উপ-রাষ্ট্রপতি পদ ফিরিয়ে আনতে চায় বিএনপি: এর আগে কারা ছিলেন এ পদে
পরপর দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়া, উপ-প্রধানমন্ত্রী, উপ-রাষ্ট্রপতি, সংসদে উচ্চকক্ষ ও গণভোটের বিধান রাখাসহ সংস্কার কমিশনের কাছে সংবিধানের ৬২ জায়গায় সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি।
বিদ্যমান সংবিধান ও শাসন কাঠামো অনুযায়ী, সংসদ সদস্যদের ভোটে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা হয়। নেই কোনো উপ-রাষ্ট্রপতি বা ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ।
তবে একসময় বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি-শাসিত সরকার ব্যবস্থায় সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি হওয়ার বিধান এবং উপ-রাষ্ট্রপতি পদ দুটোই বিদ্যমান ছিল। ১৯৯১ সালে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার পরে সেই পদ্ধতি বাতিল হয়।
রাষ্ট্রপতি-শাসিত শাসন ব্যবস্থায় উপ-রাষ্ট্রপতি হলো দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদ। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ, অপসারণ বা মৃত্যুর ঘটনায় উপরাষ্ট্রপতিই ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বিভিন্ন দেশে ভাইস-প্রেসিডেন্ট বা উপ-রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা এবং ভূমিকা তাদের শাসনব্যবস্থা, সংবিধান এবং রাজনৈতিক কাঠামোর ওপর নির্ভর করে।
এক নজরে বাংলাদেশের সকল উপ-রাষ্ট্রপতি
বাংলাদেশের প্রথম উপ-রাষ্ট্রপতি ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, যিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ এই পদে দায়িত্ব পালনকারী সর্বশেষ ব্যক্তি ছিলেন।
১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের পর সৈয়দ নজরুল ইসলাম আবারও উপ-রাষ্ট্রপতির পদে নিযুক্ত হন। তবে, সেই দায়িত্ব দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার পরপরই বিদ্রোহী সেনা কর্মকর্তারা মোশতাক আহমদকে রাষ্ট্রপতি পদে বসান। তখন মোশতাক আহমদের সঙ্গে তিন মাসের জন্য উপ-রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন মুহাম্মদ উল্লাহ।
উল্লেখ্য, মুহাম্মদ উল্লাহ ছিলেন ১৯৭১ সালের অস্থায়ী সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের রাজনৈতিক উপদেষ্টা এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ডেপুটি স্পিকার।
এরপর, ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে সরিয়ে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান নিজেই রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তখন উপ-রাষ্ট্রপতির পদে নিযুক্ত হন বিচারপতি আবদুস সাত্তার।
এর এক বছর পর, ১৯৭৮ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে ফের রাষ্ট্রপতি হন জিয়াউর রহমান। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর উপ-রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন। এভাবে, ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত টানা চার বছর বাংলাদেশের উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিচারপতি আবদুস সাত্তার।
আবদুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর উপ-রাষ্ট্রপতি হন ড. মির্জা নুরুল হুদা। ১৯৮২ সালের ২৩ মার্চ পর্যন্ত এ পদে আসীন ছিলেন তিনি। এরপর ক্ষমতার কেন্দ্রে আসেন তৎকালীন সেনাপ্রধান লে. জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ।
১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত, প্রথমে সামরিক শাসক ও পরে রাষ্ট্রপতি হয়ে ক্ষমতায় ছিলেন এরশাদ।
এরশাদের অধীনে ১৯৮৬ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে ১৯৮৯ সালের ১২ আগস্ট পর্যন্ত উপ-রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালন করেন বিচারপতি এ কে এম নূরুল ইসলাম।
পরবর্তীতে বিচারপতি নূরুল ইসলামের স্থলাভিষিক্ত হন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন।
গণ-আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৪ ডিসেম্বর রাতে পদত্যাগের ঘোষণা দেন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ৬ ডিসেম্বর উপ-রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। এরপর ক্ষমতা হস্তান্তরের লক্ষ্যে এরশাদ বিচারপতি সাহাবউদ্দিন আহমদকে উপ-রাষ্ট্রপতির পদে নিয়োগ দেন। এরশাদের পদত্যাগের পর বিচারপতি সাহাবউদ্দিন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
বিচারপতি সাহাবউদ্দিন আহমদ ছিলেন বাংলাদেশের শেষ উপ-রাষ্ট্রপতি। সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে উপ-রাষ্ট্রপতির পদ বিলুপ্ত হয়, এবং এরপর থেকে আর কাউকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
পরবর্তীতে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী পাস হলে, প্রায় ১৭ বছর পর আবার দেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। একই বছরের অক্টোবরে বিচারপতি সাহাবউদ্দিন আহমদের বিদায়ের পর আব্দুর রহমান বিশ্বাস রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।