সেন্টমার্টিনকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই কিছু বিধিনিষেধ মানতে হবে: উপদেষ্টা হাসান আরিফ
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/11/23/adviser_hassan_ariff_-_tbs.jpg)
প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ভূমি মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) আগারগাঁওয়ের চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ফেয়ারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, "সেন্টমার্টিন ভ্রমণের বিষয়ে সরকার যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, তাতে পর্যটক আকর্ষণে তেমন প্রভাব পড়বে না। আর এই প্রবালদ্বীপকে বাঁচাতে হলে আমাদের অবশ্যই কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে বলে।"
"শুধু পর্যটন দেখলেই চলবে না, আগে তো দ্বীপের অস্তিত্ব রক্ষা, তারপর ব্যবসা এবং অন্যকিছু। এই বাস্তবতা আমাদেরকে মানতেই হবে," যোগ করেন উপদেষ্টা।
তিনি আরও বলেন, "অনেক দেশেই জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নির্ধারণ করে দেয়, সেখানে একসঙ্গে কতজন পর্যটক থাকবেন। সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ। প্রবালের ওপর এ দ্বীপ। এটির ধারণক্ষমতা অনুযয়ী সেখানে পর্যটক যেতে দেওয়া হচ্ছে।"
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, "একটি ১০ বেডের হোটেলে যদি ৩০ জন যায়, তবে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। সেখানে ওয়াশরুম বেডরুম রান্নাঘর সবকিছুই নষ্ট হয়ে যায়। ইতোমধ্যে সেন্টমার্টিনে একসঙ্গে বহু সংখ্যক পর্যটক যাওয়ার কারণে অনেক ড্যামেজ হয়েছে। এখন সেটাকে সীমিত পর্যায়ে নিয়ে আসা হচ্ছে, যাতে সেন্টমার্টিন বাঁচিয়ে রাখা যায়।"
প্রসঙ্গ গত ২২ অক্টোবর সরকার জানান, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে সরকার সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকের সংখ্যা সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি- এই চার মাস সেখানে পর্যটক সীমিত থাকবে। নভেম্বর মাসে পর্যটকরা যেতে পারবেন, কিন্তু রাতযাপন করতে পারবেন না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি পর্যটক সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন না। আর ফেব্রুয়ারি মাসে সেন্টমার্টিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজে পর্যটক যাওয়া বন্ধ রাখা হবে।
গত মাসের শেষে ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি মো. রফিউজ্জামান সরকারের বিধিনিষেধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, "আমাদের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও সেন্টমার্টিনে রাত্রি যাপন ও পর্যটক যাতায়াত সীমিত করার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে পর্যটন শিল্প ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং সাধারণ উদ্যোক্তারা সর্বস্বান্ত হয়ে যাবেন।"
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কোনো পুনর্বাসন করা হবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা হাসান আরিফ বলেন, "আমার প্রথম প্রশ্ন তারা রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আরঅ্যান্ডডি) করেছে কি-না। যারা ওখানে সেবা দেয় বা ট্যুর অপারেটর হিসেবে কাজ করছেন, তাদের দায়িত্ব ছিল তাদের সেখানে আগে সার্ভে করা। কত পর্যটক ধারণ করতে পারবে, যাতে পরিবেশের ক্ষতি হবে না।"
তিনি বলেন, "আমি যদি বিকট শব্দে গান শুনি সেটা যেমন এন্টারটেইনমেন্ট হয় না- তেমনি আমি দল বেঁধে গেলাম, মাইকে গান শুনলাম- এটাও ট্যুরিজম হলো না।"
দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সম্পূর্ণ নিরাপদে ঘুরতে পারবেন জনিয়ে উপদেষ্টা বলেন, "আমার কাছে অনেকে প্রশ্ন করেছেন, দেশে নিরাপত্তার কোনো অভাব আছে কি-না। আমার উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এই জনসাধারণের যে অংশগ্রহণ, তাদের যে উৎসাহ-উদ্দীপনা, তাদের যে হাস্যোজ্জ্বল চেহারা নিয়ে এ মেলায় এসেছেন- এখানে কারও বলার অপেক্ষা রাখে না যে, তারা নিরাপদ বোধ করছেন।"
আগারগাঁওয়ের চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের মূল ভবনের বাইরে ফাঁকা জায়গায় অস্থায়ী স্টল করে এ মেলার আয়োজন করে বেসরকরি একটি প্রতিষ্ঠান। ১৭ দিনব্যাপী এ মেলা শেষ হবে ২৩ নভেম্বর।
মেলা ঘুরে দেখা গেছে পোশাক, স্টিকের বিভিন্ন আসবাবপত্র, টেবিলওয়্যার, কিচেন ওয়্যার, চামড়াজাত পণ্য, জুয়েলারি, ওয়ান পিছ, টপস, লেডিস প্যান্ট, গেঞ্জি, ফ্রক এবং ছেলেদের শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন পণ্য রয়েছে।
মেলায় দেশি পোশাকের চেয়ে ভারতীয় ও পাকিস্তানি পোশাকের স্টল বেশি দেখা গেছে।
বিক্রেতা সাফাদ কানিজ বলেন, "নারীদের জন্য আমরা পাকিস্তান থেকে আমদানি করে পোশাক এনেছি। আমরা অনলাইনে বিক্রি করি, এখন মেলায় আসলাম। ৮০০-৬,৫০০ টাকার সালোয়ার-কামিজ আছে আমাদের এখানে। আমাদের ভালো বিক্রি হয়েছে।"
সৌরভ হোসেন ভারতীয় থ্রি-পিস বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, "৮ ফিট বাই ৮ ফিট একটি স্টল ভাড়া ৮০,০০০ টাকা। অনেক দর্শনার্থী আসেন, কিন্তু ক্রেতা কম। স্টল ভাড়া বাদ দিয়ে আমাদের তেমন লাভ থাকবে না।"
শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মেলায় ভিড় ছিল বেশি। বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেখা যায়, দলবেঁধে পরিবার-পরিজন নিয়ে আসছে মানুষ। মেলার ভেতরেও তিল ধারনোর ঠাঁই ছিল না।
মেলায় দর্শনার্থী আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, "ভেবেছিলাম দেশি ক্ষুদ্র উদ্যেক্তাদের হাতে তৈরি পণ্য পাবো এখানে। কিন্তু নিউমার্কেটে যে পণ্য বিক্রি হয় সেগুলোই সাজানো। তাই তেমন কিছু কেনা হয়নি। পরিবার নিয়ে ঘোরা হলো।"