দুই বছর বিরতির পর রমনা বটমূলে বর্ষবরণ উৎসব
করোনা মহামারির কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর পূর্ণ উৎসাহের সাথে এই বছর ফের মানুষ পহেলা বৈশাখের উৎসব উদযাপন করছে।
বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৬টায় শিল্পী শ্রাবন্তী ধর রাগ রামকেলি উপস্থাপনের মাধ্যমে নববর্ষকে স্বাগত জানান।
এরপর রমনা বটমূলে ছায়ানটের শিল্পীরা রবীন্দ্রসংগীত 'মন, জাগ মঙ্গললোকে' গানের মধ্য দিয়ে আয়োজন শুরু করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সকাল ৯টা ২০ মিনিটের মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়।
মহামারির জন্য আগের দুই বছর বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল অনলাইনে।
সকাল পৌনে নয়টার দিকে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানা হয় রমনায়। অনুষ্ঠান শেষে ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক শিল্পী লাইসা আহমদ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
তিনি বলেন, "আমরা দুই বছরের বেশি সময় করোনার কারণে গৃহবন্দি ছিলাম। আমরা অনলাইনে শুধু আয়োজন করেছি, তাতে তো মন ভরে না। রমনা বটমূলের এই জায়গায় না এলে, একটি অসাম্প্রদায়িক মঞ্চে না দাঁড়ালে, না গান গাইলে যেন আমাদের নবববর্ষ শুরু হয় না। এখন আয়োজন করতে পেয়েছি স্বস্তি এসেছে। যদিও করোনা পুরোপুরি কাটেনি। এবার আমরা যে এসে দাঁড়িয়েছি, সবাই মিলে যে মিলনমেলা হয়েছে, আবার নতুন করে বটমূলে ফিরতে পেরেছি এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার নয়।"
স্বাস্থ্যবিধির কারণে এবার শিল্পী সংখ্যা কমানো হয়েছে জানিয়ে লাইসা আহমদ বলেন, "প্রতিবছর আয়োজনে প্রায় ১৫০ শিল্পী অংশ নেন, এবার করোনার কারণে সংখ্যা কমিয়ে ৮৫ জন করা হয়েছে। গানের সংখ্যার দিক দিয়ে কোন ঘাটতি রাখিনি। এত মানুষ যারা এসেছে, সকলে প্রাণের তাগিদে এসেছে। আমি মনে করি এই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ টিকে থাকবে এবং সকলের মধ্যে বাঙালি সত্তা জাগিয়ে রাখবে।"
এবার গান, আবৃত্তি, পাঠ নিয়ে অনুষ্ঠানসূচি সাজানো হয়েছিল। অনুষ্ঠান শুরুর সময়ই বটমূল এলাকার দর্শকসারি মানুষে পূর্ণ হয়ে ওঠে।
ধানমন্ডি ২৭ থেকে সপরিবার রমনা বটমূলে এসেছেন আফরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, "আমি প্রতিবারই এখানে পরিবার নিয়ে আসি। এখানে আসলে একটা প্রশান্তি লাগে। বাচ্চারাও আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারে। গত দুই বছর ঘরবন্দি ছিলাম। এবার পরিবারকে নিয়ে ভোরেই চলে এসেছি। আবহাওয়াও ভাল ছিল, সবদিক দিয়ে ভালো লেগেছে।"
রমজানের কারণে এবারের উদযাপন কিছুটা ভিন্ন হতে যাচ্ছে। পান্তা ভাতসহ কোনো খাবারের স্টল থাকছে না এবার।
এর আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ছায়ানটের অনুষ্ঠান সকাল ১১টার মধ্যে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দুপুর ২টার মধ্যে রমনার মেলা শেষ করতে বলা হয়। দুপুর ১টা থেকে মেলার সব প্রবেশপথ বন্ধ থাকবে।
এছাড়াও রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এবং এলাকার আরও কিছু পয়েন্টে বেশ কয়েকটি চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। এসব এলাকায় অনুষ্ঠান চলাকালীন কোনো যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হবে না।
পাকিস্তান আমলে ১৯৬১ সালে মানুষের মধ্যে বাঙ্গালি সংস্কৃতি ও সংগীতের ঐতিহ্যকে প্রচার ও লালন করার লক্ষ্যে ছায়ানট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
সংগঠনটি ১৯৬৭ সাল থেকে রমনা বটমূলে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে প্রতি বছর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে।
কেবল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কারণে ১৯৭১ সালে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করেনি ছায়ানট।