এক্সকাভেটর দিয়ে ভাঙা হলো ধানমন্ডির ৩২ নম্বর শেখ মুজিবের বাড়ি
রাজধানীর ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। আজ বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টার দিকে এ ভাঙচুরের ঘটনা শুরু হয়।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, রাত ১১টা ৫০ মিনিটের পর বিক্ষুব্ধ লোকজন এক্সকাভেটর দিয়ে বাড়িটি ভাঙা শুরু করেছে। তার আগে সেখানে আগুন দেওয়া হয়।
এর আগে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল অধিবেশনে যোগদানের ঘোষণার প্রতিবাদে আজ রাত ৯টায় ধানমন্ডি-৩২ অভিমুখে 'বুলডোজার মিছিল'র ঘোষণা দেওয়ার পর এ হামলা হলো।
আজ সন্ধ্যায় ছাত্র-জনতা আন্দোলন নামে ফেসবুকে বিভিন্ন পেজে এ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে পোস্ট করা হয়।
ঘটনাস্থল থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো সর্বশেষ পরিস্থিতি:
রাত ১২টা ২০ মিনিট
ধানমন্ডি ৩২-এ শেখ মুজিবের বাড়ির সামনের অংশ এক্সকাভেটর দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভবনটিতে এখনো আগুন জ্বলছে।
এদিকে শেখ হাসিনার প্রয়াত স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার বাসভবন সুধা সদনেও আগুন দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। এ ভবনটি ধানমন্ডির ৫ নম্বর সড়কে অবস্থিতি।
রাত ১১টা ৫৫ মিনিট
ধানমন্ডি-৩২-এ মাটি খননের ভারী এক্সকাভেটর যন্ত্র দিয়ে ভাঙা হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন।
রাত ১০টা ৪৫ মিনিট
ভবনটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য রাত পৌনে ১১টার দিকে সেখানে বড় একটি এক্সকাভেটর আনা হয়। ৩২ নম্বরের এ বাড়ির পাশের একটি ভবনের এক পাশেও আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।
রাত ৯টা ৫৫ মিনিট
টিবিএসের সাথে কথা বলতে গিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদী বলেন, 'আমি শুনেছি সেনাবাহিনী কলাবাগানে বুলডোজার থামিয়ে দিয়েছে। আমরা সেখানে যাচ্ছি।'
তবে কলাবাগান এলাকা ঘুরে আমাদের প্রতিবেদক তার দাবির কোনো সত্যতা পাননি।
রাত ৯টা ৫৫ মিনিট
বাসভবনের আশপাশে এখনও ভাঙচুর চলছে। বিক্ষুব্ধ জনতা বাসভবন সংলগ্ন বিভিন্ন স্থাপনার দেয়াল ভেঙে ফেলেন। কাউকে কাউকে বাসভবনটির জানালার গ্রিল, কাঠ এসব নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
রাত ৯টা ২৮ মিনিট
ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য উপস্থিত থাকলেও তাদের কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। একপর্যায়ে তাদের ধানমন্ডি-৩২ নম্বর সড়ক ছেড়ে প্রধান সড়কটির দিকে এগিয়ে যান। এ সময় বাসভবনটির ভেতর থেকেও কাউকে কাউকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পর বাসভবনটির কাছে শেখ মুজিবুরে ম্যুরালের সামনে জনতার ভিড়ের মধ্যে এক যুবক জ্ঞান হারান।
রাত ৯টা
বাসভবনটির সামনের সড়কে যেন বিক্ষুব্ধ জনতার ঢল নেমেছে। সড়কের কোথাও দাঁড়ানোর জায়গাটুকুও নেই। এ সময় কয়েকজনকে বাসভবন এবং জাদুঘরটির ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা যায়। তাদের কারো কারো হাতে লাঠি। কয়েকজনকে বাসভবনটির সামনে শেখ মুজিবের ম্যুরালটি ভাঙচুর করতে দেখা যায়।
রাত ৮টা ৫১ মিনিট
বাসভবনটির একটি অংশে আগুন দেন বিক্ষুব্ধ জনতা।
এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতার কেউ কেউ 'আজাদি, আজাদি', 'ঢাকা না দিল্লি, ঢাকা ঢাকা' বলে স্লোগান দেন। সেইসঙ্গে কাউকে দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকতেও দেখা যায়। একজন লিখেছেন, 'থাকবে না ৩২'।
রাত ৮টা ৫০ মিনিট
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদীকে '৩২-এ আগুন, ৩২-এ ভাঙচুর', 'শেখ হাসিনা আর নেই' বলে স্লোগান দিতে শোনা যায়।
রাত ৮টা ৪০ মিনিট
বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের একটি গেট হাতুড়ি দিয়ে ভাঙচুর করা হয়। এ সময় কয়েকজনকে দেয়ালের ওপরের কাঁটাতার খুলে ফেলতে দেখা যায়।
রাত ৮টা ৩০ মিনিট
উত্তেজিত জনতা লাঠি ও ইট দিয়ে ভবনের দেয়ালে আঘাত করেন। এ সময় তাদের শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শোনা যায়।
রাত ৮টা ২০ মিনিট
বাসভবনের কাছে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে ভাঙচুর করা হয়। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী বিক্ষুব্ধ জনতাকে জাদুঘরে আগুন না দেওয়ার অনুরোধ করতে দেখা যায়।
রাত ৮টা
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, কয়েকজন যুবক বাসভবনে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে। তারা সংখ্যায় অনেক ছিল। আমরা তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টাও করেছি। কিন্তু তাদের থামাতে পারিনি। এমনকি তাদের কেউ কেউ আমাদের ওপরেও চড়াও হয়।
৭টা ৫৫ মিনিট
আজ সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিটে উত্তেজিত জনতা ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে হামলা চালায়। তাদের কয়েকজনকে হাতুড়ি ও লাঠি দিয়ে বাড়িটির দেয়ালে আঘাত করতে দেখা যায়। এ সময় তারা আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাবিরোধী স্লোগান দেন।
এর আগে কর্মসূচির বিষয়ে ফেসবুকে একটি পোস্টে বলা হয়, ''ধানমন্ডি-৩২ অভিমুখে 'লং মার্চ টু ধানমন্ডি-৩২' বুলডোজার মিছিল। হাজারো ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা চালিয়ে দিল্লি পালিয়ে গিয়ে সেখান থেকেই খুনি হাসিনার বাংলাদেশবিরোধী অপতৎপরতার প্রতিবাদে ২৪-এর বিপ্লবী ছাত্র-জনতার উদ্যোগে আজ রাত ৯টায় এ কর্মসূচি পালিত হবে।''
আরেক পোস্টে বলা হয়, 'খুনী আসলে লাইভে, জনতা যাবে ৩২-এ'।
এদিকে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগে থেকেই ধানমন্ডি-৩২ নম্বর সড়কের শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের আশপাশের এলাকায় সতর্ক অবস্থান নিয়েছে পুলিশ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ধানমন্ডি জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার জিসানুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ধানমন্ডি-৩২ এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় যেহেতু বিভিন্ন ঘোষণা আসছে এবং কেউ কেউ ধানমন্ডি-৩২ এর দিকে আসতে পারে ও ভাঙচুর চালাতে পারে, তাই আমরা আগে থেকেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।