জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী গঠনে নিরপেক্ষ, প্রভাবমুক্ত পুলিশ কমিশন গঠনের সুপারিশ
নিরপেক্ষ প্রভাবমুক্ত পুলিশ কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী গঠনে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়েছে এতে।
জনবান্ধব পুলিশ গঠনে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পদক্ষেপ হিসেবে, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের যোগ্যতা অনুযায়ী পুলিশের চাকরি দেওয়ার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।
সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব সফর রাজ হোসেন এর নেতৃত্বাধীন পুলিশ সংস্কার কমিশন আজ বুধবার (১৫ জানুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের সংস্কারের সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অভ্যুত্থানে আহতদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বুদ্ধিভিত্তিক সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগের পাশাপাশি পুলিশ বিভাগেও তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির সুপারিশ করা হলো। এতে একদিকে পুলিশের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক উন্নত হবে, অন্যদিকে আহত ব্যক্তিদের সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে।
সুপারিশে বলা হয়, প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশন— আইনের আওতায় অন্তর্ভুক্ত একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হবে, নাকি সংবিধানিক কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান হবে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে তা ঠিক করতে হবে।
কনস্টেবল ও উপ-পরিদর্শক (এএসআই) থেকে পদোন্নতির জন্য প্রতিবছর পরীক্ষার রীতি বাতিল করে— একবার উত্তীর্ণ হওয়া সদস্যকে শারীরিক যোগ্যতাসাপেক্ষে পরবর্তী তিন বছরের জন্য পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচনা; সহকারী পুলিশ সুপার নিয়োগের ক্ষেত্রে আলাদাভাবে (শারীরিক যোগ্যতা, মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ) অন্তর্ভুক্ত করে আবেদনের যোগ্যতা নিরূপণ; বিশেষায়িত পুলিশ (সিআইডি, সাইবার অপরাধ, বায়োমেট্রিক আইডেনটিফিকেশন ফিঙ্গারপ্রিন্ট ইত্যাদি) স্ব-স্ব বিভাগের ভেতরে বা সংশ্লিষ্ট পদে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পদায়ন করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এছাড়া পুলিশে নারী সদস্যদের সংখ্যা বৃদ্ধির সুপারিশ করে বলা হয়েছে, বর্তমানে ৮ শতাংশ নারী সদস্য রয়েছে। এটি বাড়িয়ে কমপক্ষে ২৯,২৪৮ বা ১৩ দশমিক ৯২ শতাংশ করা যেতে পারে।
আরেক সুপারিশে বলা হয়েছে, সংবিধান, আইন এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে কোনো পুলিশ সদস্য মানবাধিকার লঙ্ঘন করলে— তাৎক্ষণিক প্রতিকার পেতে নতুন হেল্প লাইন চালু করা, কিংবা ট্রিপল নাইন (৯৯৯) এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ (অপরাধ অন্তর্ভুক্ত) করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগী ও সাক্ষী সুরক্ষার জন্য একটি সুরক্ষা আইন প্রণয়নের-ও সুপারিশ করে কমিশন।
প্রতিবেদনে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলে— তা তদন্তের সব ক্ষমতা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এছাড়া উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক প্রণীত ৫ ধাপ, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের সদস্যদের জন্য প্রণীত নীতিমালা অনুসরণ করে উল্লেখ করে এগুলোকে আইনগত বৈধতা দেওয়ার সুপারিশ করে কমিশন। এতে ন্যূনতম ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির ঝুঁকি এড়িয়ে চলা যাবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে
জাতীয় পরিচয়পত্রধারী চাকরি প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা যাচাইবাছাই, স্থায়ী ঠিকানায় পুলিশ ভেরিফিকেশন পদ্ধতি না রাখার সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। এছাড়া চাকরি ক্ষেত্রে ব্যক্তির রাজনৈতিক মতাদর্শ যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা বাদ দিয়ে– সংশ্লিষ্ট নীতিমালা সংস্কার করা যেতে পারে বলেও মতামত দেওয়া হয়েছে।
তবে প্রতিবেদনে বলা হয়, কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে জড়িত থাকলে তা ভেরিফিকেশনে প্রতিফলিত করতে হবে। এছাড়া চাকরির জন্য সকল পুলিশ ভেরিফিকেশন সর্বোচ্চ এক মাস সময়ের মধ্যে সমাপ্ত করার সুপারিশ করা হয়।