আশুলিয়ায় সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩৬, শ্রমিকের মৃত্যু দুষ্কৃতকারীর গুলিতে: পুলিশ
গতকাল সোমবার ঢাকার আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চলে আন্দোলনরত শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষে একজন শ্রমিক নিহত হন। এই সংঘর্ষের সময় যৌথ বাহিনীর ওপর হামলা, গাড়ি ভাংচুর, সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও কারখানায় অনুপ্রবেশ করে লুটপাটের অভিযোগে মোট ৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সোমবার দিন ও রাতের বিভিন্ন সময় আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে যৌথবাহিনী তাদের গ্রেপ্তার করে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড'কে জানিয়েছেন আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক।
টিবিএসকে তিনি বলেন, যৌথবাহিনী গতকাল আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে শ্রমিকও রয়েছেন। পরে তাদের ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আজ আদালতে পাঠানো হয়।
এদিকে আন্দোলনরত শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মধ্যেকার সংঘর্ষের ঘটনার পর– আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা ১১শ' থেকে ১২শ' জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছে শিল্প পুলিশ। গতকাল দিবাগত রাতে যৌথবাহিনীর ওপর হামলা, গাড়ি ভাংচুর, সরকারি কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগ এনে এই মামলা করা হয়েছে।
শিল্প পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. রাশেদ মিয়া বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় গতকাল রাতে মামলাটি দায়ের করেন।
শিল্প পুলিশ কর্মকর্তার দায়েরকৃত এই মামলায় বলা হয়েছে, সংঘর্ষ চলাকালে উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিক ও বহিরাগত অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীদের ছোড়া গুলিতে শ্রমিক মো. কাউছার খান নিহত হন।
এদিকে আশুলিয়ায় গুজব ছড়িয়ে সহিংসতা করা হয়েছে বলে আজ মঙ্গলবার জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
এদিন সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভায় সাংবাদিকদের কাছে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, প্রথম থেকেই দেখছি, সুনির্দিষ্ট কিছু মানুষ উসকানি দিয়ে আসছে। রবিবারও যে ঘটনা ঘটেছে, সেটার মূল ঘটনা সবার জানা দরকার। একজন শ্রমিক সেখানে নিহত হয়েছেন, আমরা দুঃখিত। আমাদের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে ১৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, 'একটি গুজবের ভিত্তিতে রবিবার ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল। গুজব ছড়ানো হয়েছিল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একজনকে ধর্ষণ (রেপ) করেছে এবং দুইজনকে খুন করে লাশ ফেলে রেখেছে। এভাবে কারখানাগুলো থেকে শ্রমিকদের নামিয়ে আনা হয়েছিল।'
উপদেষ্টা আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি ভাঙচুরসহ তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে শ্রমিকরা। কিন্তু তখনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অত্যন্ত ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের মধ্য থেকে অনুপ্রবেশকারী গুলি ছুড়েছিল প্রথম। প্রথম গুলিটি শ্রমিকদের ভেতর থেকে দুস্কৃতকারীরা ছুড়েছিল। সেখান থেকে গোলাগুলির সূত্রপাত হয়। দুঃখজনকভাবে সেখানে আমাদের একজন শ্রমিক নিহত হন। আরও সাতজন আহত হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও ১৩ সদস্য আহত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, আমরা এই পরিস্থিতি কখনোই চাই না, শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মুখোমুখি দাঁড় করাতে চাই না। আশুলিয়ায় এতদিন ধরে আন্দোলন চলছে, সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা রেখে এসেছে। মালিকদের সঙ্গে কথা বলে কীভাবে বেতন আদায় করা যায়, তারা সেই চেষ্টা করছে। সেনাবাহিনীও একই কাজ করেছে।