সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার রহিত করা নিয়ে কে কী বলছেন
দুদিন আগে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুন নেভানোর সময় ট্রাক চাপায় নিহত হন ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সচিবালয়ে এই আগুনের ঘটনার পরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য দেওয়া অস্থায়ী প্রবেশ পাস ছাড়া সব ধরনের অস্থায়ী (বেসরকারি) পাস বাতিল করেছে সরকার। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের জন্য প্রদত্ত অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ব্যবহার করেও সচিবালয়ে প্রবেশ সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
নিরাপত্তাজনিত কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে গতকাল ও আজ শনিবারে জানিয়েছেন সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তা। তবে কেউ কেউ মনে করতে পারেন, তদন্ত থেকে সাংবাদিকদের দূরে রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে সরকারের কর্মকর্তাদের একজন সচিবালয়ের সাংবাদিকরা প্রবেশ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ওপর জোর দিলেও, অপরজন বলেছেন এটি সাময়িক। এই অবস্থায়, সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল হয়েছে নাকি হয়নি— এনিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গতরাতের ঘোষণা, পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং ও উপ-প্রেস সচিব যা জানিয়েছেন, তা তুলে ধরা হলো।
সচিবালয়ে বেসরকারি প্রবেশ পাস ও সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন সাময়িক বাতিল
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য দেওয়া অস্থায়ী প্রবেশ পাস ছাড়া সব ধরনের অস্থায়ী (বেসরকারি) পাস বাতিল করেছে সরকার। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের জন্য প্রদত্ত অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ব্যবহার করেও সচিবালয়ে প্রবেশ সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এ নিষেধাজ্ঞার ফলে অ্যাক্রিডিটেশনধারী সাংবাদিকসহ বাইরের কেউ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না। এছাড়া, প্রতিটি মন্ত্রণালয় তাদের নিজস্ব অনুষ্ঠান অনুযায়ী সাংবাদিকদের দৈনিক অস্থায়ী প্রবেশ পাস ইস্যু করবে।
এদিন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞার জারির তথ্য জানানো হয়েছে।
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সচিবালয়ের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সচিবালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা বৃদ্ধির স্বার্থে সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা–কর্মচারীদের অনুকূলে দেওয়া স্থায়ী প্রবেশ পাস (ডিজিটাল এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম) এবং সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য দেওয়া অস্থায়ী প্রবেশ পাস ছাড়া সব ধরনের অস্থায়ী (বেসরকারি ব্যক্তিদের জন্য) সচিবালয় প্রবেশ পাস বাতিল করা হলো।
এছাড়াও, বাতিলকৃত বিভিন্ন ক্যাটাগরির সচিবালয় প্রবেশ পাসধারীরা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ, ক্রাইম কমান্ড এন্ড কন্ট্রোল সেন্টার, ডিএমপি, ১৫ আব্দুল গণি রোড, ঢাকায় স্থাপনকৃত বিশেষ সেলের মাধ্যমে নতুন করে অস্থায়ী প্রবেশ পাশের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এদিকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আজ শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) ব্যাখ্যা দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড শিগগিরই পর্যালোচনা করা হবে: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
প্রেস উইং জানিয়েছে, মূলত সচিবালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই সাংবাদিকদের প্রবেশ সীমিত করা হয়েছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার (কেপিআই) সুরক্ষা নিশ্চিতের খাতিরেই এ সিদ্ধান্ত।
সরকার বিদ্যমান প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড পর্যালোচনা করে নতুন কার্ড ইস্যুর জন্য শিগগিরই স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর কাছ থেকে আবেদন গ্রহণ করবে। এই সময়ের মধ্যে সাংবাদিকদের জন্য প্রতিটি মন্ত্রণালয় তাদের নিজস্ব অনুষ্ঠান অনুযায়ী দৈনিক অস্থায়ী প্রবেশ পাস ইস্যু করবে।
সাময়িক অসুবিধার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং সহযোগিতা কামনা করেছে সরকার, জানিয়েছে প্রেস উইং।
সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল হয়নি, সাময়িকভাবে সচিবালয়ে প্রবেশ সীমিত করা হয়েছে: আজাদ মজুমদার
আজ শনিবার এক ফেসবুক পোস্টে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার বলেছেন, কোনো সাংবাদিকের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে বাতিল করা হয়নি। কেবল সচিবালয়ের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার সীমিত করা হয়েছে। তা-ও খুবই অল্প সময়ের জন্য। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অস্থায়ী পাশ ইস্যু করা হবে। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শীঘ্রই বিদ্যমান সব প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডই পর্যালোচনা করা হবে এবং নতুন অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড ইস্যু করার জন্য সমস্ত স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের কাছে আবেদন চাওয়া হবে।
তিনি বলেন, 'কিছু লোক সরকারকে কঠোর হতে বলে আবার সামান্যতম কঠোর হলে গেল গেল রব তোলে। এই দ্বিচারিতা বন্ধ হওয়া জরুরি। সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার সীমিত করা নিয়ে যথারীতি এই দ্বিচারিতা আবার শুরু হয়েছে। প্রবেশাধিকার সীমিত করার এই সিদ্ধান্তটি খুবই সাময়িক।'
তিনি বলেন, এটা এখন ওপেন সিক্রেট, বাংলাদেশ সচিবালয়কে দালালদের হাটবাজার বানিয়ে ফেলা হয়েছিলো। সরকারের সর্বশেষ এই সিদ্ধান্তে দালাল ছাড়া কারো শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা মনে করি, এটা সাংবাদিকদের কাজ আরো সহজ করবে। এখন সাময়িক অসুবিধা হলেও চূড়ান্ত বিচারে এটা সবাইকে সহযোগিতা করবে। এজন্যই সবার সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে।
সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডে রাষ্ট্রের একটা বিপর্যয় হয়েছে এটা মানতে কারো দ্বিধা থাকার কথা নয়। এজন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটিও করা হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কখনো স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক, সেনাবাহিনীর বিষ্ফোরক বিশেষজ্ঞ দিয়ে একসাথে কোনো ঘটনার তদন্ত করা হয়নি।
'বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার স্বচ্ছতায় বিশ্বাসী বলেই এই ধরনের কমিটি করা হয়েছে। সাংবাদিকদের দূরে রেখে তদন্ত কাজ চালানো হবে বলে যারা আবোল তাবোল বকছেন এরা মারাত্মক ভুলে আছেন। আমাদের বিশ্বাস, সাংবাদিকরাও বিষয়টি উপলব্ধি করবেন এবং চলমান পরিস্থিতিতে সরকারকে সহযোগিতা করবেন' - যোগ করেন তিনি।