সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরষ্কার পাওয়া আমির হামজা কে!
জাতীয় পর্যায়ে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ 'স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২২' দেশের ১০ গুণী ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক বিজ্ঞপ্তিতে পুরষ্কারের জন্য মনোনীতদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। তালিকায় সাহিত্যে অবদানের জন্য মনোনীতদের একজন হলেন- মরহুম মো. আমির হামজা। কে তিনি, সাহিত্যে তার অবদানই বা কী- তা নিয়ে সাহিত্যামোদীদের মধ্যে শুরু হয়েছে জোর গুঞ্জন। সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই বলছেন, তারা আগে কোনোদিন তার নামও শোনেননি।
দেশের শিল্পসংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরাও এনিয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে মরমি সাহিত্য গবেষক সাইমন জাকারিয়া জানিয়েছেন আমির হামজার পরিচয়। তিনি তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, বাংলা একাডেমি থেকে "সাধক কবিদের রচনায় বঙ্গবন্ধুর জীবন ও রাজনীতি" প্রকাশের মাধ্যমে সাধক কবিদের সৃষ্টিতে ইতিহাসের ঘটনাবলি লিপিবদ্ধ করণের ঐতিহ্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপিত ও বিশ্লেষিত হয়েছিল। কিন্তু আমরা নিশ্চিত বহু সাধক কবি ও তাঁদের সৃষ্টিকর্ম আমাদের আলোচনা-সমালোচনার বাইরে রয়ে গেছে। এবছর স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত প্রয়াত সাধক কবি আমির হামজা তাঁদের একজন।
তার জন্ম ১৯৩১ সালে মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার বরিশাট গ্রামে। তিনি ঐতিহ্যবাহী সংগীত পরিবেশনের ধারায় প্রতিযোগিতামূলক আসরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংগীত রচনা ও পরিবেশন করতেন। তত্ত্বগানের পাশাপাশি সমকালীন সময়, রাজনীতি, ইতিহাস-নির্ভর গান রচনা করেছেন। রচিত গানের সংকলন স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে 'বাঘের থাবা', 'পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব তুমি', 'একুশের পাঁচালি' প্রভৃতি শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে।
সাইমনের এই পোস্টে একজন কমেন্ট করেছেন, "তাকে পদকটা দেওয়া হয়েছে কোন সাহিত্যের জন্য? গানে যদি তার অবদান থেকে থাকে, তবে সংগীত ক্যাটাগরিতে দিক। সাহিত্যে কেন? আমাদের সাহিত্যিকের কি এতই আকাল?"
আরেকজন কমেন্ট করেছেন, "নোবেল কমিটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বব ডিলানকে যে কারণে সাহিত্যে পুরষ্কার দিয়েছিল, ধরে নিন সেই একই কারণে আমির হামজাকে! সাহিত্যে স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়েছে।"
এবিষয়ে জানতে চাইলে সাহিত্যিক, গবেষক ও সাংবাদিক আফসান চৌধুরী বলেন, "এই আমির হামজা কে? এমন একজনকে এত বড় পুরষ্কার দেওয়া হলো, যার নামও কেউ জানে না। স্বাধীনতা পুরস্কারও এখন মশকরার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।"
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্ত ওয়াসি আহমেদ বলেন, "আমির হামজার পুরষ্কারপ্রাপ্তির এ ঘটনায় আসলে বলার মতো কিছু নেই। একে যদি হাস্যকরও বলা হয়, তাহলেও বোধহয় কম হয়ে যায়।"
এ সময়ের বহুল পঠিত কবি ইমতিয়াজ মাহমুদ তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, "আজম খান জীবিত অবস্থায় কোনো রাষ্ট্রীয় পদক পান নাই। শহীদুল জহির এমনকি বাংলা একাডেমি পুরষ্কারও পান নাই। অথচ আমির হামজা নামক নাম না জানা লেখক/কবিরা এদেশে নিয়মিত স্বাধীনতা পদক/একুশে পদক পান।"