ফেসবুকে 'অবমাননামূলক' পোস্ট: সুনামগঞ্জে হিন্দুদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট ও ভাঙচুর
স্থানীয় এক যুবকের বিরুদ্ধে ফেসবুকে ধর্ম 'অবমাননামূলক' পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে হিন্দুদের বেশ কয়েকটি বাড়ি ও দোকানে হামলা ও লুটপাট করেছে স্থানীয় একদল মানুষ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাতের মধ্যে হামলার ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে রাত প্রায় আড়াইটার দিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস)- বলেন, 'রাতেই অভিযুক্ত যুবককে আটক করা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা হামলাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। অভিযোগ পেলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।'
দোয়ারাবাজার লোকনাথ মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক খোকন রায় বলেন, 'যে যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ম অবামনানার অভিযোগ উঠেছে তার বাড়ি উপজেলার মংলারগাও গ্রামে। মঙ্গলবার রাতে ওই গ্রামের অন্তত ত্রিশটি হিন্দু বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এরপর মিছিল নিয়ে বাজারে এসে শতাধিক হিন্দু দোকান ভাঙচুর করা হয় ও ৪/৫ টি স্বর্ণের দোকান লুট করা হয়।'
তিনি দাবি করেন, 'বিক্ষোভরত হামলাকারীরা লোকনাথ মন্দির ভাঙচুর চালিয়ে ২০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি করেছে।'
ওই রাতে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা গৌর দাসের বাসভবন ও পারিবারিক মন্দিরে হামলা চালানো হয় ও ভাঙচুর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন খোকন।
তবে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, কয়েকটি হিন্দু বাড়িতে হামলা হয়েছে। বিষয়টি অত বড় কিছু নয়।
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহের নিগার তনু টিবিএসকে বলেন, 'কিছু ঘরবাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। তবে কী পরিমাণ ঘরবাড়িতে ভাঙচুর, হামলা করা হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে।'
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, 'তেমন কিছু হয়নি। একটি মহল পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনাকে বড় করার চেষ্টা করছে। এলাকার পরিস্থিতি এখন প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।'
সম্প্রতি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার খবর প্রকাশের পর অন্তর্বর্তী সরকার চাপে পড়েছে।
গত সপ্তাহে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে এক হিন্দু ধর্মগুরুকে গ্রেপ্তারের পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংখ্যালঘুদের রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।
বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সময়ে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে।
ভয়েস অব আমেরিকার সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিশ্বাস করে যে অন্তর্বর্তী সরকার বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের তুলনায় ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বেশি নিরাপত্তা দিচ্ছে।