আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংঘটিত গণহত্যার স্বীকৃতি ভারতকে দিতে হবে: মাহফুজ আলম
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংঘটিত গণহত্যার স্বীকৃতি ভারতকে দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সংলাপ শেষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এই মন্তব্য করেন।
গণমাধ্যমের এক প্রশ্নের জবাবে মাহফুজ আলম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে গণহত্যা হয়েছে তার স্বীকৃতি ভারতকে দিতে হবে। এখানে যত ধরনের নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটুকু করব। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের গণমাধ্যমের ভূমিকা, যখন তাদের বলার সুযোগ হয়েছে বলেছি। তাদের বিষয়গুলো দেখার অনুরোধ করেছি।
তিনি বলেন, অপপ্রচার দুই দেশের বন্ধুত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। আমরা আশা করি তাদের সুমতি হবে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমের দায়িত্ব হচ্ছে সত্যটা তুলে ধরা। সত্যটাকে জয়ী করতে হবে। আমাদের গণঅভ্যুত্থান আমাদের রক্ষা করতে হবে।
সামনে ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৃহত্তর পরিসরে সংলাপ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
তিনি বলেন, ধর্মীয় নেতাদের বক্তব্য প্রধান উপদেষ্টা শুনেছেন এবং এর মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশের পক্ষে ও বিপক্ষে থাকা শক্তিগুলোর জন্য একটি বার্তা দিতে চেয়েছে সরকার। বার্তাটি হলো—বাংলাদেশের মানুষ সম্প্রদায়গতভাবে ঐক্যবদ্ধ এবং একটি সাধারণ অবস্থানে পৌঁছেছে।
মাহফুজ আলম আরও বলেন, 'জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী সরকার যেকোনো ষড়যন্ত্র রুখতে প্রোঅ্যাক্টিভ ভূমিকা পালন করবে। হঠকারী কোনো পদক্ষেপ এই সরকার আশ্রয় বা প্রশ্রয় দেবে না। বরং জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির দিকে এগিয়ে যাবে।'
আন্তর্জাতিক ধর্মীয় সম্প্রীতি সম্মেলনের প্রস্তাবের বিষয়ের সরকারের ভাবনার বিষয়ে মাহফুজ আলম বলেন, এটা প্রস্তাবনা। এ বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদ খতিয়ে দেখবে। দেশ ও জনগণের ভালোর জন্য যেকোনও উদ্যোগ নিতে রাজি আছি। সেটা করে যাব।
তিনি আরও বলেন, ভারতীয় আগ্রাসনের চেয়েও বড় বিষয় হলো আমরা নিজেদের শক্তি কতটুকু বৃদ্ধি করতে পারলাম। আমাদের নিজেদের ভেতরে সংহতি আছে, কতটুকু প্রস্তুতি আছে। আগ্রাসনের কথা শুনতেই পারি। অনেক ধরনের আগ্রাসন অনেক দেশই করতে পারে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে শক্তি বৃদ্ধি করবো, শক্তিশালী হবো—এটাই দৃষ্টিভঙ্গি।
দেশবিরোধী অপপ্রচার রোধে সরকার আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাজ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের কৌশল নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাবে। বিশেষ করে প্রেস উইং এ নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছে। আমরা মনে করি, দেশের জনগণ ও গণমাধ্যম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিপ্লব করে যাচ্ছে। এটা পুরো দুনিয়ায় তুলে ধরতে পারবো।
ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সামাজিক ঐক্য নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মাহফুজ আলম বলেন, 'বাংলাদেশের মানুষ সম্প্রদায়গতভাবে ঐক্যবদ্ধ। সরকার যেকোনো ষড়যন্ত্র রুখতে প্রোঅ্যাক্টিভ ভূমিকা পালন করবে।'
হিন্দু সম্প্রদায়সহ অন্যদের বিরুদ্ধে নিপীড়নের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার যেখানে ব্যবস্থা নিয়েছে, গণমাধ্যম তা প্রচার করবে। সুনামগঞ্জের ঘটনায় সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে এবং এটি প্রচারের জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধ করছি।
সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে গণমাধ্যমকে সঠিক তথ্য তুলে ধরার আহ্বান জানান মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, আমরা প্রেসনোট দিচ্ছি না। বরং বাংলাদেশের যেখানে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে, সত্যতা তুলে ধরুন। আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ৯ ডিসেম্বর ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা। এর মধ্যে সাত বা আটটি দেশের দূতাবাস রয়েছে। তারা আমাদের বড় রপ্তানিকারক দেশ। দুইপক্ষের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কথা হবে।