৫ তারিখের গণঅভ্যুত্থান না হলে আমি ওসি হতে পারতাম না: বিএনপির কর্মীসভায় ওসি
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় বিএনপির কর্মীসভায় থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মঈনুল ইসলামের মন্তব্য নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনার ঝড়।
গত বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার জানিপুর সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে বিএনপির কর্মীসভার মঞ্চে ওসির বক্তব্যের একটি ভিডিও শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এরপর থেকেই একটি রাজনৈতিক মঞ্চে ওসির এমন বক্তব্যকে 'অপেশাদার' বলে মন্তব্য করেছেন সাধারণ মানুষ।
২ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে ওসি শেখ মঈনুল ইসলাম বলেন, "১৫-১৬ বছর কীভাবে, কোথায় ছিলেন, আপনারা আমার চেয়ে ভালো জানেন। কোথায়, কীভাবে কষ্ট করেছেন। আপনারা ঠিকমতো বাড়িতে থাকতে পারেননি। আমি পুলিশ, হয়ত আরেকজন ছিল। আমাকে বাধ্য করেছে। হয়ত আমাকে দেখে আপনারা বলছেন, এ বড় বড় কথা বলে, আসলে না। আমিও ওইরকম নির্যাতিত ছিলাম।"
তিনি বলেন, "অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার পরে আপনারা এ পর্যন্ত আসতে পেরেছেন। ১৫-১৬ বছর পরে আপনারা এক জায়গায় হতে পারছেন,সবার সাথে কথা বলতে পারছেন। আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ করবো যে সুযোগটা আসছে, সেই সুযোগটা সদ্ব্যবহার করেন। এমন কোন কাজ করবেন না, যার আপনাদের মধ্যে থেকে তৃতীয় পক্ষ কোনো সুযোগ নিতে পারে।"
ওসি আরও বলেন, "এ প্রোগ্রামটা আপনাদেরই। আমি পুলিশ কেন আসবো? তারপরও আমি আসলাম। আমার থানার সামনে, আসতে হবে। মনও চাই আসতে। মনও টান দেয় যে এখানে একটু কথা বলি। আসলে সব সময় তো সব কথা বলা যায় না। আমি আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি কেউ কোন ঝামেলা করবেন না। আমরা আপনাদের সেবায় এখানে আছি। যতটুকু পারি আমাদের পক্ষ থেকে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবো। সব হিংসা বিদ্বেষ ভুলে যান। আপনাদের মধ্যে যদি হিংসা থাকে তাহলে তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নেবে। এই সুযোগ আর দেয়া যাবেনা।"
পরবর্তীতে ওসি শেখ মঈনুল ইসলাম তার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, "বিএনপির দুই পক্ষকে থামাতে ওই মঞ্চে এমন বক্তব্য দিয়েছি। এছাড়া আমার অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।"
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন এমন কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার সকাল ১০টায় খোকসা উপজেলা ও পৌর বিএনপির আয়োজনে বিশেষ কর্মী সভা ছিল। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ আমজাদ আলীর সভাপতিত্বে কর্মীসভার উদ্বোধন করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ। প্রধান বক্তা ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ সাদী, নুরুল ইসলাম আনসার প্রামাণিক ও সদস্য আলাউদ্দিন খান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন খোকসা পৌর বিএনপির সভাপতি মুন্সি এ জেড জি রশিদ।
সকাল থেকেই সভাস্থলে স্থানীয় দুই গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রথমে বিএনপি নেতা আলাউদ্দিন খান মঞ্চে উঠে নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান। তবে বেলা ১১টার দিকে উত্তেজনা বাড়তে থাকলে খোকসা থানার ওসি মঞ্চে উঠে মাইকে বক্তব্য দেন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করা শর্তে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, "বিষয়টি নজরে এসেছে। কি বক্তব্য দিয়েছে, সেটা তার (ওসি) ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।"