সরকার ড্যামেজ কন্ট্রোল নিয়েই ব্যস্ত, নতুন পরিকল্পনা নেই: পরিবেশ উপদেষ্টা
সরকার ড্যামেজ কন্ট্রোল নিয়েই ব্যস্ত, নতুন পরিকল্পনা নেই বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেন, 'সরকার ড্যামেজ কন্ট্রোল নিয়েই ব্যস্ত। ড্যামেজ কন্ট্রোলের যে ভয়াবহতা তা বোঝা যাবে যখন আমরা পারমাণমিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দেনা পরিশোধ করতে শুরু করব। আউটপুটের কথা বিবেচনা করলে তখন বোঝা যাবে যে আমরা কেন নতুন করে পরিকল্পনা নিতে পারছিনা। তাই ড্যামেজ কন্ট্রোলের বিষয়টি শুধু সময়ের বিষয় না, বরং সরকারি কোষাগারের অর্থেরও ব্যাপার।'
শুক্রবার (১৩ ডিম্বের) বিয়াম ফাউন্ডেশন আয়োজিত তিনদিনব্যাপী 'বাংলাদেশ জ্বালানি সমৃদ্ধি ২০৫০'- সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এসব কথা বলেন।
সম্মেলনে শিক্ষাবিদ, গবেষক, পলিসি মেকার, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার ৩৬৮ জন প্রতিনিধি এক ঘোষণাপত্রে সরকারের নিকট ৩৪টি দাবি পেশ করেন।
এসময় সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, 'এগুলোর সহজ সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব না। আমরা সবাই জানি সমাধানটা কি। কিন্তু সমাধানের একটা আইনি প্রক্রিয়া আছে। সে প্রক্রিয়া অবলম্বন করে সেটা সমাধান করাও যাবে না।'
এসময় নাইকো চুক্তির অভিজ্ঞতা স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, 'এর আগে বাংলাদেশ সরকারের নাইকো চুক্তি নিয়ে নাস্তানুবাদ হওয়ার বিষয়ে সবাই অবগত। এসব বিবেচনা নিয়েই আমাদের ভবিষ্যতের রূপরেখা নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে।'
এসময় তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশের মতো দেশের জিরো নেট কার্বনের ঘোষণা দেওয়া না দেওয়ার মধ্যে কোনো তফাৎ নেই।'
সম্মেলনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে কর্মরত বিশেষজ্ঞরা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষেত্রে 'নো ইলেকট্রিসিটি নো পে' এমন নীতি বাস্তবায়নের দাবি তুলেছেন। এই নীতি কার্যকর হলে তা দেশের আর্থিক বোঝাও অনেক কমাবে বলে মনে করছেন তারা।
বুয়েটের অধ্যাপক ইজাজ হোসেন সম্মেলনে প্রশ্ন করেন, 'কেন এখন পর্যন্ত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কোনো নেট-জিরো টার্গেট ঠিক করতে পারেনি।'
তিনি অভিযোগ করে বলেন, 'পরিবেশ মন্ত্রণালয় এখনও বাংলাদেশের নেট-জিরো লক্ষ্য ঘোষণা করেনি। আর এই কারণেই দেশে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ছে না।'
এ প্রসঙ্গে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, 'এমনকি আমাদের ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশনে (এনডিসি) দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো অর্জন করাও খুবই চ্যালেঞ্জিং।'
তিনি বলেন, 'অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সমর্থন পেলে অর্জন করা সম্ভব এমন নেট-জিরো লক্ষ্যমাত্রা বাংলাদেশও ঠিক করতে পারবে।'
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'সমন্বিত বিদ্যুৎ-জ্বালানি মহাপরিকল্পনা (আইইপিএমপি) অবশ্যই বাতিল হওয়া উচিত। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো এবং বিদ্যুৎ মিশ্রণে নবানয়নযোগ্য শক্তির পরিমাণ বাড়ানো এমন মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে নতুন একটি বিদ্যুৎ-জ্বালানি মহাপরিকল্পনা বানানো ও কার্যকর করা উচিত।'
তিনি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা, যা ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছিল না, তা নিশ্চিত করার ওপরও জোর দেন।
বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি জাহিদুল আলম বলেন, 'নবায়নযোগ্য জ্বালানির সংশ্লিষ্ট মালামালের আমদানি শুল্ক কমানো না গেলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ কখনই ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ-এর লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারবে না।'
সম্মেলনের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন বিডব্লিউজিইডি-র সদস্য সচিব হাসান মেহেদী।