বেক্সিমকোর ১৬ কোম্পানি থেকে ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের কাজের ব্যবস্থা করবে সরকার
গাজীপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে বেক্সিমকো গ্রুপের ১৬টি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির কথা ভাবছে সরকার। এই কোম্পানিগুলো বিক্রির পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের। সম্প্রতি উপদেষ্টা কমিটির এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অথরিটি (বেপজা) এবং বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা)-এর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এসব শ্রমিকদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে সরকার।
এর আগে, গেল বছরের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বেক্সিমকোর বিদেশি অর্ডার ব্যাপকভাবে কমে যায়। একইসঙ্গে, দেশের ব্যাংকিংখাত থেকেও গ্রুপটির জন্য আর্থিক সহায়তা কমতে থাকে। এসব কারণে বন্ধ হয়ে যায় বেক্সিমকোর ১৬টি কারখানা। আর এসব কারখানায় কর্মরত প্রায় ৪০,০০০ শ্রমিককে তখন ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেওয়া হয়।
উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এক্ষেত্রে ব্যাংকে মর্টগেজ রেখে ঋণ নিয়ে খেলাপি হওয়া কোম্পানিগুলো অর্থঋণ আদালতের মাধ্যমে নিলামে বিক্রি করবে ব্যাংকগুলো। আর যেসব কোম্পানির ব্যাংকে কোনো মর্টগেজ নেই, কোম্পানির দায়-দেনা পরিশোধে সাধারণ প্রক্রিয়ায় সেসব কোম্পানি বা সম্পদ বিক্রি করা হতে পারে।
গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। সভার কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অর্থ উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, শিল্প উপদেষ্টা, বাণিজ্য উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক), প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান, অ্যাটর্নি জেনারেল এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়েরে সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের লে-অফ করা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বিক্রয়, লিজ প্রদান, হস্তান্তর এবং শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থান কীভাবে এবং কোন পদ্ধতিতে করা যেতে পারে, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
অ্যার্টনি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সভায় বলেন, ''কোম্পানিগুলোর প্রকৃত শ্রমিকের সংখ্যা, কোম্পানিগুলোর সম্পদ ও দায়-দেনা, মর্টগেজ সংক্রান্ত সম্পদ বিবরণী, ব্যাংক ঋণ ইত্যাদি জানা প্রয়োজন। যে সমস্ত কোম্পানির সম্পদ ব্যাংকে মর্টগেজ করা আছে, সেগুলো সংশ্লিষ্ট ব্যাংক অর্থঋণ আদালত ১২ (১) ধারা অনুসারে সরাসরি বিক্রয় করতে পারে এবং অন্যান্য কোম্পানি সাধারণ প্রক্রিয়ায় তাদের সম্পদ/কোম্পানি বিক্রির পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।''
বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বিক্রয়/লিজ প্রদান/হস্তান্তরের লক্ষ্যে কোম্পানিগুলোর সম্পদ বিবরণী, দায়-দেনা, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে মর্টগেজকৃত সম্পদের বিবরণী, চলমান ব্যবসা ও আয় সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়েছে উপদেষ্টা কমিটি।
এছাড়া, কোম্পানিগুলোর 'আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন' অনুযায়ী কোম্পানিগুলোর সম্পদ কীভাবে হস্তান্তর করা যায়, সে বিষয়ে মতামত চেয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কোম্পানিগুলোতে নিয়োজিত শ্রমিকদের প্রকৃত তালিকা দিতে বেক্সিমকো গ্রুপের মানবসম্পদ ও হিসাব বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ১৫ ডিসেম্বর, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকদের এক মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করে জনতা ব্যাংক।
এর আগে, গত ১৫ ডিসেম্বর বেক্সিমকো গ্রুপ সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, আরও দুই মাসের বেতনের টাকা ব্যাংকের বোর্ড অনুমোদন করেছে।
যদিও ওই সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, "সরকার বেক্সিমকোর শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের তিন মাসের টাকার অতিরিক্ত আর কোনো আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে পারবে না। বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারলে তা বন্ধ করবে কি-না, সে বিষয়ে বেক্সিমকোকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। অন্যত্থায় উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় বেক্সিমকোকেই নিতে হবে।"
কারখানা বন্ধ করা হলে শ্রম আইন অনুসারে শ্রমিকদের পাওনা হিসাব করে মালিকপক্ষ ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের আলোচনার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
সভায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী জানান, "বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কোম্পানিগুলোতে অর্ডার না থাকায় এবং কোম্পানি ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে আর পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। এমতাবস্থায়, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষের কোম্পানিগুলো লে-অফ বা বন্ধ করা প্রয়োজন।"
এই মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৬ ডিসেম্বর বেক্সিমকো টেক্সটাইল লিমিটেডসহ টেক্সটাইল ও গার্মেন্টসের ১৬টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এর আগে, উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বেক্সিমকো গ্রুপের তালিকাভুক্ত তিনটি কোম্পানি— বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মা ও শাইনপুকুর সিরামিক-এর বোর্ডে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয়।