দাশেরকান্দিতে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, চালু হচ্ছে জুনে
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্ববৃহৎ ঢাকা ওয়াসার 'দাশেরকান্দি স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট' আগামী জুন থেকে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে ট্রিটমেন্ট প্লান্টটি নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে, তবে এর সাথে সংযোগ লাইনের কাজ জুন মাসের মধ্যে শেষ হলে প্লান্টটি অপারেশনে আসবে বলছে ঢাকা ওয়াসা।
চীনা অর্থায়নের এ প্রকল্প প্রায় এক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে; প্রতিদিন প্রায় ৫০ লাখ মানুষের পয়োবর্জ্য নিষ্কাশনের ক্ষমতা রয়েছে প্ল্যান্টটির।
পাওয়ার চায়নার অধীনে চেংডু ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন কর্তৃক ডিজাইনকৃত ও নির্মিত প্রকল্পটি এক বছরের অপারেশন্স ও রক্ষণাবেক্ষণ শেষে গত বৃহস্পতিবার ওয়াসার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ওয়াসার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী জুনের মধ্যে প্লান্টটি মেইন লাইনের সঙ্গে যুক্ত হবে।
বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর এবং চীন-প্রস্তাবিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের উল্লেখযোগ্য অংশ, এ প্রকল্পটির নির্মাণ শুরু হয় ২০১৭ সালের ১লা আগস্ট।
রাজধানীর আফতাবনগর সংলগ্ন খিলগাঁও থানাধীন দাশেরকান্দি শোধনাগার প্রকল্পের মাধ্যমে রাজধানীর বেশ কিছু এলাকার পয়োবর্জ্য পরিশোধন করে বালু নদে নিষ্কাশন করা হবে। এলাকাগুলোর মধ্যে গুলশান, বনানী, ডিওএইচএস, আফতাবনগর, বাড্ডা, মগবাজার, নিকেতন, কলাবাগান, ধানমন্ডি (একাংশ) ও হাতিরঝিল অন্যতম।
ওয়াসা কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রায় ২৪ হেক্টর জমির ওপর গড়ে ওঠা এই প্রকল্পের মাধ্যমে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পয়োবর্জ্য পরিশোধনের মাধ্যমে ৫০ লাখ নগরবাসীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। এখানে প্রতিদিন প্রায় ৫৮০ টন প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা সহ একটি স্লাজ শুকানোর-বার্নিং সিস্টেম রয়েছে।
ঢাকার পয়োবর্জ্য পরিস্থিতি বদলাতে ২০১৩ সালে ঢাকা মহানগরের পয়োনিষ্কাশন মহাপরিকল্পনা তৈরি করে ওয়াসা। সে অনুসারে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দূষণ রোধে পাঁচটি শোধনাগার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা ওয়াসা।
২০১৩ সালে নেওয়া মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে দাশেরকান্দি শোধনাগারের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রকল্পটি অনুমোদন পায় ২০১৫ সালে। ওই বছরের জুলাইয়ে শুরু হয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। শুরুতে প্রকল্পের খরচ ছিল ৩,৩১৭ কোটি টাকা।
নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। প্রকল্পের খরচ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩,৭১৩ কোটি টাকা। যেখানে জিওবি থেকে ১,৩৩৭ কোটি টাকা, ঢাকা ওয়াসা ১০ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সহায়তা থেকে ২,৩৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
প্রকল্প অনুযায়ী, প্রকল্পের অধীনে প্রগতি সরণিতে রামপুরা সেতুর পশ্চিম পাশে একটি বর্জ্য লিফটিং স্টেশন, রামপুরা থেকে আফতাবনগর হয়ে দাশেরকান্দি শোধনাগার পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ট্রাংক সুয়্যার লাইন (পয়োবর্জ্য পরিবহনের প্রধান লাইন) ও দাশেরকান্দিতে শোধনাগার নির্মাণ করা হচ্ছে। চীনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। কাজ বাস্তবায়ন করছে চীনা প্রতিষ্ঠান হাইড্রো চায়না করপোরেশন।
প্রকল্পের মাসিক অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জানুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৮৩.১৫ শতাংশ।
ওয়াসা সূত্রমতে, বর্তমানে ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন হাজার লিটার পয়োবর্জ্য উৎপন্ন হয়। ঢাকায় ৮৮১ কিলোমিটার পয়োনালা আছে। ঢাকার ২০ ভাগ এলাকা পয়োনালার আওতায় এসেছে। এর বাইরে ঢাকার আর কোনো এলাকায় পয়োবর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই।
ঢাকা ওয়াসার পরিচালক (কারিগরি) একেএম শহীদ উদ্দিন টিবিএসকে বলেন, ধাপে ধাপে এক একটি এলাকার পয়োবর্জ্য লাইন সংযুক্ত করা হবে।
দাশেরকান্দি স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি বাংলাদেশের প্রথম এবং বৃহত্তম আধুনিক পয়ঃনিষ্কাশন ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ারও একক বৃহত্তম পয়ঃনিষ্কাশন শোধনাগার।
চেংডু ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের মহাব্যবস্থাপক হাও ইউয়ানলিন গ্লোবাল টাইমসকে বলেছেন, বিদেশে গৃহীত চীনা উদ্যোগগুলোর মধ্যে দাশেরকান্দি স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মতো খুব কম প্রকল্পই আছে।
ওয়াসা জানায়, 'ঘুরে দাঁড়াও ঢাকা ওয়াসা' কর্মসূচির মাধ্যমে ঢাকা শহরের পানি ব্যবস্থাপনা এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্যে কতগুলো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট হাতে নেওয়া হয়েছে। ঢাকা শহরকে শতভাগ স্যুয়ারেজ নেটওয়ার্কের মধ্যে নিয়ে আসা এবং পয়োবর্জ্য ট্রিট করে নদীতে ফেলার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান কয়েকদিন আগে জানান, "এই বছর এপ্রিল মাসে আমরা দাশেরকান্দি ট্রিটমেন্ট প্লান্টটিকে কমিশনিং করব। জুন থেকে কমার্শিয়ালি এটি ছেড়ে দিতে পারব বলে আমরা আশা করি। আমরা অত্যন্ত সফলভাবে এটির উদ্বোধন করতে পারব ইনশাআল্লাহ।"
ঢাকা ওয়াসার প্রথম স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টটি নারায়ণগঞ্জের পাগলা পয়ঃশোধনাগার। দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগারটি দ্বিতীয়। এরপর রায়েরবাজার, উত্তরা, মিরপুর ও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় আরও চারটি পয়ঃশোধনাগার করবে ওয়াসা। তবে রায়েরবাজার পয়ঃশোধনাগারটিকে আন্ডারগ্রাউন্ড পয়ঃশোধনাগার করতে চায় ওয়াসা।