লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন খালেদা জিয়া
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেছেন। আজ মঙ্গলবার রাত ১১টা ৪৬ মিনিটে কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তিনি লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করেন।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, খালেদা জিয়া কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে দোহা হয়ে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করেছেন।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে বিদায় জানান।
এর আগে রাত সোয়া ৮টায় গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে একটি গাড়িতে খালেদা জিয়া বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেন। রাত ১০টা ৫৫ মিনিটে বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেট (হ্যাঙ্গার গেট) দিয়ে প্রবেশ করেন তিনি। গাড়িতে তার পাশে ছিলেন ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান (সিঁথি)।
খালেদা জিয়া বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হওয়ার পর সেখানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, 'ম্যাডাম বাসা থেকে রওনা হয়েছেন। তিনি আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীসহ সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।'
এদিকে খালেদা জিয়াকে বিদায় জানাতে তার বাসভবন থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত রাস্তায় বিএনপির নেতা–কর্মীদের ঢল নেমেছে। হাজারো নেতা–কর্মী রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে তাকে বিদায় জানাতে থাকেন।
দীর্ঘদিন ধরে নানা অসুস্থতায় ভুগছেন খালেদা জিয়া। কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে চিকিৎসার জন্য সেখানে যাচ্ছেন।
শায়রুল কবির খান জানান, রাত ১০টায় কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে খালেদা জিয়া ঢাকা ছেড়ে যাবেন। তার সঙ্গে যাচ্ছেন মেডিকেল টিমের ছয় চিকিৎসক।
এদিকে খালেদা জিয়াকে বিদায় জানানোর সময়ে যেন জনদুর্ভোগ তৈরি না হয়, সেজন্য দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি বিশেষ নির্দেশনা জারি করেছে বিএনপি। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে তাতেও দুর্ভোগ পুরোপুরি এড়ানো যায়নি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) বিএনপি এবং সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীকে সুশৃঙ্খলভাবে রাস্তার ফুটপাতে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়াকে বিদায় জানানোর জন্য অনুরোধ করা হলো, যাতে রাস্তায় যানবাহন ও পথচারী চলাচলে কোনো বিঘ্ন না ঘটে।
তবে নেতা-কর্মীদের অনেকেই রাস্তায় নেমে আসেন।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর জন্য বিমানবন্দরে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থার সমম্বয়ে বৈঠক করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
কর্মকর্তারা জানান, বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীর জমায়েতে যাতে নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়, সে জন্য বিশেষ এই সতর্কাবস্থা।
বিমানবন্দর থানার ওসি তাসলিমা আক্তার একটি গণমাধ্যমকে জানান, ১০ প্লাটুন পুলিশ থাকবে। এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বেবিচকের এ্যাফসেক বাহিনীসহ সোয়াটের মতো স্পেশাল টিমও থাকছে।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া জানান, বিমানবন্দরে নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা যাতে না হয়, সে লক্ষ্যে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরে প্রবেশে কড়াকড়ি থাকবে।
সাড়ে সাত বছর পর লন্ডনে ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ হবে। তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বাসায় নয়, খালেদা জিয়াকে সরাসরি নেওয়া হবে লন্ডনের হাসপাতালে। তাকে নিতে কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্স গতকাল সোমবার ঢাকায় এসেছে।
যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর পর সরাসরি তাকে লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হবে। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসার পর যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হসপিটালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নেওয়ার কথা রয়েছে।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। ২০১৮ সালে একটি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর তার অসুস্থতা বাড়ে। এর মধ্যে কয়েকবার তিনি জীবন–মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও পড়েন। একাধিকবার তার মৃত্যুর গুজবও ছড়ায়।