বেনাপোল দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাত্রী যাতায়াত ৮৩ শতাংশ কমেছে
যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশে যাত্রী যাতায়াত ৮৩ শতাংশ কমেছে। ফেব্রুয়ারিতে এই সংখ্যা আরো কমবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে দিকে বেনাপোল ইমিগ্রেশন ও শূন্যরেখায় গিয়ে দেখা গেছে, বন্দরের কোথাও তেমন কোলাহল নেই। যাত্রীদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার চিরচেনা দৃশ্য নেই। ইমিগ্রেশনে অধিকাংশ কাউন্টারের কর্মকর্তারা হাত গুটিয়ে বসে আছেন। কুলি-শ্রমিকদের তেমন ব্যস্ততা নেই। এক ধরনের সুনশান নিরাবতা বিরাজ করছে। মাঝে মাঝে কয়েকজন যাত্রীর আসা-যাওয়া চোখে পড়ে এসময়।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার বেনাপোল বন্দর দিয়ে ২ হাজার ২৮১ যাত্রী দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করেছেন। এরমধ্য ভারতীয় নাগরিক ১ হাজার ৩৩৭ যাত্রী। মঙ্গলবার ১ হাজার ৯৪৩ যাত্রী দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করেছেন। এরমধ্য ভারতীয় নাগরিক ১ হাজার ১১৯ জন। এর আগের দিন গত সোমবার ১ হাজার ৯৭১ জন যাতায়াত করেছেন। এরমধ্যে ভারতীয় নাগরিক আছেন ৯৪৫ জন।
গত বছর জুলাই মাসের পর থেকে ভারত সরকার বাংলাদেশে ভ্রমণ ভিসা দেওয়া বন্ধ ঘোষণা করে। আগস্টের আগপর্যন্ত এই বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ যাতায়াত করতো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইমিগ্রেশন পুলিশ বেনাপোলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ মো. আহসানুল কাদের ভূঞা বলেন, 'চিকিৎসা ছাড়া সব ধরণের ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে ভারত সরকার। এজন্যে দুই দেশের মধ্যে যাত্রী গমণাগমণ ৮৩ শতাংশ কমেছে। এখন ২ হাজারে মতো যাত্রী প্রতিদিন যাতায়াত করছে। ভ্রমণ ও বাণিজ্য ভিসা যাদের দেওয়া আছে, তাদের মেয়াদও আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ হয়ে যাবে। তখন যাতায়াত আরো কমে যাবে।'
এদিকে বাণিজ্য ভিসাও বন্ধ রয়েছে।০ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে এর প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বেনাপোল ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়াডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, 'বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি পণ্যের মধ্যে শাড়ি কাপড়, থ্রিপিস ও যন্ত্রপাতির পরিমাণ বেশি। আমদানিকারকেরা ভারতে গিয়ে দেখেশুনে এসব পণ্যের এসসি খোলে। ভিসা বন্ধ থাকায় তারা তো ভারতে যেতে পারছেন না। এতে আমদানি পণ্যে প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে।'
এখন যারা যাতায়াত করছে তাদের প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ রোগী। চিকিৎসার জন্যে ভারতে যাচ্ছেন। অন্যদের মধ্যে 'লাগেজ পার্টি'র লোকজন রয়েছে বেশি।
লাগেজ পার্টি কারা
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ এলাকার বাসিন্দা হাফিজা মন্ডল প্রতিদিন সকালে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আসেন। তার সাথে থাকা ব্যাগে কিছু ভারতীয় জিরা, কিসমিস বা চকলেট থাকে, সেগুলো বেনাপোলের নির্দিষ্ট দোকানে দিয়ে আবার বিকেল নাগাদ তিনি ওপারে ফিরে যান। এটাই হাফিজার জীবিকা।
হাফিজা মন্ডলের মত পশ্চিমবঙ্গ থেকে অন্তত ২০০ নারী এখন প্রতিদিনই এপারে আসেন। তাদের সবার কাছে কিছু ভারতীয় পণ্য থাকে। বন্দর সংশ্লিষ্টদের কাছে তারা 'লাগেজ পার্টি' নামে পরিচিত। বাংলাদেশ থেকেও সমপরিমাণ নারী এই 'লাগেজ পার্টি'র কাজের সাথে সম্পৃক্ত। ভারত সরকার বাংলাদেশীদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করার আগে এই সংখ্যা ছিল প্রতিদিন প্রায় এক হাজারের মত।
গত মঙ্গলবার বেনাপোল ইমিগ্রেশনে গিয়ে দেখা গেলো, হাফিজা মন্ডলসহ দুই নারী ইমিগ্রেশনের খোলা আঙিনায় বসে কথা বলছেন। তারা বিমর্ষ,ক্লান্ত। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেল, তারা একসাথে কয়েকজন বনগাঁ থেকে বেনাপোলে এসেছেন। তাদের কাছে ছিল– কিসমিস, জিরা, চকলেট। বেনাপোলের নির্দিষ্ট জায়গায় বিক্রি করে ফিরে যাচ্ছেন। তাদের সঙ্গীরা ইমিগ্রেশনে পাসপোর্ট যাচাই-বাছাইয়ের করাচ্ছেন। এই ফাঁকে তারা সেখানে বসে গল্প করছেন।
হাফিজা মন্ডল বলেন, 'আমার বাড়ি পেট্রাপোলের ওপারে বনগাঁয়। আমি প্রতিদিন সকালে বেনাপোলে আসি। সাথে করে কিছু কিসমিস, জিরা চকলেট নিয়ে আসি। বিক্রি করে আবার বিকেলে ফিরে যাই।'
হাফিজা মন্ডলের সাথে থাকা আছিয়া মন্ডল বলেন, 'কাজটি এখন আর আগের মত সহজ নেই। কাস্টমস খুব ঝামেলা করে।'
এদিকে লাগেজ পার্টির কাছ থেকে উদ্ধার করা কয়েক শত ভারতীয় কম্বল বেনাপোল ইমিগ্রেশনের দ্বিতীয় তলায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
জানতে চাইলে ইমিগ্রেশন পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, 'কাস্টমস কর্মকর্তারা এসব কম্বল জব্দ করে রেখেছেন। সব কম্বল একদিনে জব্দ করা না। কয়েকদিন ধরে জব্দ করার পরে জমা হয়েছে। এসব কম্বল বিভিন্ন এতিমখানায় দিয়ে দেওয়া হয়।'