সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে এখনও আগের বিতর্কিত বিধান রয়ে গেছে: টিআইবি
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) মনে করছে, সদ্য প্রণীত সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে (খসড়া) আগের বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইনের কিছু নির্বর্তনমূলক বিধান এখনও বলবৎ রয়েছে। এর ফলে, অধ্যাদেশটির অপ-প্রয়োগের সম্ভাবনা এখনও রয়ে গেছে।
গত ২৪ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর খসড়া অনুমোদন হয়। সরকার বলছে, এ অধ্যাদেশ দ্বারা সাইবার স্পেস এবং একই সঙ্গে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সুরক্ষিত হবে।
কিন্তু টিআইবির মতে, বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের সাথে আলোচনা না করেই অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত করায় এর উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একারণে, বিশেষজ্ঞদের সাথে দ্রুত আলোচনা করে অধ্যাদেশটি সংশোধন করা প্রয়োজন।
আজ মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) 'সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪: টিআইবির পর্যালোচনা' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
পর্যালোচনাটি ভার্চুয়ালি উপস্থাপন করেন মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মালয়ার আইন ও উদীয়মান প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ এরশাদুল করিম। তিনি বলেন, অধ্যাদেশে জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সির মহাপরিচালককে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, যার ফলে বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি মনে হলে তথ্য অপসারণ বা ব্লক করার অনুরোধ করা যাবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, এই ধরনের ক্ষমতার অপব্যবহার হতে পারে, যা অধ্যাদেশটির উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করবে।
অধ্যাদেশের ধারা ২৫–এ সাইবার বুলিংয়ের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো ব্যক্তিকে ভয়ভীতি প্রদর্শন, হুমকি প্রদান বা অপমানজনক বার্তা ছড়ানোর মাধ্যমে তার মানসিক স্বাস্থ্য বা সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত করলে সেটিকে সাইবার বুলিং হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
এ ধারা আইনটির অপব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন ড. মুহাম্মদ এরশাদুল করিম। তিনি বলেন, 'যেকোনো বিষয়কে অপমান হিসেবে মনে করে বসে, এই চিন্তায় মানুষ কথা বলতে চাইবে না এবং সমালোচনার জায়গা সংকুচিত হবে। সাংবাদিকদেরও এই ধারা মাথায় নিয়ে সংবাদ করতে হবে। কারও মানহানি হয়েছে, অপমানবোধ করেছে বা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অভিযোগে মামলার পর পুলিশ বিনা পরোয়ানায় গিয়ে গ্রেপ্তার করবে। এ ধারার মাধ্যমে আইনটির অপব্যবহারের অস্ত্র তুলে দেওয়া হলো।'
তিনি আরও বলেন, ধারাটিতে শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই এমন তথ্য-উপাত্ত প্রচার বা প্রকাশের প্রসঙ্গ আছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে ধরনের মিথ (গুজব) ঘুরে বেড়ায়, সেটির তো শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই। সেটি প্রচারের দায়েও তো মামলা হওয়ার সুযোগ তৈরি হলো। অর্থাৎ মামলার ক্ষেত্রে এটার অনেক ব্যাখ্যা দাঁড়িয়ে যাবে।
এরশাদুল করিম আরও বলেন, সাইবার অপরাধ, সাইবার নিরাপত্তা ও স্পিচ অফেন্সকে (কথা বলার জন্য অপরাধ) গুলিয়ে ফেলা হয়েছে। এত কিছু এক আইনে হয় না।