নিউমার্কেট-ঢাকা কলেজ সংঘর্ষের ঘটনায় আরেকজনের মৃত্যু
রাজধানীর নিউমার্কেটে ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন দোকান কর্মচারী মো. মুরসালিন (২৪)।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া মুরসালিনের মৃত্যুর বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষের দ্বিতীয় দিন গত মঙ্গলবার আহত হন মুরসালিন।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।
নিহত মুরসালিনের ভাই নূর মোহাম্মদ জানান, তার ভাই নিউমার্কেটের একটি প্যান্টের দোকানের কর্মচারী ছিল।
ইন্সপেক্টর মো. বাচ্চু মিয়া আরও জানিয়েছেন, সংঘর্ষে আহত আরও দুজনকে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তারা হলেন মো. ইয়াসিন (১৮) এবং মো. কানন চৌধুরী (২০)।
এর আগে মঙ্গলবার এই সংঘর্ষে গুরুতর আহত হয়ে মারা যান নাহিদ হাসান (১৮)। নাহিদ বাটা সিগন্যালের কাছে অবস্থিত একটি কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানিতে কাজ করতেন।
আজ খুলছে নিউমার্কেট
কর্তৃপক্ষ ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ায় আজ সকাল থেকে খুলছে ঢাকা নিউমার্কেট।
উল্লেখ্য, সোমবার মধ্যরাতে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের কারণ হিসেবে বিভিন্ন পক্ষ বিভিন্ন দাবি করতে থাকে।
ঢাকা কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী দাবি করেন, সোমবার রাতে তাদের এক সহপাঠী নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের দ্বারা হামলার শিকার হন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসের শতাধিক শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে ছুটে এসে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মার্কেটে হামলা চালায়।
এ সময় দুইপক্ষের মধ্যে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলতে থাকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। হামলায় বেশ কয়েকটি দোকান ভাংচুর এবং বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়।
অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদের দাবির বিপরীতে দোকান মালিকরা জানান, ঢাকা কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী নিউমার্কেটের একটি ফাস্টফুডের দোকানে খেতে আসেন। তারা বিল না দিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করায় তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা দোকানে হামলা ও ভাংচুর শুরু করে।
মঙ্গলবার সকালে নিউমার্কেটের নীলক্ষেত মোড়ে ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আবারও সংঘর্ষ হয়। দিনভর সংঘর্ষে দুইজন নিহত এবং সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীসহ অর্ধশতের বেশি আহত হন।
পুরো ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, "উভয়পক্ষকে নিয়ে পুলিশ শুরু থেকেই সমঝোতার চেষ্টা চালিয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে পুলিশের সমঝোতা ছাড়া উপায়ও থাকে না। দ্বিতীয়ত, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উভয়পক্ষকে সরে যেতে বলেছি। তৃতীয়ত, নন লিথাল উইপন (অস্ত্র) ব্যবহার করা হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়েছে।"
ডিএমপির এ অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, "সামনে ঈদ, বৃহস্পতিবারের পর থেকে কলেজগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। ছাত্র-ব্যবসায়ীদের মধ্যকার তুচ্ছ ঘটনা থেকে সূত্রপাত হওয়া এ সংঘাতের সমাপ্তি জরুরি। ব্যবসায়ীদের সন্তানরাও বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবেন। ঈদকে কেন্দ্র করেই তাদের ব্যবসা, সারা বছর তারা বসে থাকেন। তাদেরও পরিবার আছে। তবে তাদেরও উচিত জনগণের সঙ্গে খারাপ আচরণ না করা। আমি ছাত্রদের আহ্বান করব, সংঘাতে না যাই, ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় কোনো বাধা সৃষ্টি যেন না হয়। সবাই সবার মতো নিজের কাজ করি। সংঘাতে না জড়াই, সংযম রক্ষা করি।"
সংঘর্ষের ঘটনায় বুধবার বিকেল পর্যন্ত কাউকে আটক করেনি পুলিশ। তবে ডিএমপির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য কারা দায়ী সে বিষয়ে জানতে ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই দোকান কর্মচারী ও ফুটপাতের হকার। এছাড়া ঢাকা কলেজের বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের নেতাদের অনানুষ্ঠানিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এছাড়াও সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ বেশ কয়েকজন সহিংস হকারকে চিহ্নিত করেছে। একাধিক ফুটেজে ঘুরে ফিরে তাদের চেহারা দেখা গেছে। সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষ ও পথচারীকে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছেন তারা।