নতুন এলএনজি ক্রয়নীতি: সরবরাহকারীর তালিকায় শেল, বিপি, গ্লেনকোর, আরামকো
আরামকো, গ্লেনকোর ও বিপিসহ প্রায় দুই ডজন বহুজাতিক জ্বালানি কোম্পানিকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহকারীর তালিকায় রেখেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সরবরাহকারীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়িয়ে এলএনজি ক্রয়ের খরচ কমাতে এ অনুমোদন দিয়েছে দেওয়া হয়েছে।
জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান রয়টার্সকে বলেন, স্পট মার্কেট বা খোলাবাজার থেকে এলএনজি ক্রয়ে এর আগে শেখ হাসিনার সরকার ভিটোল, গানভর ও এক্সিলারেট এনার্জিকে প্রাধান্য দিয়েছে। কিন্তু, এগুলো উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ক্রয় না করে প্রাইভেট টেন্ডারের মাধ্যমে করা হতো। তবে গত আগস্টে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পরে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার এখন এলএনজি ক্রয়ে উন্মুক্ত দরপত্রের দিকে এগোচ্ছে।
১৭ কোটির বেশি জনসংখ্যার বাংলাদেশে ২০১৮ সালে প্রথম এলএনজি আমদানি শুরু হয়। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ৫২ লাখ মেট্রিক টন এলএনজি আমদানি করেছে, যা আগের বছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বেশি। জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং সে তুলনায় স্থানীয়ভাবে গ্যাসের উত্তোলন কমে যাওয়ায়– বাংলাদেশের এলএনজি চাহিদা আরও বাড়তেই থাকবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা (বা ৫০৪ মিলিয়ন ডলার) এর এলএনজি আমদানি করে। বেশিরভাগটাই প্রয়োজন হয় বিদ্যুতকেন্দ্রের জ্বালানির জন্য। বিশ্ববাজার থেকে কেনা এলএনজির অর্ধেকের বেশি সরকার থেকে সরকারের মধ্যে চুক্তির ভিত্তিতে কেনা হয় কাতার ও ওমান থেকে, আর বাকিটা কেনা হয় স্পট মার্কেট বা খোলাবাজার থেকে।
বাংলাদেশের অর্ধেকের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা হচ্ছে গ্যাস-ভিত্তিক, এরমধ্যে গ্যাসের সংকটে বিপাকে পড়তে হয় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে।
এই প্রেক্ষাপটে ফাওজুল কবির খান বলেছেন, এলএনজি সরবরাহের জন্য আরামকো, শেল, বিপি'র মতো জ্বালানিখাতের জায়ান্টরা আবেদন করেছে। উন্মুক্ত দরপত্রের এটাই সবচেয়ে বড় সুবিধা। আমরা আরও উন্মুক্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরবরাহকারীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়িয়ে আরও খরচ বাঁচাতে চাই।
তিনি জানান, কী পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত রুপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল) এর দেওয়া নতুন ক্রয়াদেশগুলোর ওপর নির্ভর করবে। এসময় কবে নতুন অর্ডার দেওয়া হবে তা জানাননি জ্বালানি উপদেষ্টা।
সৌদি আরবের জ্বালানি জায়ান্ট আরামকো সিঙ্গাপুরে তাদের নতুন একটি বাণিজ্যিক শাখা খুলেছে। এটিসহ বিপি সিঙ্গাপুর, শেল ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং মিডল ইস্ট এবং গ্লেনকোর সিঙ্গাপুর-সহ ২২টি নতুন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের এলএনজি সরবরাহকারীদের তালিকায় রয়েছে। সম্ভাব্য সরবরাহকারী হিসেবে এতে মোট ৩৩টি প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে, তালিকা দেখে এবিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে রয়টার্স।
তালিকায় থাকা অন্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভিটোল এশিয়া, গানভর সিঙ্গাপুর ও এক্সিলারেট এনার্জি এরমধ্যেই বাংলাদেশে এলএনজি সরবরাহ করছে। বাংলাদেশের উন্মুক্ত দরপত্রের দিকে যাওয়ার বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে তাতে তাৎক্ষনিকভাবে সাড়া দেয়নি কোম্পানিগুলো।
এর আগে নভেম্বরে স্পট ভিত্তিতে এলএনজি সরবরাহের জন্য আগ্রহী জ্বালানি কোম্পানিগুলোকে দরপত্র দেওয়ার আহ্বান জানায় আরপিজিসিএল। নতুন এসব কোম্পানির যে তালিকা করা হয়েছে তা দিয়ে আগের তালিকাটি পুনঃস্থাপিত হবে। আগের তালিকায় ২২টি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ছিল বলে রয়টার্সকে জানান পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ বছরে প্রায় ১০০ কার্গো এলএনজি আমদানি করে, এরমধ্যে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির ভিত্তিতে কাতার ও ওমান থেকে ৫০টির বেশি কার্গো আনা হয়, বাকি চালানগুলো স্পট মার্কেটের বেসরকারি কোম্পানিগুলো সরবরাহ করে বলে জানান ফাওজুল কবির খান।