রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সক্রিয় মানবপাচার চক্র, মালেয়শিয়া বলে নামালো সোনাদিয়ায়
বিয়ে বা চাকরি প্রলোভন অথবা উন্নত জীবনের আশায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় পাড়ি দেওয়ার কথা বলে ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গা নারীদের পাচারে টার্গেট করছে দালালচক্র।
সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া নেওয়ার কথা বলে মহেশখালীর সোনাদিয়ায় রেখে যাওয়া হয় ১৪৯ জন রোহিঙ্গাকে। মঙ্গলবার (২২ মার্চ) রাতে তাদের সেখান থেকে কক্সবাজার ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, 'সাগরপথে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে' কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপে ট্রলার থেকে 'দালাল চক্রের' নামিয়ে দেওয়া ১৪৯ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার বিকেলে মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের সোনাদিয়া দ্বীপ থেকে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় ঘুরাঘুরি করা এসব রোহিঙ্গাদের উদ্ধার করা হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া ১৪৯ জনের মধ্যে ৭৫ জন নারী, ৫১ জন পুরুষ ও ২৩ জন শিশু। এসব রোহিঙ্গা উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পের বাসিন্দা।
উদ্ধারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছে, তারা উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের বাসিন্দা। রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক সক্রিয় একটি দালাল চক্র সাগরপথে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তাদের ট্রলারে তোলে। পরে সোমবার তাদের মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া দ্বীপে নামিয়ে দেয়। উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের ৫টি ট্রলারে করে সোনাদিয়া দ্বীপ থেকে মঙ্গলবার ভোররাতে কক্সবাজারস্থ বাঁকখালী নদীর ৬নং ঘাটে আনা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে বাঁকখালী নদীর ৬নং ঘাটে দেখা যায়, কারো বয়স ১২, কারো বয়স ১৬; আবার কারো কারো বয়স ১৮'র বেশি। আর যাদের বয়স ২৫'র বেশি তাদের কোলে এবং হাতে রয়েছে শিশু।
দীর্ঘ ১০-১২ দিন সাগরে ট্রলার ভাসিয়ে অবশেষে সোমবার বিকেলে মালয়েশিয়া পৌঁছায় বলে তাদের নামিয়ে দেয় দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর সোনাদিয়া উপকূলে।
উদ্ধার হওয়া ১৫ বছরের শিশু আছিয়া বলেন, "ক্যাম্পে বিয়ে দিতে কষ্ট হচ্ছে, মা-বাবা বলেছে চোখ যেদিকে যায় সেদিকে চলে যাও। আল্লাহর উপর ভরসা করে মালয়েশিয়া ট্রলারযোগে রওনা হয়েছিলাম। পরে সোনাদিয়া থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে।"
উদ্ধার হওয়া আরেক রোহিঙ্গা নারী খতিজা বলেন, "মালয়েশিয়ায় আত্মীয়-স্বজন আছে, তারা নিয়ে যাচ্ছে তাই চলে যাচ্ছি। এখন যেহেতু দেশে যেতে পারছি না। আর ক্যাম্পেও থাকতে ইচ্ছে করছে না। তাই মালয়েশিয়া চলে যাচ্ছি।"
দালালচক্র রোহিঙ্গাদের নারীদের বিনা খরচে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে ট্রলারে তুললেও পুরুষ কাছ থেকে আদায় করেছে মোটা অংকের টাকা। ট্রলারে তুলে করা হয় অমানবিক নির্যাতন।
উদ্ধারকৃত আব্দুল্লাহ বলেন, টেকনাফ থেকে ছোট ট্রলারে করে সাগরে যায়। ওখানে ১০ থেকে ১২দিন মতো সাগরে ছিলাম। দালালরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে শেষ পর্যন্ত কিছু করতে না পেরে ট্রলার সোনাদিয়ায় এনে নামিয়ে দিয়েছে। মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য দালাল ৪০ হাজার টাকা নিয়েছে। ট্রলারে ১৯২ জন ছিলাম।
কক্সবাজার মহেশখালী (সার্কেল) এর সহকারি পুলিশ সুপার আবু তাহের ফারুকী বলেন, সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের পেছনে কারা জড়িত সে তথ্য সংগ্রহ করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর উদ্ধার হওয়ার রোহিঙ্গাদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।