চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব সাময়িক বাতিল
চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর এক শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব সাময়িকভাবে বাতিল করেছে বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ড. এস এম শোয়াইবের সই করা এক নোটিশে বলা হয়, বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির ডেপুটি রেজিস্ট্রার সালাউদ্দিন শাহরিয়ার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'গতকাল চট্টগ্রামে একজন আইনজীবী হত্যার ঘটনায় ওই শিক্ষার্থী জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি নিয়ে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা এ সংক্রান্ত তথ্য–প্রমাণ আবেদন করেন।'
'সেটি বিবেচনা করে আইন বিভাগের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তার ছাত্রত্ব বাতিল করে,' বলেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম নগরীর আদালত ভবন এলাকায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর হওয়াকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভের মাঝে খুন হন সাইফুল ইসলাম আলিফ।
নিহত সাইফুল সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) ছিলেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একটি ফেসবুক পোস্টে জানানো হয়েছে।
এর আগে হাতে দেশীয় অস্ত্রসহ একদল যুবকের একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সে ছবিতে থাকা একজনকে ওই শিক্ষার্থী বলে দাবি করেন তার পরিচিতরা।
পরে ছবিতে থাকা ওই শিক্ষার্থী আলিফ হত্যায় অংশ নিয়েছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া আরেকটি ভিডিওতে দাবি করা হয়।
তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। ছাত্রত্ব হারানো যুবক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন বিভাগের শিক্ষার্থী।
এদিকে আইনজীবী হত্যার ঘটনায় আটকদের মধ্যে সাতজনের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ।
বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় এ তথ্য জানান তিনি।
'চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত ৩৩ জনকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে সাতজনের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে,' বলেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় সকাল ১১টার দিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে চট্টগ্রাম ৬ষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হলে তার আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এরপরই কয়েকশ ইসকন সমর্থক আদালত চত্বরে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা চিন্ময়কে বহনকারী প্রিজন ভ্যান প্রায় আড়াই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন।
পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে চাইলেও তারা পথ অবরোধ করে রাখেন। এ সময় প্রিজনভ্যানের চাকাও পাংচার করে দেওয়া হয়। পরে সাউন্ড গ্রেনেড ও লাঠিচার্জ করে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এ সময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এতে কয়েকজন আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আলিফকে আদালতের মূল ফটকের প্রবেশমুখের বিপরীতে রঙ্গম কনভেনশন হলের পাশের গলি থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।