের বয়স ৫০ বছরের নিচে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
চলমান ওই গবেষণায় দেখা গেছে, ৬০ থেকে ৬৯ বছর বয়সি মানুষের মধ্যে স্ট্রোকের হার সবচেয়ে বেশি। এই বয়সসীমার ২৮ শতাংশ মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, স্ট্রোক রোগীদের মধ্যে পুরুষের হার (৫৯ শতাংশ) নারীদের হারের (৪১ শতাংশ) অনেক বেশি। এছাড়া ৭১ শতাংশ স্ট্রোক রোগীর উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে ও ৪১ শতাংশ রোগী ধূমপান করেন।
মস্তিষ্কে অপর্যাপ্ত রক্ত প্রবাহ হলে স্নায়ুকোষ মরে গিয়ে স্ট্রোক হয়। এতে মস্তিষ্কের ক্ষতি, দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অক্ষমতা ও মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে।
বিএসএমএমইউয়ের ডিপার্টমেন্ট অভ পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস গত বছর এ গবেষণা শুরু করে। কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার পুমদি, শাহেদল, আড়াইবাড়িয়া ও গোবিন্দপুর গ্রামের মোট ১ লাখ ৬৮ হাজার ২১৪ জন মানুষের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
গবেষণার প্রধান গবেষক ও ডিপার্টমেন্ট অভ পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস-এর সহযোগী অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জামান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, প্রতি চারজন স্ট্রোক রোগীর মধ্যে একজনের বয়স ৫০ বছরের নিচে হওয়াটা বড় উদ্বেগের বিষয়। এছাড়া প্রায় এক-তৃতীয়াংশ স্ট্রোক রোগী উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন।'
তিনি বলেন, উচ্চ রক্তচাপসহ অন্যান্য ঝুঁকির কারণগুলো কমানো স্ট্রোকের হার কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এই অধ্যাপক জানান, কিশোরগঞ্জের ২৮ হাজার পরিবারের কাছ থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। জনসংখ্যাভিত্তিক এই রেজিস্ট্রি কার্যক্রম শুরু হয় ২০২৩ সালের জুলাইয়ে। কাজটি আগামী বছরের মার্চে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস-২০২৩-এর তথ্যমতে, দেশে মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ স্ট্রোক।
স্ট্রোকের হার বাড়ছে
২০২২ সালে পরিচালিত 'প্রিভ্যালেন্স অ্যান্ড রিস্ক ফ্যাক্টরস অভ স্ট্রোক ইন বাংলাদেশ: আ ন্যাশনওয়াইড পপুলেশন-বেজড সার্ভে' শীর্ষক গবেষণায় দেখা গেছে, স্ট্রোকের হার সামান্য বেড়েছে।
ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অভ নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতাল পরিচালিত ওই গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে প্রতি ১ হাজার জনে ১১.৩৯ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন।
গবেষণায় দেখা গেছে, ময়মনসিংহ বিভাগে স্ট্রোকের হার সবচেয়ে বেশি এবং রাজশাহী বিভাগে সবচেয়ে কম। এছাড়া গ্রামীণ এলাকায় স্ট্রোকের হার শহরের তুলনায় বেশি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, স্ট্রোকের হার বাড়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এর মধ্যে চাপের জীবনযাত্রা, ফাস্টফুড খাওয়া, শারীরিক পরিশ্রম কম করা এবং ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি অন্যতম।
তিনি আরও বলেন, রাত জাগা, সকালবেলার ঘুম বাদ দেওয়া এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের কারণে তরুণদের মধ্যে স্ট্রোকের হার বাড়ছে।
শফিকুল ইসলাম পরামর্শ দেন, 'স্ট্রোক প্রতিরোধে চাপমুক্ত জীবনযাপন, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে এসব বিষয় অবশ্যই মেনে চলতে হবে।'
শফিকুল ইসলাম স্ট্রোক রোগীদের দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, 'স্ট্রোক হলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। যদি রক্তনালী বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব তা খুলে দেওয়া অপরিহার্য। স্ট্রোকের প্রথম চার ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যে চিকিৎসা শুরু করলে বেশিরভাগ রোগী পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।'