নগর পরিবহনে সেবার মান নিয়ে সন্তুষ্টি, তবু যাত্রী সংকট
গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে ৫০টি বাস নিয়ে চালু হওয়া রাজধানীর ঘাটারচর-কাঁচপুর ব্রিজ রুটে পরীক্ষামূলক প্রকল্প ঢাকা নগর পরিবহনের সেবার মান নিয়ে তেমন কোনো অভিযোগ না থাকলেও যাত্রী সংকটে রয়েছে বিশেষ এ পরিবহনটি। অনেকে নগর পরিবহন সম্পর্কে না জানা, প্রচারণা না থাকা এবং একই রুটে অন্য কোম্পানির বাস চালু থাকায় যাত্রী সংকট রয়েছে বলে জানান যাত্রী, বাস ড্রাইভার ও সংশ্লিষ্টরা।
পরীক্ষামূলক যাত্রীসেবা বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির চালু করা এ বিশেষ পরিবহনের ৭-৮ টি বাসে রোববার যাতায়াত করে এবং যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঘাটারচর-কাঁচপুর রুটে অন্যান্য কোম্পানির বাসগুলো চলাচল করায় অনেকেরই নগর পরিবহনের বাস কাউন্টার চোখে পড়ে না। এছাড়া অন্য কোম্পানির বাসগুলো রাস্তার বিভিন্ন স্থানে থামানোর কারণে অনেক যাত্রী নগর পরিবহনের জন্য অপেক্ষা না করেই অন্য বাসে উঠে যায়।
তবে যারা নগর পরিবহন সম্পর্কে জানেন, তারা নিয়মিত চলাচলের ক্ষেত্রে এ বিশেষ পরিবহনটিই ব্যবহার করছেন। যাত্রীদের দাবি এই রুটসহ রাজধানীর অন্য রুটগুলোতেও যেন নগর পরিবহনের বাস সার্ভিস চালু করা হয়।
বিআরটিসি বাসগুলোতে হেলপার ব্যবস্থা করা, বাস স্টপেজগুলোতে স্থায়ী টিকেট কাউন্টার নির্মাণ করা, যাত্রী ছাউনির যথাযথ ব্যবস্থা করাসহ এ পরিবহনটির প্রচার প্রচারণাও বাড়ানোর দাবি জানায় যাত্রীরা।
রাস্তায় চলাচলের সময় অন্য কোম্পানির বাসগুলো নগর পরিবহনকে আটকিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানো, যেখানে ঢাকা নগর পরিবহনের বাস থামার কথা সেখানে অন্য বাস থামিয়ে বসে থাকা, যাত্রীদের ডেকে ডেকে তাদের বাসে তোলাসহ নানা সমস্যার কারণে এ রুটে যাত্রী কম পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন কাউন্টারের টিকেটম্যান ও বাস ড্রাইভাররা।
শাহবাগ থেকে মোহাম্মদপুর যেতে ১২ টাকা দিয়ে টিকেট কেটে নগর পরিবহনে ওঠা যাত্রী আবু তাহের টিবিএসকে বলেন, অন্য যেকোনো বাসে মোহাম্মদপুর গেলে ১৫ টাকা ভাড়া লাগে কিন্তু সেখানে নগর পরিবহনে আরও কম ভাড়া। একদিকে আমার টাকাও কম লাগল, অন্যদিকে সেবার মানও ভালো।
ঘাটারচরের যাত্রী যুলহাস মিয়া টিবিএসকে বলেন, রাস্তায় জ্যাম না থাকলে এ সার্ভিস থেকে আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারব। বাসে নির্ধারিত আসনের বেশি একজন যাত্রীও নেওয়া হয় না। তবে এ রুটের অন্য গাড়িগুলো বন্ধ করে দেওয়াও এ পরিবহন সম্পর্কে প্রচারণাটাও দরকার।
পরিবারসহ নগর পরিবহনে উঠা যাত্রী শিলা আক্তার টিবিএসকে বলেন, পরিবারের সবাইকে নিয়ে নিশ্চিন্তে নির্ভয়ে নগর পরিবহনে যাতায়াত করা সম্ভব। অন্য বাসে যেখানে গায়ে গায়ে দাঁড়াতে হয়, পা রাখার মতো জায়গা থাকে না, সেখানে নগর পরিবহন একজনও বাড়তি যাত্রী নিচ্ছে না।
নগর পরিবহনের (বিআরটিসি) ড্রাইভার মো. হাসান হাওলাদার টিবিএসকে বলেন, 'এখন আমাদের বাস চালাতে তাড়াহুড়া করতে হয় না, তবে আমরা যাত্রী কম পাচ্ছি। অন্য পরিবহনের বাসগুলো মাঝে মাঝে আমাদের সামনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে।'
মো. রাহাত, ড্রাইভার নগর পরিবহন (ট্রান্স সিলভা) টিবিএসকে বলেন, 'আমাদের এখন কোনো তাড়াহুড়ো নেই। নির্দিষ্ট স্টপেজে থামাই, যাত্রী নিই, আবার চলে যেই। অথচ আগে যাত্রীর জন্য এক ধরনের যুদ্ধ করতে হতো।'
শাহবাগ টিকেট কাউন্টারের কাউন্টারম্যাশাহবাগ ন ইসমাইল হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'আমাদের বাসের যাত্রী সংখ্যা আস্তে আস্তে বাড়ছে। যারা এ রুটে একবার নগর পরিবহনে যাতায়াত করছে তারা নিয়মিতই করছে। শাহবাগ কাউন্টারে প্রতিদিন প্রায় ৬ হাজার টাকার টিকেট বিক্রি হয়।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের নিয়োগের সময় ভালো বেতন দেওয়া হবে বলেছিল কিন্তু এখনও বেতন নির্ধারণ করেনি। দিনে বর্তমানে ৩০০ টাকা করে হাত খরচ দিচ্ছে। এভাবে বেতন দিলে এমন চাকুরিতে লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমরা চাই আমাদের ভালো মানের একটা বেতন ধরা হোক।'
মোহাম্মদপুর (বসিলা রোডের) কাউন্টারম্যান ইমরান হোসেন বলেন, বিকাল থেকে সন্ধ্যার দিকে লোকজন বেশি থাকে। মোহাম্মদপুর মোড়ে লোকজন বেশি দাঁড়িয়ে থাকে। তাই কাউন্টারে খুব আসে না। ওখান থেকেই অন্য গাড়িতে যাত্রীরা উঠে যায়।
হেলপার ছাড়াই চলছে বিআরটিসির বাস
ঢাকা নগর পরিবহনের বিআরটিসির দ্বিতল বাসগুলো কোনো ধরনের হেলপার ছাড়াই শুধুমাত্র ড্রাইভার দিয়ে চলছে। এতে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাসহ টিকেট চেকিংসহ নানা সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ড্রাইভার ও যাত্রীরা।
নগর পরিবহনের (বিআরটিসি) যাত্রী জসিম উদ্দিন টিবিএসকে বলেন, 'এদের সেবার মান ভালো তবে বিআরটিসিতে হেলপার না থাকায় ব্যবস্থাপনায় সমস্যা হয়। ড্রাইভারের একারই সবকিছু দেখে চালাতে হচ্ছে। এতে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা তো থেকেই যায়।'
বিআরটিসির এক ড্রাইভার টিবিএসকে বলেন, 'হেলপার না থাকায় ঝামেলা হচ্ছে, সম্ভাবনা রয়েছে দূর্ঘটনার। অনেকে কাছের টিকেট কেটে দূরে যাচ্ছে যেটা আমার পক্ষে চেক করা সম্ভব না।'
মোহাম্মদপুর কাউন্টারম্যান হানিফ বলেন, 'এখানে আমি একা সবকিছু সামলাতে পারি না। খাবার খাওয়া কিংবা ওয়াশরুমে যাওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে। প্রতি কাউন্টারে অন্তত দুজন লোক দরকার।'
এ রুটে চলাচল করা রজনীগন্ধা পরিবহন ইতোমধ্যে বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এ বাসগুলোর নাম পরিবর্তন করে টি-থ্রি পরিবহন নামে চলছে বলে অভিযোগ করেছে নগর পরিবহনের ড্রাইভার ও কাউন্টারে দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
এছাড়াও এ রুটে তরঙ্গ প্লাস, টি থ্রি পরিবহন, মিডলাইনসহ বেশ কয়েকটি পরিবহন নিয়মিত চলাচল করছে।
নগর পরিবহনের এ রুটে ৫ জন চেকার রয়েছে। তারা গাড়িগুলোতে ভ্রমণরত যাত্রীদের টিকেট চেক করে এবং বিনা টিকেটে যাত্রী উঠালে ড্রাইভারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেনট।
গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাস রুট রেশনালাইজেশনের অংশ হিসেবে রাজধানীর কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত সাড়ে ২৭ কিলোমিটার রুটে ৫০টি বাস নিয়ে এ সার্ভিস চালু হয়।
সমস্যাগুলোর বিষয়ে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক ও কমিটির সদস্য সচিব নীলিমা আখতার টিবিএসকে বলেন, 'আমাদের মনিটরিং টিম প্রতিদিনই বাস এবং কাউন্টারগুলো পরিদর্শন করছেন। কেবল তো শুরু করলাম কিছু সমস্যা থাকবে। আর এ সমস্যাগুলো আমরা নজরে নিচ্ছি এবং সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।'
বেতন নির্ধারণের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা খুব দ্রুতই সবার বেতন নির্ধারণ করব।
বিআরটিসির বাসগুলোতে হেলপার না থাকার বিষয়ে এ কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, হয়তো দুই তিনটি বাসে হেলপার না থাকতে পারে। তবে আমরা বিষয়টি আমলে নিলাম এবং ব্যবস্থা নিব।