ডেসটিনির রফিকুল আমিনের ১২, জেনারেল হারুনের ৪ বছরের কারাদণ্ড
ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমিনকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
সেইসাথে, ডেসটিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান হারুন-উর-রশিদকেও ৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
বৃহস্পতিবার (১২ মে) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ রায় ঘোষণা করেন।
২০১২ সালের ৩১ জুলাই ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমিন ও গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ ৫৩ জনকে আসামি করে কলাবাগান থানায় দুটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, বিনিয়োগকারীদের ৩ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা পাচার করেছে ডেসটিনি। অন্য অভিযোগটি ডেসটিনির বৃক্ষ রোপণ প্রকল্পের ১ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে দায়ের করা হয়।
রফিকুল আমিন ২০১২ সালে দুদকের দায়ের করা মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
এরপর ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট এ দুটি মামলায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
ডেসটিনির শুরুটা যেভাবে
১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো ব্যবসার মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) মডেলের ধারণাটি বাংলাদেশে নিয়ে আসে গ্লোবাল গার্ডিয়ান নেটওয়ার্ক (জিজিএন)।
একপর্যায়ে সরকার প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে জিজিএন-এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। এই জিজিএন এর প্রথম গ্রাহক ছিলেন রফিকুল আমিন।
জিজিএন বন্ধ হওয়ার পর রফিকুল আমিনই ২০০০ সালে ডেসটিনি প্রতিষ্ঠা করেন।
১২ লাখ টাকা মূলধন নিয়ে যাত্রা শুরু করার পর ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড পরবর্তী এক দশকে উচ্চ মুনাফার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণের কাছ থেকে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করে। কোম্পানিটির ব্যবসা শুরু থেকেই সন্দেহজনক হওয়া সত্ত্বেও তারা দীর্ঘ সময়ের জন্য কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিল।
নিয়ন্ত্রক অথবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরদারি এবং পদক্ষেপের অভাবে রফিকুল আমিন সহজেই সারাদেশে ডেসটিনির বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হন।
সংগঠনের অবৈধ কর্মকাণ্ডে লাগাম টানতে সরকারি কোনো উদ্যোগ না থাকায় ডেসটিনির নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করতে তৎকালীন প্রভাবশালী মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, অবসরপ্রাপ্ত শীর্ষ সামরিক ও বেসামরিক আমলাদের সহায়তা পান রফিকুল আমিন।
এমনকি কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিকে তিনি তার ব্যবসায়িক অংশীদার বানিয়েছিলেন।
২০১২ সালে ডেসটিনির বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য সামনে আসতে শুরু করে। কোম্পানিটির বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়।
একই বছর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযোগের তদন্ত শুরু করে এবং রাজধানীর কলাবাগান থানায় দুটি মামলা করে।
ওই বছরের ২৭ নভেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ডেসটিনি গ্রুপের সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেন এবং পুলিশকে সেগুলো দেখাশোনার দায়িত্ব দেন।
এরপর থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ঢাকায় ডেসটিনির সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ করছে। অন্যদিকে রাজধানীর বাইরে কোম্পানির সম্পদ জেলা পুলিশ সুপারদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
২০১২ সালে সরকার ডেসটিনির গ্রাহকদেরকে তাদের অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও এ বিষয়ে পরবর্তীতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।