ময়না পাখি একদাম সাড়ে ৬ হাজার, টিয়া প্রতিটি দুই হাজার টাকা!
সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বাড়বাজারে আট বছর ধরে বিক্রি হচ্ছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। ক্রেতাদের আকর্ষণ ময়না ও টিয়ার দিকেই বেশি।
ময়নার একদাম সাড়ে ছয় হাজার, টিয়াপ্রতি দুই হাজার টাকা। এভাবেই প্রকাশ্যেই চলছে পাখি বিক্রির ব্যবসা। তবে বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট জানিয়েছে, দেশীয় প্রজাতির কোনো পাখি রাখা ও ক্রয়-বিক্রয় দণ্ডনীয় অপরাধ।
সাতক্ষীরা বড়বাজারের ডে নাইট স্কুলের পাশের সড়কে মেসার্স মরিয়ম ট্রেডার্স ও ভাইবোন ট্রেডার্স- দুই দোকানে চলে পাখি কেনাবেচা। এখান থেকে ক্রেতারা বিভিন্ন প্রজাতির পাখি সংগ্রহ করেন।
শহরের বকচরা এলাকার জামের আলীর ছেলে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাসেল হোসেন। মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পাখি কিনতে মেসার্স মরিয়ম ট্রেডার্স দোকানটিতে আসে রাসেল।
তার ভাষ্য, 'ছোটবেলা থেকেই আমার পাখি পোষার শখ। এখানে কিনতে এসেছি, তবে দাম চায় বেশি। লাভবার্ড প্রতিটি ২৮০ টাকা; টিয়া, ময়না আরও দামি।'
দোকানটিতে রয়েছে- টিয়া, ময়না, লাভবার্ড, খরগোশ, কবুতর, ঘুঘু-সহ বিভিন্ন প্রাজাতির পাখি।
পাখি কিনতে দোকানটিতে আসেন জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি থানার দমদমা গ্রামের ইমাজউদ্দীনের ছেলে আরিফ। তিনি বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকুরির সুবাদে সাতক্ষীরায় রয়েছেন।
আরিফ জানান, 'আমার পাখির খুব শখ। বাড়িতে ৩০টি টিয়া পাখি এখনো রয়েছে। পাখি দেখলে দামদর করে কিনি। কিন্তু, এখানে দোকানি ময়নার দাম চাইছেন সাড়ে ৬ হাজার টাকা। অথচ পাখিটার বয়স বেশি হয়ে গেছে; এখন কথা বলা শেখানো যাবে না। এছাড়া, টিয়া পাখির দাম বলছে প্রতি পিস দুই হাজার টাকা, যা অনেক বেশি হয়ে যায়।'
মেসার্স মরিয়ম ট্রেডার্সের কর্মচারী ফয়সাল হোসেন জানান, দোকানে জাবা, টিয়া, ময়না, ককাটেল, বাজিগর, লাভবার্ড, ফিংস, ঘুঘুসহ খরগোশও রয়েছে। বয়স বিচারে বাজিগরের জোড়া ৩৫০-৫৫০ টাকা, ফিংস ৪০০ টাকা জোড়া, লাভবার্ড ৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৬ হাজার পর্যন্ত রয়েছে।
ককাটেল ৭ হাজার টাকা জোড়া, ঘুঘু ৭০০-৮০০ টাকা জোড়া, টিয়া পাখিপ্রতি পিস একদাম ২ হাজার টাকা আর ময়নার দাম পড়বে সাড়ে ৬ হাজার টাকা, এক জোড়া জাবার মুল্য ১৮শ টাকা।
দেশীয় পাখির বিষয়ে ছেলেটি জানায়, 'আমরা বিভিন্ন সরবরাহকারী কাছ থেকে এগুলো কিনে বিক্রি করি। দেশীয় প্রজাতির পাখি বিক্রি করা নিষেধ; কিন্তু না বিক্রি করলেও চলে না- সেজন্য বিক্রি করি। তবে দুই-একটা করে রাখছি।'
আরেক কর্মচারী রাহাত হোসেন জানান, 'কোনো সমস্যা ছাড়াই পাখির দোকানটি গত ৮ বছর ধরে চলছে। এটা আমার মামার দোকান। আমাদের দেখে পাশে আরেকটি দোকান করেছে। প্রতিদিন ৫-১০ হাজার টাকার পাখি বিক্রি হয়।'
দেশীয় পাখি বিক্রির কথা অস্বীকার করে মেসার্স ভাইবোন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী প্রশান্ত সরকার বলেন, 'আমি দেশি পাখি বিক্রি করি না। বিদেশি সৌখিন পাখি বিক্রি করি।'
অন্যদিকে, মেসার্স মরিয়ম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মোঃ রুহুল আমিন বলেন, 'আমি ৮ বছর ধরে পাখি বিক্রির ব্যবসা করছি। আমরা পাশাপাশি দুটি দোকান করেছি। এছাড়া, জামতলা মোড়ে ছোট একটা দোকান আছে।'
দেশীয় প্রজাতির পাখি বিক্রি করতে বন বিভাগ থেকে নিষেধ করে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে সরকারি কর্মকর্তারা এসে বিক্রি করার জন্য দিয়ে যায় আমি কি করব। ময়না পাখিটা ১০-১৫ দিন আগে একজন সাবেক কর্মকর্তা দিয়ে গেছেন। আমি সেটা রাখতে বাধ্য হয়েছি।
বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আস সাদিক বলেন, 'দেশীয় প্রজাতির যেকোনো বন্য পাখি ক্রয়-বিক্রয় অপরাধ। এগুলো বিক্রির জন্য কোনো লাইসেন্স দেওয়া হয় না। তবে সৌখিন পাখি বিক্রি করা যাবে। কেউ দেশীয় প্রজাতির পাখি বিক্রি করলে তিনি শাস্তির আওতায় পড়বেন।'