অপুষ্টিতে রুগ্ন শিশুদের কেন্দ্রস্থল দক্ষিণ এশিয়া, জানালো ইউনিসেফ
দক্ষিণ এশিয়াকে অপুষ্টিতে ভোগা রুগ্ন শিশুদের 'কেন্দ্রস্থল' হিসেবে উল্লেখ করেছে ইউনিসেফ। এ ধরনের শিশুদেরকে সিভিয়ারলি ওয়েস্টেড শিশু বলা হয়।
উচ্চতার তুলনায় ওজন ও স্বাস্থ্যের দিক থেকে কৃষকায় বা ভগ্ন স্বাস্থ্যের শিশুদেরকে ওয়েস্টেড শিশু হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এসব শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশ দুর্বল থাকে। অপুষ্টির সবচেয়ে তাৎক্ষণিক, দৃশ্যমান এবং গুরুতর রূপ ওয়েস্টেড শিশুরা।
মঙ্গলবার ইউনিসেফ জানায়, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় ২২টি শিশুর মধ্যে ১ জন সিভিয়ারলি ওয়েস্টেড; যা সাব-সাহারান আফ্রিকার চেয়ে তিনগুণ বেশি।
ইউনিসেফের তালিকার শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে রয়েছে রয়েছে বাংলাদেশের নামও। এই দেশগুলোতে ৫ বছরের কম বয়সী ওয়েস্টেড শিশুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
তবে, বাংলাদেশের অবস্থা ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে ভালো।
তালিকায় পঞ্চম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশে ওয়েস্টেড শিশুর সংখ্যা ৩ লাখ ২৭ হাজার ৮৫৯।
অন্যদিকে, সবচেয়ে বেশি ওয়েস্টেড শিশু নিয়ে তালিকার শীর্ষস্থানে রয়েছে ভারত। দেশটিতে ওয়েস্টেড শিশুর সংখ্যা ৫৭ লাখ ৭২ হাজার ৪৭২। এছাড়া, ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৯২৫ জন ওয়েস্টেড শিশু নিয়ে তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান।
বিশ্বব্যাপী কমপক্ষে ১০ মিলিয়ন ওয়েস্টেড শিশুর (৩ জনের মধ্যে ২ জন) রেডি টু ইউজ থেরাপিউটিক ফুড (আরইউটিএফ) এর অ্যাক্সেস নেই৷
নতুন প্রতিবেদনে ইউনিসেফ আরও বলে, ইউক্রেন যুদ্ধের আগেও গুরুতরভাবে ওয়েস্টেড শিশুর সংখ্যা বাড়ছিল। বর্তমানে এটি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত, 'সিভিয়ার ওয়েস্টিং: অ্যান ওভারলুকড চাইল্ড সারভাইভার ইমারজেন্সি' শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ওয়েস্টেড শিশুর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসার ব্যয় বাড়তে থাকার পাশাপাশি ওয়েস্টিং এর শিকার শিশুদের জীবন বাঁচাতে বিশ্বব্যাপী অর্থায়নও হুমকির মুখে রয়েছে।
বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সী কমপক্ষে ১৩.৬ মিলিয়ন শিশু সিভিয়ার ওয়েস্টিং এর শিকার। পাঁচ বছরের কম বয়সী ৫ জন শিশুর মধ্যে ১ জনের মৃত্যুর কারণও এটি।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেন, "ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তার উপর চাপ সৃষ্টি করার আগেও, সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং কোভিডের কারণে ইতোমধ্যেই অনেক পরিবার তাদের সন্তানদের খাদ্য নিশ্চিত করার ক্ষমতা হারিয়েছে।"
ইউনিসেফের অনুমান, কাঁচামাল উপাদানের দাম বাড়ার কারণে আগামী ছয় মাসের মধ্যে রেডি টু ইউজ থেরাপিউটিক খাদ্যের দাম ১৬ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে।
ফলে, আরও ৬ লাখ শিশু ওয়েস্টিং এর শিকার হতে পারে বলে অনুমান করছে সংস্থাটি।
এছাড়া, শিপিং এবং ডেলিভারি খরচও বাড়তে থাকবে বলে আশঙ্কা করছে তারা।
"প্রতি বছর লাখ লাখ শিশুর জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে থেরাপিউটিক খাদ্যগুলি। বিশ্বব্যাপী খাদ্য বাজারের পরিপ্রেক্ষিতে এর ১৬ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণযোগ্য মনে হতে পারে। কিন্তু সেই সরবরাহ চক্রের অপর প্রান্তে রয়েছে অপুষ্টির শিকার এক শিশু।"
চাইল্ড অ্যালার্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, উগান্ডার মতো আপেক্ষিক স্থিতিশীল দেশগুলোতেও ২০১৬ সাল থেকে শিশু অপচয়ের পরিমাণ ৪০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য এবং পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার কারণে তা ঘটছে বলে উল্লেখ করে ইউনিসেফ।
তীব্র খরা এবং পরিষ্কার পানি ও স্যানিটেশনের পর্যাপ্ত অ্যাক্সেস না থাকাসহ জলবায়ু-সম্পর্কিত প্রভাবে ওয়েস্টেড শিশুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়েস্টিং এর জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্যের পরিমাণ খুবই কম এবং এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরও কমবে। এতে করে, ২০২৪ সালের আগে মহামারির পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা কম বলে উল্লেখ করে ইউনিসেফ।
- সূত্র- ইউএনবি