অবৈধ পার্কিং আর পুলিশের ডাম্পিং গাড়িতে দখল মোহাম্মদপুর রিং রোড
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রিং রোডের অধিকাংশ অংশ জুড়েই দখল হয়ে আছে অবৈধ গাড়ি পার্কিং ও আদাবর থানার ডাম্পিং করা যানবাহনে। এতে মানুষের চলাচলসহ বাস ও অন্যান্য যানবাহন চলাচলে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শ্যামলী স্কয়ার থেকে মোহম্মদপুর শিয়া মসজিদ মোড় পর্যন্ত রিং রোডের রাস্তার অবস্থা বেহাল ছিল।
উত্তর সিটি করপোরেশন এ রাস্তাটি সুপ্রশস্ত করে উন্নয়ন করে ফুটপাত তৈরী করলেও তার সুফল পাচ্ছে না মানুষ।
উত্তর সিটি করপোরেশন বলছে তারা কয়েক দিন পরপর রাস্তাটির অবৈধ পার্কিং এর বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে, তবে সমাধান মিলেনি এতে।
অন্যদিকে, এ রাস্তাটির সাথেই একটি ভাড়া করা ভবনে আদাবর থানার কার্যক্রম চালিয়ে আসছে বাংলাদেশ পুলিশ। থানা কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের আলাদা কোনো স্থান বরাদ্দ না থাকায় থানার সামনেই ডাম্পিং এর গাড়ি রাখতে হচ্ছে। এছাড়া ভবনে পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও নেই।
এ স্থান থেকে থানা ভবন স্থানান্তর করে অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে আদাবর থানা।
মোহাম্মদপুরে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের বসবাস। আশির দশকের পর থেকে নানা কারণে এ এলাকার গুরুত্ব বাড়তে থাকে।
এখানে বিলাসবহুল ভবনের পাশাপাশি গড়ে উঠেছে দোকানপাট, ব্যাংক-বীমা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ক্লিনিক-হাসপাতাল, ছোট-বড় শপিংমল, ফাস্টফুডের দোকান।
যানবাহনের চাপও বাড়ছে দিন দিন। আর এ এলাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মোহাম্মদপুর রিং রোড। রাস্তার পাশে অবৈধ গাড়ি পার্কিং ও যত্রতত্র গণপরিবহন থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানোয় এতো প্রশস্ত রাস্তাতেও সৃষ্টি হয় যানজটের।
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা রেহানা বেগম টিবিএসকে বলেন, "কিছুদিন আগে রাস্তা ও ফুটপাতের উন্নয়ন কাজ হলেও আমরা এখনো স্বাচ্ছন্দে হাঁটতে পারি না। ফুটপাতের উপরে দোকান, পুলিশের ডাম্পিং করা গাড়ি। রাস্তার অর্ধেক দখলে থাকে অবৈধ পার্কিংয়ে।"
"মাঝে মাঝে এমনও হয় ১৫/২০ মিনিট আটকে থাকতে হয় যানজটে। তবে সামনে গিয়ে দেখা যায় বাস দাড়িয়ে যাত্রী তুলছে তাই জ্যাম লেগে আছে।"
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানিব হাসান টিবিএসকে বলেন, "মোহাম্মদপুরে যানজট লেগেই থাকে। এখানে বাস থেকে যাত্রী তুলথে কিংবা নামাতে কোনো আইন মানে না। রাস্তা আটকিয়ে দাড়িয়ে থাকে বাসগুলো। এছাড়া ভবনগুলোর সামনে অবৈধ পার্কিং তো আছেই।"
সম্প্রতি 'রিং রোড' এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, এ রাস্তার পাশেই টোকিও স্কয়ার, ইনফিনিটি মেগা মল, সূচনা কমিউনিটি সেন্টারসহ বেশ কয়েকটি শপিং সেন্টার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শপিং সেন্টারেই নেই পর্যাপ্ত পার্কিং ব্যবস্থা।
ফলে এসব শপিং সেন্টারে আসা অধিকাংশ ব্যক্তিগত গাড়ি, মটরসাইকেলই রাখা হয় রাস্তার উপরে। যদিও প্রায় সব ভবনের সামনেই 'পার্কিং নিষেধ' সম্বলিত সাইনবোর্ড রয়েছে।
জাপান গার্ডেন সিটির সামনেই রয়েছে ভূইয়া পরিবহন ও আলিফ পরিবহনের স্টপেজ। এখানের রাস্তার প্রায় দুই তৃতীয়াংশ স্থান দখল করে পার্কিং করা থাকে এ পরিবহন দুটির অন্তত ৩০ টি বাস। সড়কের যত্রতত্র বাস দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো হয় রাত ১১টা পর্যন্ত।
ভূইয়া পরিবহনের চালক হাসমত আলী টিবিএসকে বলেন, "আমাদের এখানে স্টপেজ তাই বাসগুলো এখানে রাখি। রাত ১১ টা পর্যন্ত টোকিও স্কয়ারের সামনে বাস থাকে।
শুনেছি গাড়ির মালিক জায়গা কিনেছে স্টপেজের জন্য পার্কিংয়ের জন্য, তাই আমাদের কোনো টাকা দিতে হয় না।"
আলিফ পরিবহনের চালক রুবেল টিবিএসকে বলেন, "আমাদের গাড়ি ছেড়ে আসার সময় যাত্রী কম থাকে বলে এ রাস্তাটিতে একটু সময় নিয়ে অপেক্ষা করি। অন্য গাড়ি সামনে চলে গেলে যাত্রী সে পেয়ে যাবে তাই মাঝে মাঝে ২/১ মিনিট আটকিয়ে রাখি পেছনের বাস।"
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদ টিবিএসকে বলেন, "আমরা রাস্তায় অবৈধ পার্কিং এর বিরুদ্ধে নিয়মিতই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আসছি। এতে অনেককে জরিমানাও করা হয় কিন্তু সার্বক্ষনিক খোঁজ রাখা তো সম্ভব না।"
আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাজী শাহিদুজ্জামান টিবিএসকে বলেন, "আমাদের যেহেতু সরকারি প্রতিষ্ঠান সেহেতু আমাদের গাড়িগুলো রাস্তার উপরেই রাখতে হয়। এখানে আমাদের গাড়ি রাখার অন্য কোনো জায়গা নেই।"
"তবে আমরা দ্রুত চেষ্টা করছি এখানের ভাড়া ভবন থেকে অন্য কোথাও স্থানান্তরের জন্য, তখন ডাম্পিং গাড়িগুলো সরিয়ে নেওয়া হবে," বলেন তিনি।
এছাড়া এ রাস্তার উপর বাসসহ অন্য গাড়ি অবৈধভাবে পার্কিং করার বিষয়ে তিনি বলেন, "আমরা বিভিন্ন সময় অবৈধ পার্কিং এর বিরুদ্ধে অভিযান চালাই। তখন আমরা তাদের বিরুদ্ধে অর্থ জরিমানাসহ বিভিন্ন দন্ডে দন্ডিত করে থাকি। জাপান গার্ডেন সিটির সামনে ভূইয়া ও আলিফ গাড়ির স্টপিজ থাকায় ওখানে কিছু গাড়ি রাখা থাকে তবে তারা রাস্তা দখল করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"