ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিদের ডলার খরচে শীর্ষে থাকা ভারত এখন তৃতীয়
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ভিসা জটিলতার কারণে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সব ধরনের লেনদেন কমেছে। বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড লেনদেনে চার মাসের ব্যবধানে শীর্ষে থাকা ভারত তৃতীয় স্থানে নেমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্টে এ তথ্য জানা গেছে।
রিপোর্টে দেখা যায়, চলতি বছরের অক্টোবর মাসে বিদেশে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশিরা খরচ করেছে ৪৯৯ কোটি টাকা। আগের মাস সেপ্টেম্বরে খরচের পরিমাণ ছিল ৪২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের মাসের তুলনায় অক্টোবরে খরচ ৭৯ কোটি বা ১৮.৮০% বেড়েছে।
বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে খরচ আগের মাসের তুলনায় অক্টোবরে বাড়লেও, ভারতে ব্যাপক কমেছে।
অক্টোবরে বাংলাদেশিরা খরচ করেছে ৫৩ কোটি টাকা বা মোট লেনদেনের ১০.৭৮%। এই মাসে ভারতে বাংলাদেশিদের অবস্থান তৃতীয়।
চলতি বছরের জুনে ভারতে বাংলাদেশিরা খরচ করেছিল ৯২ কোটি টাকা বা মোট খরচের ১৭.৫৬%, সেই মাসে ভারতের অবস্থান ছিল প্রথম।
অক্টোবর শেষে দেখা যায়, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিদেশে খরচের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, তারপর দ্বিতীয় অবস্থানে থাইল্যান্ড, তৃতীয় অবস্থানে চলে গেছে ভারত।
সেপ্টেম্বরে থাইল্যান্ডে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে খরচ করেছিলেন ৪২ কোটি টাকা। অক্টোবরে এই খরচ একলাফে বেড়ে দাঁড়ায় ৫৭ কোটি টাকায়। এভাবেই বিদেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে দেশটি।
ব্যাংকাররা জানান, আগস্ট মাসে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর বাংলাদেশিদের জন্য ভ্রমণসহ অন্যান্য ভিসা প্রদান সীমিত করে দিয়েছে ভারত। তারপর থেকে ভ্রমণ ও চিকিৎসাসহ নানা প্রয়োজনে বাংলাদেশিদের অন্যতম গন্তব্য হয়ে ওঠে থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর। এ কারণে দেশ দুটিতে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বেশি বেড়েছে।
তারা আরও জানান, বাংলাদেশের নতুন সরকারের শুরুর কয়েক মাস ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ভিসা পুরোপুরি বন্ধ থাকলেও, এখন শর্ত সাপেক্ষে স্বল্প পরিমাণে ভিসা দেওয়া হচ্ছে।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)- এর মতে, সাংস্কৃতিক বন্ধন, নৈকট্য এবং সহজ ভিসা প্রবেশাধিকারের কারণে ভারত দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশি পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য ছিল।
কিন্তু ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারত ভিসা প্রদান স্থগিত করলে পরিস্থিতি বদলে যায়।
বিমান সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ভারত সীমিত আকারে ভিসা দেওয়া শুরু করলেও ভিসা মঞ্জুরের সংখ্যা এখনও অনেক কম, যার ফলে ভারতীয় রুটে যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে।
ফলে যাত্রী সংখ্যা কমে যাওয়ায় বাংলাদেশি বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্স ভারতে ফ্লাইট কমিয়ে দিয়েছে বা সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে।
ভারতীয় ভিসা স্থগিতের ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের বিমান পরিবহন ও ভ্রমণ শিল্পে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়েছে।
তবে অপ্রত্যাশিতভাবে মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের মতো দক্ষিণ এশীয় এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে।
বাংলাদেশ আউটবাউন্ড ট্যুর অপারেটরস ফোরাম-এর তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় ভিসা স্থগিতের মধ্যে পিক সিজন শুরু হওয়ায়, এসব দেশে বাংলাদেশিদের অবকাশ যাপনের হার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেড়েছে।
চাহিদা ও দাম কমেছে ভারতীয় রুপির
ভারতীয় রুপির কোনো ক্রেতা খুঁজে পাচ্ছে না ঢাকার মানি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো। এক মাসের ব্যবধানে টাকার বিপরীতে ৪-৫ পয়সা কমেছে রুপির মান।
রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, বায়তুল মোকাররম এলাকায় মানি একচেঞ্জ হাউসগুলোতে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
ভারতীয় রুপি বিক্রির জন্য এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো মঙ্গলবার ১ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ১ টাকা ৪৪ পয়সা পর্যন্ত দাম চেয়েছে। এক মাস আগেও প্রতি রুপি ১ টাকা ৪৮ পয়সা থেকে ১ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি হতো।
খোলাবাজারে ফরেন কারেন্সি বিক্রেতা নাদির বলেন, 'ভারতীয় রুপির বিক্রি একদমই নেই। দুই দেশের রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে বিক্রি কমে গেছে। দেশি টাকায় রুপি প্রতি দাম কমেছে ৪-৫ পয়সা।'
তিনি বলেন, 'আগে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকার ভারতীয় রুপি বিক্রি হতো। এখন এক রুপিও বিক্রি হচ্ছে না। এছাড়া রুপির দামও কমে যাচ্ছে।'
রিপন নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, 'ভারত সরকার বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধের পর রুপির বিক্রি অনেকটা কমে গেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আগে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৬ লাখ টাকা রুপি বিক্রি হতো। অথচ গত এক সপ্তাহে ৫০ হাজার টাকারও বিক্রি হয়নি।'
বিদেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার বাড়ছে
এদিকে দেশে–বিদেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশিদেরও ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বেড়েছে।
গত অক্টোবরে বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে ১২৯ কোটি টাকা খরচ করেছেন। সেপ্টেম্বরে যার পরিমাণ ছিল ১১১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে বিদেশিদের খরচ বেড়েছে ১৮ কোটি টাকা বা ১৬.১৫ শতাংশ।
বাংলাদেশে বিদেশিরা ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি করেন নগদ অর্থ উত্তোলনে। অক্টোবরে ১২৯ কোটি টাকা খরচের মধ্যে ৪৭ কোটি টাকাই বিদেশিরা নগদে উত্তোলন করেছেন।