জিপিএইচ ইস্পাত কারখানায় শ্রমিকের মৃত্যুতে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর
চট্টগ্রামে রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জিপিএইচ ইস্পাত কারখানায় রঞ্জিত দাশ নামে শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই)। গতকাল রোববার (৩০ জানুয়ারি) ডিআইএফই'র পক্ষ থেকে জিপিএইচ ইস্পাত কারখানা কর্তৃপক্ষকে এই নোটিশ দেওয়া হয়।
ডিএফআই চট্টগ্রামের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আবদুল্লাহ আল সাকিব মুবাররাত টিবিএসকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মুবাররাত বলেন, "নোটিশে শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে কিনা- তা জানাতে জিপিএইচ কর্তৃপক্ষকে ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।"
ডিআইএফই সূত্র জানায়, কারখানায় কেন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়নি- তা জানতে চাওয়া হয়েছে কারণ দর্শানো নোটিশে। নিহত শ্রমিকের অভিজ্ঞতা সনদ এবং প্রশিক্ষণ ছিল কিনা এবং দুর্ঘটনার দিন কাজে যোগ দেওয়ার দিন কি ধরনের যন্ত্রপাতি সে ব্যবহার করেছে- সেসব তথ্যও জানতে চাওয়া হয়েছে।
গত ২৭ জানুয়ারি দুপুর ১২ টা ২০ মিনিটে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডু উপজেলার সুলতানা মন্দির এলাকায় জিপিএইচ ইস্পাত কারখানায় কর্মরত অবস্থায় বিষ্ফোরণে মারা যায় রঞ্জিত দাশ। তার বাড়ী সীতকুণ্ডের কুমিরা এলাকায়। দুর্ঘটনার পরদিন শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ডিআইএফই'র ডিআইজি।
গত ৮ জানুয়ারি থেকে জিপিএইচ ইস্পাত কারখানায় দৈনিক ৬শ টাকা মজুরিতে কার্টারম্যান হিসেবে চাকরি নেন রঞ্জিত। গত ১৪ জানুয়ারি জন্ম নেয় রনজিতের পুত্র সন্তান। সন্তানের বাবা ডাক শোনার আগেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেলেন রনজিত।
কারণ দর্শানো নোটিশ প্রসঙ্গে জিপিএইচ ইস্পাতের মিডিয়া অ্যাডভাইজার মোহাম্মদ ওসমান গনি চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নোটিশের বিষয়ে জিপিএইচ এর সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জেনে পরে জানানো যাবে।
এর আগেও জিপিএইচ ইস্পাত কারখানায় বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনায় শ্রমিক নিহতের ঘটনায় একাধিকবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় ডিআইএফই কর্তৃপক্ষ।
ডিআইএফই ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর জিপিএইচ ইস্পাতকে যেসব কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে তাতে উল্লেখ রয়েছে: জিপিএইচ ইস্পাত ২০০৬ সালের বাংলাদেশ শ্রম আইনের কমপক্ষে ১৭টি ধারা লঙ্ঘন করেছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো; কারখানায় লাইসেন্সহীন ঠিকাদার নিয়োগ, নিয়োজিত শ্রমিকদের নিয়োগপত্র এবং ছবিসহ পরিচয় না দেওয়া, শ্রমিকদের সার্ভিস বুক না দেওয়া, শ্রমিক রেজিষ্টার সংরক্ষণ না করা, শ্রমিকদের যথাযথ সুরক্ষা না দিয়েই কাজ করানো, কারখানায় লিফট, স্কেল, এক্সেভেটর, ক্রেন চালনায় অদক্ষ চালক দ্বারা পরিচালনা, বছরে কমপক্ষে একবার উক্ত ক্রেন মেশিনগুলো পরীক্ষা না করা, ফার্নেসের কাছে যারা কাজ করে তাদের সুরক্ষা পোশাক না দেওয়া, নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরিতে বিধি মোতাবেক নিরাপত্তা কমিটি গঠন ও কার্যকর না করা, যে ধরনের কাজে লোহা ছিটকে এসে পড়তে পারে তেমন কাজে কর্মস্থলের চতুর্পাশে ৬ মিটারের মধ্যে যাতে কেউ অবস্থান করতে না পারে তার ব্যবস্থা না থাকা এবং বিপজ্জনক কাজসমূহে কর্মরত শ্রমিকদেরকে দুই ঘন্টা পরপর আধা ঘন্টা বিশ্রাম না দেওয়া।
জিপিএইচ ইস্পাত কারখানায় গত ছয় বছরে ১৩ টি দূর্ঘটনায় ৮ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে আহত হয়েছেণ কমপক্ষে ৩৩ জন শ্রমিক ও কারখানা কর্মকর্তা।