খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপজেলা কমিটি থেকে সংসদ সদস্য, চেয়ারম্যানদের বাদ দিয়ে নতুন নীতিমালা
- সুবিধাভোগীদের যাচাই-বাছাই করে নতুন করে তালিকা প্রকাশ করা হবে
- নতুন তালিকা প্রকাশ করা হবে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে
- ডিলার নিয়োগও হবে নতুন করে
- সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে না
- বাড়তে পারে সুবিধাভোগী
- বর্তমানে সারা দেশে সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৫০ লাখ
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির নতুন নীতিমালা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই নীতিমালায় উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটি থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকার সর্বশেষ ২০১৭ সালে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি নীতিমালা করেছিল। সেখানে সংসদ সদস্য উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির প্রধান উপদেষ্টা এবং উপজেলা চেয়ারম্যান উপদেষ্টা ছিলেন।
বিদায়ী বছরের ১৪ অক্টোবর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে নতুন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি নীতিমালা-২০২৪ প্রকাশ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার আজ বুধবার (১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় টিবিএসকে বলেন, 'বর্তমান প্রেক্ষাপটে সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের বাদ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে যেহেতু সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান নেই, তাদেরকে কমিটিতে রাখা হলে কমিটি পূর্ণ হয় না। এজন্য তাদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে নীতিমালায়। পরবর্তীতে নতুন সরকার আসলে— তারা যদি মনে করে এই কমিটিতে সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের রাখা দরকার, তাহলে নির্বাহী আদেশে তাদের অন্তর্ভূক্ত করতে পারবে।'
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন নীতিমালা অনুযায়ী দেশের সকল ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় কমিটি গঠন করা হয়েছে। নতুন করে উপকারভোগী যাচাই-বাছাই ও ডিলার নিয়োগ করার কাজ শুরু হয়েছে। গ্রামে বসবাসরত নিম্ন আয়ের মানুষ, ভূমিহীন, দিনমজুর, কৃষি শ্রমিক ও উপার্জনে অক্ষম ব্যক্তিরা— এই নীতিমালার আওতায় সুবিধাভোগী হবেন। বিধবা, তালাকপ্রাপ্তা, ম্বামী পরিত্যক্তা, অস্বচ্ছল বয়স্ক নারী এবং যেসব দুঃস্থ পরিবারে শিশু ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছে তারা অগ্রাধিকার পাবেন। জানুয়ারির ১৫ তারিখের মধ্যে উপকারভোগীদের নতুন তালিকা প্রণয়নের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
খাদ্য অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় সারা দেশে ৪৯ লাখ ৫৩ হাজার ৪৭১ জনকে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ২০২১ সালে এই কর্মসূচিতে ৪৬ হাজার ৬১৫ জনকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। এই কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীদের বছরে ৫ মাস দুই ধাপে (মার্চ-এপ্রিল ও সেপ্টেম্বর-নভেম্বর) পরিবারপ্রতি ৩০ কেজি করে চাল সরকার নির্ধারিত দামে দেওয়া হয়। বর্তমানে এই কর্মসূচিতে প্রতিকেজি চালের দাম ১৫ টাকা।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'অভিযোগ আছে রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়ে অনেকে নীতিমালা অনুযায়ী, এই কর্মসূচির সুবিধাভোগী হওয়ার উপযুক্ত না হলেও— রাজনৈতিক বিবেচনায় কর্মসূচির সুবিধাভোগী হয়েছেন। যারা উপযুক্ত নয়-- কিন্তু এই কর্মসূচির সুবিধা পাচ্ছেন, বর্তমান সরকার তাদের বাদ দিয়ে নতুন করে নীতিমালা অনুযায়ী উপযুক্তদের অন্তর্ভুক্ত করবে।'
'মন্ত্রণালয় মনে করছে উপযুক্ত নয়, এমন ব্যক্তিদের বাদ দেওয়ার পরে প্রকৃত সুবিধাভোগী এই ৫০ লাখের মধ্যেই থাকবে। আগের নিয়মেই কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের তালিকা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে প্রকাশ করা হবে' – তিনি যোগ করেন।
খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান আজ সন্ধ্যায় টিবিএসকে জানিয়েছেন, 'সারাদেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তথ্য পাওয়ার পর যদি দেখা যায়, এই কর্মসূচির উপকারভোগী বাড়ানোর দরকার আছে, তাহলে বাড়ানো হবে। তবে সুবিধা যেটা দেওয়া হচ্ছে সেটাই থাকবে। এই মুহুর্তে সুবিধা বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেই।'
২০০৬ সালে জাতীয় খাদ্য নীতি প্রণয়ন করা হয়। এরপর ২০১৬ সালে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের (এসডিজি)) লক্ষ্যমাত্রায় 'নো প্রভার্টি ও জিরো হাঙ্গার' অর্জনের প্রত্যয় ঘোষণা করা হয়। এসব লক্ষ্য ও প্রত্যয় অর্জনের লক্ষ্যে এবং গ্রামীণ এলাকার দরিদ্র জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে সরকারি বিতরণ ব্যবস্থায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি নেওয়া হয়।
প্রথমে ২০১৬ সালে ইউনিয়ন পর্যায়ে হতদরিদ্রদের জন্য সরকার নির্ধারিত মূল্যে কার্ডের মাধ্যমে খাদ্যশস্য বিতরণ নীতিমালা করে। পরে এই নীতিমালা আরও সময়োপোযোগী করার জন্য ২০১৭ সালে প্রথম 'খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি নীতিমালা-২০১৭' করা হয়।
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে সরকার ভর্তুকি মূল্যে দরিদ্র জনগণকে চাল দিয়ে থাকে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির জন্য ৩ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা ভর্তুকি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় অর্থবছর শেষে এই ভর্তুকির পরিমাণ বাড়বে বলে জানিয়েছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব।
নতুন নীতিমালায় ডিলার নিয়োগে জামানত ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। পাশাপাশি ডিলারদের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ বছর।