মাতামুহুরী সংরক্ষিত বনে অবমুক্ত হলো উদ্ধারকৃত ভাল্লুক ছানা
বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার মাতামুহুরী সংরক্ষিত বনে একটি ভাল্লুক ছানা অবমুক্ত করা হয়েছে। প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশবাদী সংগঠন 'সেইভ দ্য দ্য নেচার অব বাংলাদেশ' এর কর্মীরা স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে ছানাটি উদ্ধার করে বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করার পর শনিবার অবমুক্ত করা হয় বলে জানিয়েছে বনবিভাগ।
বনবিভাগের আলীকদম উপজেলার মাতামহুরী রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কাশেম জানান, ১৯ মে স্থানীয় কিছু পরিবেশ কর্মী এক ব্যক্তির কাছ থেকে উদ্ধার করে ভাল্লুক ছানাটিকে নিয়ে আসে। দুদিন বনবিভাগের হেফাজতে থাকার পর ২১মে সেটিকে মেনদোন ম্রো পাড়ার পাশে মাতামহুরী সংরক্ষিত বনে অবমুক্ত করা হয়।
'সংরক্ষিত বনের যে অংশে অবমুক্ত করা হয় সেখানে আগে থেকে ভাল্লুক আছে। আশপাশে কোন লোকজনের নজরে আসারও সুযোগ নেই। সেখানে ভাল্লুক ছানাটি নিরাপদে থাকতে পারবে। বনবিভাগের অধীনে বন্যপ্রাণি নিয়ে কাজ করা আলাদা বিশেষজ্ঞ দল থাকলেও তারা বান্দরবানে নেই।' দলটি চট্টগ্রামে রয়েছে বলে জানান বনবিভাগের এই কর্মকর্তা।
ভাল্লুক ছানা উদ্ধারকারী সলোমন ম্রো বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার বাসিন্দা। তিনি পরিবেশ ও প্রাণ-প্রকৃতি নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'সেইভ দ্য নেচার অব বাংলাদেশ' এর কর্মী।
বুধবার (২৫ মে) দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে সলোমন ম্রো বলেন, 'এক সপ্তাহ আগে থানচির মংক্যউ পাড়ার এক মারমা ব্যক্তির কাছ থেকে ঘরে পালার কথা বলে আলীকদমের একজন ম্রো ব্যক্তি পনের হাজার টাকায় একটি ভাল্লুক ছানা কিনে নিয়ে আসে। এটা জানার পর তাকে বুঝিয়ে আমরা তার কাছ থেকে ছানাটি উদ্ধার করে বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করি। ভাল্লুক ছানাটির বয়স আনুমানিক পাঁচ থেকে ছয় মাস হবে।'
পরে বনবিভাগের লোকজন ভাল্লুক ছানাটিকে মাতামুহুরী সংরক্ষিত বনে অবমুক্ত করেন। 'আলীকদমের বিভিন্ন বনজঙ্গলে এখনও কয়েক প্রজাতির ভাল্লুক টিকে আছে। আগের মত ঘন বনজঙ্গল না থাকায় তারা অনেক সময় লোকালয়ে চলে আসে। আর এই সুযোগে একটি অসাধু চক্র চড়া দামে কিনে বাইরে পাচার করে'- জানান পরিবেশ কর্মী সলোমন ম্রো।
সলোমন ম্রো আরও বলেন, ঘরে পালার কথা বলে যিনি পনের হাজার টাকায় ভাল্লুক ছানাটি কিনে নিয়ে আসেন তাকে বনবিভাগের পক্ষ থেকে কিছু টাকা দেওয়া হবে। আগামী সোমবার তাকে বনবিভাগের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
এদিকে আলীকদমের আরও কয়েকটি জায়গায় বিপন্ন প্রজাতির হনুমান, ভাল্লুক ও কাছিম পাচার হওয়ার অপেক্ষায় আছে এমন খবর পেয়ে বনবিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়েছে বলে জানান 'সেইভ দ্য নেচার অব বাংলাদেশ' এর সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন রিয়াদ।
এসব ব্যাপারে কাজ করতে বুধবার আলীকদমে নিজেই এসেছেন জানিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে মোয়াজ্জেম হোসেন রিয়াদ বলেন, 'ইতিমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি আলীকদমে কোন একটি জায়গায় আরও তিনটি ভাল্লুক ধরা পড়েছে। তার মধ্যে দুটি চট্টগ্রামে রিয়াজউদ্দিন বাজারের এক ব্যবসায়ী কিনে নিয়েছেন খবর পেয়েছি। এগুলো উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় সোর্স লাগানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও জানানো হয়েছে।'
আলীকদম উপজেলায় কয়েকটি অসাধু চক্র বিভিন্ন সময় বন্যপ্রাণি পাচার করে থাকে। এখানে বন্যপ্রাণি নিয়ে একটি ভয়াবহ ধ্বংসজজ্ঞ চলছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এগুলো বাইরে পাচারও হয়ে থাকে। বনবিভাগের মধ্যে আলাদাভাবে বন্যপ্রাণি নিয়ে কাজ করা ও দেখভাল করার জন্য কেউ না থাকায় এখানকার বন্যপ্রাণির বেশি ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান পরিবেশ কর্মী মোয়াজ্জেম হোসেন রিয়াদ।