বাড়তি ভাড়া আদায় হচ্ছে চট্টগ্রামের বাস কাউন্টারগুলোতে
ঈদ যাত্রাকে পুঁজি করে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে চট্টগ্রামের বাস কাউন্টারগুলোতে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে । পরিবারের সঙ্গে আনন্দঘন মুহূর্তটি ভাগাভাগি করতে বাধ্য হয়েই ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া দিয়ে টিকিট কাটছেন গ্রামমুখী যাত্রীরা।
নগর পুলিশের হুঁশিয়ারি, জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে জরিমানার পরও বাড়তি ভাড়া আদায় চলছে।
বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের গরীবুল্লাহ শাহ এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঈদে স্বজনদের কাছে ফিরে যেতে কাউন্টারগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। গরীবুল্লাহ শাহ এলাকায় ৩০-৩৫টি বাস কোম্পানির টিকিট কাউন্টার রয়েছে। কেবলমাত্র দুটি কাউন্টার ছাড়া বাকিগুলোতে ভাড়ার তালিকা চোখে পড়েনি। চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে কেউ ৫৮০, কেউ ৬০০, আবার কেউবা ৭৫০ টাকাও দাবি করেছেন।
গ্রীণ লাইন কাউন্টারে গিয়ে চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের ভাড়া কত জিজ্ঞেস করতেই টিকিট বিক্রেতা বললেন, 'আজ গেলে ৮০০, আর কাল গেলে ১ হাজার।'কাল ২০০ টাকা বেশি নিবেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'টিকিটের জন্য মানুষ হাহাকার করছে। এক টাকাও কম হবে না।'
একই কাউন্টার থেকে চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে ১ হাজার টাকা দিয়ে ২৮ তারিখ রাতের জন্য টিকিট কিনেছেন জুনায়েদুল হক। তিনি বলেন, নির্ধারিত ভাড়ায় টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে তা কাটতে হয়েছে।
শ্যামলীর দুটি কাউন্টারে গিয়ে ঢাকা-সিলেট রুটে ভাড়ার পরিমাণ জানতে চাইলে একটিতে ৮০০, অন্যটিতে ৮৫০ টাকা চাওয়া হয়। বাড়তি ভাড়া কেন নিচ্ছেন জানতে চাইলে কাউন্টারে থাকা টিকিট বিক্রেতা বলেন, 'জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি এবং ফিরতি পথে যাত্রী না পাওয়ার কারণে কিছু টাকা বাড়তি নিতে হচ্ছে। তার উপর এবার যাত্রীর চাহিদাও বেশি।'
নগরের ইউনিক ও সৌদিয়ার বাস কাউন্টারে চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে ৫৮০, চট্টগ্রাম-খুলনা রুটে ১১০০, চট্টগ্রাম-বেনাপোল রুটে ১১০০, চট্টগ্রাম-সিরাজগঞ্জ রুটে ৯০০, চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে ৮০০, চট্টগ্রাম-আরিচা রুটে ৬৮০, চট্টগ্রাম-গাজীপুর রুটে ৬০০, চট্টগ্রাম-সুনামগঞ্জ রুটে ৯০০, চট্টগ্রাম-মুক্তাগাছা রুটে ৮০০, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ৩৫০, চট্টগ্রাম-টেকনাফ রুটে ৫৫০ ও চট্টগ্রাম চাঁদপুর রুটে ৪০০ টাকা ভাড়া আদায় হচ্ছে।
অন্যান্য বাস কাউন্টারগুলোতে একেতো ভাড়ার তালিকা লাগানো হয় নি, অন্যদিকে প্রতিটি রুটে ২০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। অপরদিকে এসি বাস কাউন্টারগুলোতে চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে সিঙ্গেল চেকার ১২০০ টাকা ও ডবল চেকার ১৪০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, এবার ঈদে নতুন করে বাস ভাড়া নির্ধারণ করা হয়নি। সেজন্য ঈদেও সাধারণ ভাড়াই কার্যকর থাকবে। এটি সরকার নির্ধারিত ভাড়া। তবে এসি বাসের জন্য ওই ভাড়া প্রযোজ্য নয়। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর বাসমালিকদের চাপে সরকার ভাড়া বাড়িয়েছে। তারপরও বাস মালিকদের বিরুদ্ধে ঈদ সামনে রেখে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
এর আগেও বাড়তি ভাড়া আদায় করায় এবং গত ১৯ এপ্রিল নগরের দামপাড়া বাস কাউন্টারে ভাড়ার তালিকা প্রদর্শন না করায় সোহাগ পরিবহন ও শ্যামলী এন আর ট্রাভেলস কাউন্টারকে ৭ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরদিন ঈদ যাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে বাড়তি টাকা আদায় ও টিকিটের মূল্য তালিকা না থাকায় নগরের কদমতলী এলাকার হানিফ ও শ্যামলী পরিবহনকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে চট্টগ্রাম আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির ভাইস-প্রেসিডেন্ট নিয়াজ মোর্শেদ এলিট বলেন, 'আমরা গত সপ্তাহে বাস মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমরা বৈঠকে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছি কোনো প্রকার বাড়তি ভাড়া আদায় করা যাবে না। এরপরও কেউ বাড়তি ভাড়া আদায় করলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি প্রশাসনও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।'
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আনিছুর রহমান বলেন, 'আমরা দুরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলোতে বাড়তি নজর রাখছি। এর আগেও আমরা সেখানে অভিযান চালিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছি। পাশাপাশি অধিকাংশ কাউন্টারগুলোতে আমরা ভাড়ার তালিকা দেখতে পাইনি। তাই তাদেরকে সতর্ক ও জরিমানাও করা হয়েছে। জরিমানার পরও বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে আমরা জানতে পেরেছি।'
'সমস্যা হলো, আমরা যতক্ষণ থাকি সব ঠিক থাকে। আমরা চলে যাওয়ার পর সব আগের মত হয়ে যায়। ব্যাপারটা দুঃখজনক। তবে আমরা অভিযোগ পেলেই অভিযান পরিচালনা করছি,' বলেন তিনি।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (স্টাফ অফিসার টু ডিসি) পীযুষ কুমার চৌধুরী বলেন, 'ভোগ্যপণ্যের বাজার মনিটরিংয়ের পাশাপাশি আমরা কিন্তু দূরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলোতে অভিযান পরিচালনা করছি। ভাড়ার তালিকা না থাকায় এর আগেও আমরা বিভিন্ন কাউন্টারকে জরিমানা করেছি। তবে বাড়তি ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে কেউ যদি আমাদের কাছে অভিযোগ করে অবশ্যই আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিবো।'