৩২ নম্বরে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর: পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কোথায় ছিল?
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/06/mujib_residence_fire_hq.jpg)
রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর ও তার বাসভবনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং জরুরি পরিষেবার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে ৩২ নম্বরে অস্থিরতা ও আগুন লাগার খবর ছড়িয়ে পড়লেও ঘটনাস্থলে পুলিশের তৎপরতা বা ফায়ার সার্ভিসের দ্রুত পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মোহাম্মদ সাজ্জাত আলী বুধবার ও আজ বৃহস্পতিবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করার দাবি করে বলেন, 'আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছি, আমরা চেষ্টা করেছি। গভীর রাত পর্যন্ত আমি নিজে সেখানে ছিলাম।'
তবে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদকদের মতে, রাত ৯টার পর মিরপুর রোডের পশ্চিম পাশে, বিশেষ করে মুজিবের বাসভবনের কাছে, পুলিশের কোনো উপস্থিতি দেখা যায়নি।
অনেক সাংবাদিক জানিয়েছেন, তারা ঘটনাস্থলে ডিএমপি কমিশনারকে দেখেননি। সাধারণত, কমিশনার কোথাও পরিদর্শনে গেলে ডিএমপির মিডিয়া ও জনসংযোগ বিভাগ প্রেস বিজ্ঞপ্তি ও ছবি প্রকাশ করে। তবে বুধবার ও বৃহস্পতিবার এ ধরনের কোনো তথ্য গণমাধ্যমে সরবরাহ করা হয়নি।
বুধবার রাত ৮:৩০ মিনিটে টিবিএস-এর এক প্রতিবেদক মিরপুর রোডের সন্তুর রেস্তোরাঁর সামনে একটি পুলিশ ভ্যান দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। ভ্যানের পাশে কয়েকজন পুলিশ সদস্য থাকলেও রাত ৯টার মধ্যে তারা রাসেল স্কয়ারের ট্রাফিক পুলিশ বক্সে চলে যান।
সেখানে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে বসে বসে মোবাইল ফোনে ব্যবহার করতে দেখা যায়। অন্যদিকে, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে কোনো পুলিশ সদস্য ছিলেন না, এমনকি রাত ১২:৩০ মিনিটে এক ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগের সমর্থক সন্দেহে উত্তেজিত জনতা আক্রমণ করার পরও পুলিশের দেখা মেলেনি।
ডিএমপির রমনা বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেন, 'বুধবার রাত ৭:৫৫ মিনিটে ছাত্র ও যুবকদের একটি দল মিছিল নিয়ে আসে এবং মেগাফোন ব্যবহার করে মুজিব স্মৃতি জাদুঘরে হামলার ডাক দেয়। পুলিশ প্রথমে বাধা দিতে চাইলেও জনতার ঢল বাড়তে থাকায় পুলিশ আর সামনে এগোয়নি।'
রাত ৯:২০ মিনিটে টিবিএস প্রতিবেদক ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে সেনাবাহিনীর সদস্যদের আসতে দেখেন। তারা জাদুঘর পেরিয়ে যাওয়ার সময় বাঁশি বাজাতে বাজাতে পশ্চিম দিকে একটি বাড়ির কাছে অবস্থান নেন।
প্রথমে সেনা সদস্যরা জায়গা তৈরি করে জনতাকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন; তবে চারদিকে তুমুল স্লোগান ওঠে এবং শত শত মানুষ তাদের ঘিরে ফেলেন। প্রায় দশ মিনিটের মধ্যে সেনা সদস্যরা জাদুঘরের আশপাশের এলাকা থেকে মূল মিরপুর রোডে চলে যান। সেখানেও জনতার একটি অংশ আবার তাদের ঘিরে ধরেন।
অস্থিরতার মধ্যে রাত ১০:৪৫ মিনিটে ধানমন্ডি ৫-এ শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আগুনের ঝুঁকির কারণে পাশের ভবনের বাসিন্দারা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাস্তায় বেরিয়ে আসতে বাধ্য হন।
ভবনের এক নিরাপত্তারক্ষী মো. জামাল জানান, তিনি ফায়ার সার্ভিসে বারবার ফোন করলেও কোনো সাড়া পাননি।
তিনি বলেন, 'এক ঘণ্টার মধ্যে অন্তত ১৬ বার ফোন করেছি, কিন্তু কেউ রিসিভ করেনি। যখনই বলতাম সুধা সদনে আগুন লেগেছে, তখন তারা লাইন কেটে দিতেন। শেষমেষ একজন ফোন ধরে বললেন, সেখানে [সুধা সদন] আগুন নেভাতে গেলে হামলার মুখে পড়ার সম্ভাবনা আছে।'
এদিকে, ধানমন্ডি ৩২-এর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে জাতীয় জরুরি পরিষেবা ৯৯৯-এ একাধিকবার ফোন করা হলেও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে যায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংস্থাটির কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বুধবার রাত ৯টায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে 'বুলডোজার মিছিল' ঘোষণার পর একদল বিক্ষোভকারী মুজিবের বাসভবনে হামলা চালায়। ওই সময় নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের উদ্দেশ্যে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি ভাষণ দিচ্ছিলেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ হামলাকে 'অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত' বলে অভিহিত করেছে। তবে, ভারতে অবস্থান করে হাসিনার দেওয়া কিছু বক্তব্য জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে বলেও দাবি করেছে সরকার।