মানুষের হাতে মায়ের মৃত্যু, অপেক্ষায় মারা গেল ক্ষুধার্ত বাচ্চারা
দেখলে মনে হয় জড়াজড়ি করে শুয়ে আছে দুটি বনবিড়ালের বাচ্চা। যদিও পাশেই আরেকটি বাচ্চার গায়ে আঘাতের চিহ্ন। আরো কাছে গিয়ে দেখা যায় সবগুলোই মৃত। সদ্য জন্ম নেওয়া এই বাচ্চাগুলো মাকে না পেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে রাতের ঠান্ডায় মারা গিয়ে থাকতে পারে। কথাগুলো বলছিলেন ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার খোকন থৌনাউজাম।
ঘটনাটি মৌলভীবাজারের লাওয়াছড়া জাতীয় উদ্যানেরর বাঘমারা ক্যাম্পের বিপরীতে হীড বাংলাদেশের পিছনের লেক সংলগ্ন টিলার উপরে।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে খোকন থৌনাউজাম জানান, 'আজ সকালে আমি ছবি তুলতে এই জায়গায় প্রাণীদের খুঁজতে যাই। এ সময় দেখতে পাই জড়াজড়ি করে মরে পড়ে থাকা বাচ্চা দুটোকে। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল গত রাতের কোনো এক সময় মারা যাওয়ার সময়ও বাচ্চাদুটি একজন আরেকজনের সাথে ওম ভাগাভাগি করে চেস্টা করে গেছে টিকে থাকতে।'
কিন্তু প্রচণ্ড শীত আর গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে মাকে ছাড়া টিকতে পারেনি গত কয়দিনের অনাহারে দুর্বল হয়ে পড়া বাচ্চাগুলো৷ তৃতীয় বাচ্চাটাকে পাওয়া যায় কিছুটা দূরে ঝোপের ভেতর। সেটার মাথার উপরের দিকের কিছু অংশ খাওয়া। হয়তো অন্য কোন শিকারি প্রাণীর কাজ। তন্ন তন্ন করে আশপাশে খুঁজে আর কোন কিছু পাওয়া গেল না। পরে বন বিভাগকে জানালে বন বিভাগের উদ্যোগে মাটিচাপা দেয়া হয় মৃত বাচ্চাগুলোকে।
আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিন দিন আগেও একটা বন বিড়াল লেকের পাড়ে ঘর তুলে বসবাস করা আজগর আলীর পোষা একটা হাঁস ধরে নিয়ে চলে যায় টিলার দিকে। এরপর আর দেখা যায়নি সেটাকে। যদিও এ নিয়ে আজগর আলীর কোন ক্ষোভ নেই ।
তবে বনবিভাগসহ সবার ধারণা, এই গ্রাম বা অন্য কোন গ্রামের কেউ মেরে ফেলেছে বাচ্চাগুলোকে। অথবা মারা গেছে লাউয়্যাছড়া রোডে কোনো বেপরোয়ারা গতির যানবাহনের নিচে চাপা পড়ে। মায়ের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে বাচ্চারা বের হয়ে আসে তাদের বাসা থেকে এবং মারা যায়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রকৃতীপ্রেমী নিবাসী নক্রেক জানান, 'আমি বাচ্চাগুলোকে দেখার পর খুব মন খারাপ করে আছি। আমার ধারণা, মানুষ তার মাকে ফেলে ফেলছে। কারণ এই বনে বনবিড়াল শিকার করে খাওয়ার মতো অন্য কোনো প্রাণী নেই। ...বনবিড়াল খুবই বিপন্ন একটি প্রাণী।'
রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, 'আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। আমাদের প্রাথমিক ধারণা, বাচ্চাগুলোর মা হয়তো আশেপাশে কোথাও মানুষের হাতে মারা পরেছে বা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। মা আসেনি, তাই বাচ্চাগুলো না খেয়ে দুর্বল হতে হতে বাসা থেকে বের হয়ে আসে এবং মারা যায়।'