পদের নাম ‘সিনিয়র সচিব’ বাদ দেওয়ার সুপারিশ জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের
জনপ্রশাসন থেকে সিনিয়র সেক্রেটারি পদ বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে এ সংক্রান্ত সংস্কার কমিশন।
আজ বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন তুলে দেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী।
এই প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। সেখানে এ সুপারিশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
সংস্কার কমিশন বলেছে, মন্ত্রণালয়গুলোকে পুনর্বিন্যস্ত করা হলে— বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে একাধিক বিভাগ সৃষ্টি হবে, তাদের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য একজন সচিবকে মুখ্য সচিব (প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি) হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করা হলো। বর্তমান সিনিয়র সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে এ পদে পদায়ন করা যেতে পারে। বর্তমান 'সিনিয়র সচিব' নামকরণ বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হলো। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব ও সচিব পদে কোনো বেতন গ্রেড বা স্কেল থাকবে না। সরকার তাদের বেতন-ভাতা ও সুবিধাদি নির্ধারণ করবেন।
জনপ্রশাসনের মৌলিক কাঠামোয় প্রকৃতপক্ষে সিনিয়র সচিবের কোনো পদ ছিল না। এ পদ সৃষ্টি হয় ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি, শেখ হাসিনা সরকারের এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে। সে সময়কার জনপ্রশাসন-সংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যমতে, মূলত অনুগত আমলাদের দল তৈরি ও তাদের পুরস্কৃত করতেই এ পদ সৃজন করা হয়েছিল।
এছাড়া কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সার্ভিসের মধ্যে যে বৈষম্যের অভিযোগ রয়েছে— বিশেষ করে, যেসব সার্ভিসে ১ থেকে ৪ গ্রেড পর্যন্ত পদ নেই, তা সমাধানের জন্য প্রত্যেক সার্ভিসে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে গ্রেড-১ থেকে গ্রেড-৪ এর প্রয়োজনীয় সংখ্যক পদ সৃষ্টি করা যেতে পারে। একইভাবে নির্দিষ্ট সার্ভিসের কর্মপরিধির চাহিদার সমানুপাতিক হারে— পদোন্নতির জন্য বিভিন্ন গ্রেডের পদ সৃষ্টি করার জন্য সুপারিশ করা হলো। সংশ্লিষ্ট সার্ভিসের ৫ম ও ৩য় গ্রেডের সমমানের পদে পদোন্নতির জন্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে পরীক্ষা/ মূল্যায়ন করার ব্যবস্থা থাকতে হবে। সকল ক্যাডারের লাইন প্রমোশন নিশ্চিত করার জন্য এ সুপারিশ করা হয়েছে।
শূন্য পদ ব্যতীত পদোন্নতি না দিতে সুপারিশ করেছে কমিশন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'বিভিন্ন সময়ে লক্ষ্য করা গেছে যে, শূন্য পদের চেয়ে অধিক সংখ্যক পদে পদোন্নতি দিয়ে জটিলতার সৃষ্টি করা হয়। এরূপ প্রবণতা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। কেবলমাত্র শূন্যপদের বিপরীতে সমসংখ্যক পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিধান করার জন্য সুপারিশ করা হলো।'
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মাঠ প্রশাসন বৃটিশ ভারত ও মধ্য পাকিস্তান আমলের বিভিন্ন ঐতিহ্য ও বিধিবিধান অনুসরণ করে পরিচালিত হয়। কিন্তু ভারত ও পাকিস্তানে মাঠ প্রশাসনের জন্য আলাদা আইন থাকলেও বাংলাদেশে তা নেই। একারণে মাঠ প্রশাসনে অনেক সময় বিভিন্ন সরকারি বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব দেখা দেয়। এই সমস্যা দূর করতে মাঠ প্রশাসনের জন্য আলাদা আইন করার প্রস্তাব করেছে কমিশন।