সেক্টরাল অ্যাপরোচে ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানোর আহ্বান বাণিজ্য উপদেষ্টার
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন ব্যবসায়ীদের সেক্টরাল অ্যাপরোচে [খাতভিত্তিক পদক্ষেপে] ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, "আপনারা যে বিজনেসের প্রতিনিধিত্ব করেন, একটি রেজুলেশন নেন, সকলে একত্রিত হয়ে ৫০ শতাংশ ভ্যাট ও ট্যাক্স বাড়িয়ে দেন। এই দেশটি ভালো হয়ে যাবে। আপনারা চাইলে পারবেন।"
তিনি আরও বলেন, "আমি এনবিআর চেয়ারম্যান সাহেবকে অনুরোধ করেছি যে সেক্টরাল অ্যাপ্রোচ নেন।"
আজ বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর একটি হোটেলে ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অফ বাংলাদেশ চট্টগ্রাম শাখা আয়োজিত 'নেভিগেটিং বাংলাদেশ'স ইভলভিং ইকোনমিক ল্যান্ডস্কেপ' [বাংলাদেশের পরিবর্তনশীল অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিচালনা] শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেন, "সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগে (এফডিআই) চ্যালেঞ্জ আছে। আমাদের কিছু পেতে হলে, কিছু দিতে হবে। দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত নই, কারণ আমাদের শিল্পে উচ্চ শুল্কমূল্য রয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "ভ্যাট ফাঁকি দিলে, ট্যাক্স দেওয়া যায় না। কারণ একমাত্র সেলস কম দেখানোর মাধ্যমে ভ্যাট ফাঁকি দিতে হয়। আমাদের যেমন জনগণ ও সরকারের মধ্যে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক দরকার, তেমনি অর্থনীতিতে ভ্যাট ও ট্যাক্সের মধ্যে সম্পর্ক দরকার। আপনারা যদি বলেন ৫০ শতাংশ ভ্যাট বাড়িয়ে দেবেন, তা সম্ভব।"
উপদেষ্টা আরও বলেন, "ঘটনা হচ্ছে— সবাই ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছেন। সেটা ডিসকাউন্টে কনভার্ট করছে। এটি সকলের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এটি পরিবর্তন আসার দরকার। সময় এসেছে। একসঙ্গে কাজ করতে হবে। রাষ্ট্র আপনাদের (ব্যবসায়ী) ইনসেনটিভ, বেনিফিট দিচ্ছে, শিল্পের অগ্রগতির জন্য সাবসিডারি দিচ্ছে।"
এতোদিন অনুপযুক্ত বিনিয়োগ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "সব টপ লাইন ভিত্তিক বিনিয়োগ হয়েছে। স্টিলের দাম এক লাখ টাকার কম। এখানে বিনিয়োগ করলে ১০ কোটি টাকা মুনাফা হবে। এভাবে বিনিয়োগ হয়েছে। বৈচিত্র্করণ অনুসরণ করে বিনিয়োগ হয়নি।"
অর্থ পাচারের সংশ্লিষ্টদের দায়ের কথা উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, "শ্বেতপত্র অনুযায়ী ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এজন্য কী কোম্পানির সিএ (প্রধান হিসাবরক্ষক), সিএফও (প্রধান ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার) দায়ী নয়। এখন সময় এসেছে, এখন যদি নৈতিকভাবে উচ্চস্থানে নিয়ে যেতে না পারি, তাহলে বৃথা।"
সেমিনারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম উদ্দিন, বলেন, "কস্ট ম্যানেজমেন্ট খাতে যেসব দেশ স্বচ্ছ, সেসব দেশ তত উন্নত। একটি প্রতিষ্ঠান ২ হাজার কোটি টাকার সম্পদ দিয়ে কীভাবে ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ পায়? ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কস্ট ম্যানেজমেন্ট সংশ্লিষ্টরা নিজেদের স্থানে দায়িত্ব পালন করেছেন?"
তিনি বলেন, "আমরা যদি বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, পোর্ট ফ্যাসিলিটি, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার নিরবিচ্ছিন্ন সুবিধা দিতে না পারি, তাহলে স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করবেন না। তারা না করলে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও আসবেন না। আমাদের অগ্রাধিকার দিয়ে সংস্কার করতে হবে।"
মো. সেলিম আরও বলেন, "আমাদের বিশাল অংশ তরুণ গোষ্ঠীকে যদি কর্মসংস্থান দিতে না পারি, তাহলে সামনে ডিজেস্টার নেমে আসবে। এফডিআই এর জন্য আমরা সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, আশিয়ান দেশগুলো, কোরিয়াতে গিয়েছিল। জাপানের সঙ্গে সভা করার সময় তারা বিদেশ থেকে ৪০ জন বিশেষজ্ঞকে উড়িয়ে এনেছেন। অনলাইনে যুক্ত ছিলেন আবার ১২০ জন। তারা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছেন। আপনারা যারা কস্ট ম্যানেজমেন্ট, তারা আমাদের ইনপুট দিতে পারেন।"
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান সেমিনারে বলেন, "১৯৭২ সালে ট্যাক্সের ৯০ শতাংশ আসতো ইন্ডিরেক্ট ট্যাক্স থেকে আর বাকি ১০ শতাংশ আসতো ডিরেক্ট ট্যাক্স থেকে। এত বছরেও কিন্তু পরিবর্তন হয়নি। এখনো দুই তৃতীয়াংশ আসে ইন্ডিরেক্ট ট্যাক্স থেকে। অর্থাৎ গরীবের ট্যাক্স আদায় করা হয় অথচ তারা জানেও না। আর ডিরেক্ট ট্যাক্স প্রদানকারীরা নীতি নির্ধারকদের কাছাকাছি থেকে, তা আরো কমাতে পারেন। এটি আমাদের পিছিয়ে পড়ার কারণ।"