গ্রাহকের অর্থ ফিরিয়ে দিতে ফের চালু করা হবে কিউকম
বন্ধ থাকা আলোচিত ই-কমার্স প্লাটফর্ম কিউকম.কম পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পেমেন্ট গেটওয়ে ফস্টারের একাউন্টে আটকে থাকা টাকা ফেরত দিতে কিউকমের গ্রাহকদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করা ও ওয়্যারহাউজে থাকা প্লাটফর্মটির প্রায় ১০০ কোটি টাকার পণ্য ক্রেতাদের ডেলিভারি দিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, আলাদীনের প্রদীপ নামে বন্ধ থাকা আরেকটি ই-কমার্সের গ্রাহকদের পাওনা ফেরত দিতেও উদ্যোগ নিচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে মামলা হওয়ার পর থেকেই পলাতক এ কোম্পানিটির মালিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান মুন ও মাহমুদ হাসানের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যোগাযোগ করছেন বলে জানা গেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বৃহস্পতিবার বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, কিউকম তাদের গ্রাহকদের ডেলিভারি করার জন্য ১০০ কোটি টাকার পণ্য কিনেছিল, যা তাদের ওয়্যারহাউজে পরে আছে। এসব পণ্য যাতে ক্রেতাদের ডেলিভারি করতে পারে, সেজন্য কোম্পানিটি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে।
'ওয়্যারহাউজ পরিদর্শন করাসহ সেগুলো ক্রেতাদের ডেলিভারি করার বিষয়টি দেখভালের জন্য আমরা একটি কমিটি গঠন করেছি। কিন্তু ক্রেতাদের অর্ডার ও পেমেন্ট করার সব তথ্য যাচাই করে সেগুলো ডেলিভারি দেওয়া কিংবা ফস্টারে আটকে থাকা টাকা গ্রাহকদের ফিরিয়ে দিতে পূর্ণাঙ্গ তালিকা করতে কিউকমের অফিস চালুর পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে'- যোগ করেন তিনি।
অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করেও পণ্য না পাওয়া কিউকমের ৬,৭২১ গ্রাহককে ৫৯ কোটি টাকা ফেরত দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
ফস্টারের একাউন্টে কিউকম ও তার গ্রাহকদের আরও ৩৪০ কোটি টাকা রয়েছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া এই টাকার বিপরীতে কিউকম যেসব পণ্য ডেলিভারি দেয়নি, তা গ্রাহকদের ফিরিয়ে দিতে ফস্টারের সঙ্গে যৌথভাবে তালিকা তৈরির কাজ চলছে।
বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে পণ্য বিক্রির লোভনীয় অফার দিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে গত অক্টোবরে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন কিউকমের সিইও রিপন মিয়া।
ওয়্যারহাউজে থাকা পণ্য ও পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা অর্থ গ্রাহকদের ফেরত দেওয়া হলে রিপন মিয়ার জামিন পাওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, তাতে কোম্পানিটির নতুন করে কার্যক্রম চালানোর সুযোগ তৈরি হতে পারে।
গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে মামলা হওয়ার পর আলাদীনের প্রদীপও বন্ধ হয়ে গেছে। কোম্পানিটির মালিক পলাতক রয়েছে। এই কোম্পানির গ্রাহকদের বড় অংশও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আলাদীনের প্রদীপ গ্রাহকদের কাছ থেকে মোট ১০৬ কোটি টাকা নিয়েছে, কোম্পানিটির জব্দ থাকা ব্যাংক একাউন্টে রয়েছে মাত্র ৫ কোটি টাকা। তবে পেমেন্ট গেটওয়ে এসএসএল এর কাছে আলাদীনের প্রদীপের বেশকিছু অর্থ আটকে আছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
'আলাদীনের প্রদীপের মালিক পলাতক রয়েছে। যেকোন উপায়ে তার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। আমরা চাচ্ছি, এসএসএলে আটকে থাকা টাকা আলাদীনের প্রদীপের গ্রাহকদের ফেরত দিতে', জানান শফিকুজ্জামান।
তিনি বলেন, আলাদীনের প্রদীপের মালিক সচিবালয়ে আসতে আগ্রহী নয়। ফলে তার সঙ্গে অনলাইনে একটি সভা করে গ্রাহকদের পাওনা ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
'এভাবেই একটি একটি করে সকল ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর গ্রাহকদের পাওনা ফেরত দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি', জানান শফিকুজ্জামান।
এদিকে, ইভ্যালির যেসব গাড়ি কোম্পানিটির কর্মকর্তাদের কাছে রয়েছে, সেগুলো সাত দিনের মধ্যে ফেরত নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটি পরিচালনায় হাইকোর্ট গঠিত পর্ষদ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গাড়ি ফেরত না দিলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে টিবিএসকে জানিয়েছেন বোর্ডের এক সদস্য।
তিনি বলেন, ইভ্যালীর নামে রেঞ্জ রোভার ও হেরিয়ারসহ বিভিন্ন ব্রান্ডের ২০টির বেশি গাড়ি কেনা হয়েছে। কিন্তু গাড়িগুলোর কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। যাদের কাছে গাড়িগুলো আছে, তাদেরকে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।