শেয়ারবাজারে পুঁজি হারানো শোয়াইব হাছান এখন বর্ষসেরা উদ্যোক্তা
অনার্স প্রথম বর্ষে থাকা অবস্থায় সৈয়দ মোহাম্মদ শোয়াইব হাছান (৪২) অ্যাকুরিয়ামে ফিশ ব্রিডিং, মৌমাছির চাষ, হর্টিকালচার ও পোলট্রি ফার্মের ব্যবসা শুরু করেন।
আসলে ছোটবেলা থেকেই ব্যবসার প্রতি ঝোঁক ছিল শোয়াইবের। কিন্তু অধিক লাভের আশায় ১৯৯৬ সালে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে সব পুঁজি হারান তিনি।
পরে হন্য হয়ে চাকরি খুঁজে বেড়াতে থাকেন। তখন এক নিকটাত্মীয় শোয়াইবকে ঋণ হিসেবে দেড় লাখ টাকা দিয়ে বলেন, "ব্যবসায় যখন লস করেছ সেই ব্যবসাই করো, তোমাকে দিয়ে চাকরি হবে না।"
এ সময় শোয়াইব হাছান ভাবলেন, দেশে চাহিদার তুলনায় বাজারে নুডলস সরবরাহ কম, যদি একই মানের নুডলস কম খরচে উৎপাদন করা যায়, তাহলে ব্যবসায় লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
তখনই ছোট ভাই ও ৩ জন কর্মচারী নিয়ে চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জে হিফস এগ্রো ফুড ইন্ড্রাস্ট্রিজ নামে একটি নুডলস কারখানা গড়ে তোলেন শোয়াইব। নুডলসের পাশাপাশি পরবর্তীতে চানাচুর ও লাচ্ছা সেমাই তৈরির কারখানাও গড়ে তোলেন তরুণ এ উদ্যোক্তা। এরপর আর শোয়াইব হাছানকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
এই ব্যবসায় সফলতার জন্য ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে '২০২১ বর্ষসেরা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা'-র পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি।
বর্তমানে শোয়াইব হাছান তার কারখানায় নুডলস, চানাচুর, মটরভাজা, ড্রিংকস, ম্যাকারনি, আইসপপ, আইসবার, পুডিং, চিপস, হলুদ, জিরা, মরিচের গুঁড়া ইত্যাদি কনফেকশনারিজ পণ্য উৎপাদন করছেন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সাথে সাক্ষাৎকারে সৈয়দ মোহাম্মদ শোয়াইব হাছান বলেন, "বর্তমানে আমি আমার পণ্য আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ল্যাটিন আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ অন্তত বিশ্বে ২০টি দেশে রপ্তানি করি। গত বছর আমার বার্ষিক টার্নওভার ছিল প্রায় ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক, আমার কোম্পানিতে ৬০ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "দেশে ম্যাকারনির চাহিদা ও আমদানি দেখে আমি ২০০৪ সালে চীন থেকে মেশিন এনে ম্যাকারনি উৎপাদন করা শুরু করি, এবং ২০০৮ সালে কোমল পানীয়ও উৎপাদন করি। আমি ব্যবসায়িক সফলতার জন্য এমন কোন চেষ্টা নেই যা করি নাই, যখন যে ব্যবসার সুযোগ পেয়েছি, তাই লুফে নেয়ার চেষ্টা করেছি।"
২০১২ সালে শোয়াইব হাছান এসএমই ফাউন্ডেশনের ফুড এন্ড সেফটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ইমপ্লিমেন্টেশনের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন, সেখানে তার পরিচয় হয় সিঙ্গাপুর হতে আসা পরামর্শক মি. হাউইয়ের সাথে। তার পরামর্শে ও এসএমই ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় হিফস এগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ আইএসও (ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজশন ফর স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন) সনদ অর্জন করে। বর্তমানে শোয়াইব হাছানের মানসম্মত ও প্যাকেটজাত পণ্য ভারত ও পার্শ্ববর্তী দেশে সুনামের সাথে রপ্তানি হচ্ছে এবং নিজস্ব অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে।
এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে শোয়াইব হাছান বলেন, "দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা ঠিকমতো সরকারের প্রণোদনা পায় না, উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা কোন ব্যাংক নেই। আমাদের মতো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের এই মূহুর্তে দরকার স্বল্পসুদে দীর্ঘমেয়াদী জামানতবিহীন ঋণ সহায়তা এবং একটি কার্যকর এসএমই নীতি।"
"আমি যদি সরকারের পর্যাপ্ত ঋণ সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেতে পারি, তাহলে আশা করি আগামী ৫ বছরের মধ্যে আমার প্রতিষ্ঠানে অন্তত ৭০০-৮০০ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং আমার কোম্পানির বার্ষিক টার্নওভার হবে অন্তত ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার", বলেন এই সফল তরুণ উদ্যোক্তা।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. মো. মাসুদুর রহমান টিবিএসকে বলেন, "শোয়াইব হাছানের এই ব্যবসায়িক সাফল্য দেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অনুপ্রাণিত করেছে।
এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য স্বল্পসুদে দীর্ঘমেয়াদী জামানতবিহীন ঋণ সুবিধা দেয়ার ব্যাপারে সরকার আন্তরিক; ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোকেও সরকার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের এই ক্যাটাগরিতে ঋণ সুবিধা দেয়ার জন্য তাগাদা দিচ্ছে।"