‘লাশের উপর দিয়ে হেঁটে এসেছি’
"বিস্ফোরণের শব্দটা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই মনে হলো কানটা ফেটে গেছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই আছড়ে পরলাম কাভার্ডভ্যানের ক্যারিয়ারে। এরপর পড়িমড়ি করে দৌড়াতে শুরু করলে দেখি পায়ের নিচে শুধু লাশ আর লাশ। সেই লাশের উপর দিয়ে হেঁটে বেঁচে এসেছি", চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডের ৪১ নং বেডে চিকিৎসাধীন কাভার্ডভ্যান চালক সুমন (৩০) কথাগুলো বলছিলেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে।
আরেক গাড়িচালক মোহাম্মদ তোফায়েল জানান, তিনি মালের চালান নিয়ে রাত আটটার দিকে ডিপোতে প্রবেশ করেন। গাড়ি থেকে মাল খালাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। রাত প্রায় ৯ টার দিকে হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি উড়ে গিয়ে গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা খান। এসময় তার মুখমন্ডল জ্বলছিলো। পরে জ্ঞান ফিরলে নিজেকে হাসপাতালে বেডে আবিষ্কার করেন।
এই মুহূর্তে এমনই বীভৎস সব অভিজ্ঞতায় ভরা চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকার কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে আহত শ্রমিকদের মন।
শুরুতে সীতাকুণ্ডের কুমিরা স্টেশনের ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে অংশ নিয়েছেন। এরপর দমকল কর্মীরা আহত হওয়ার পর আগ্রাবাদ, বায়েজিদ, বন্দর, কালুরঘাট, হাটহাজারী, সীতাকুন্ড, মিরসরাই, ফেনী সোনাগাজী স্টেশন ফায়ার সার্ভিসের ২৪টি ইউনিট উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। এছাড়া পুলিশ, র্যাব, আনসার, রেড ক্রিসেন্টের ভলান্টিয়াররাও অংশ নিয়েছিলেন উদ্ধার অভিযানে।
এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকার কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৩৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। এদের মধ্যে রয়েছে ফায়ার সার্ভিসের তিনজন সদস্য।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্যের পায়ের গোড়ালি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া ৯ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৭ জন শিল্প পুলিশ এবং ২ জন সীতাকুণ্ড থানার। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কুমিরা স্টেশনের ১৪ কর্মী আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক শাহজাহান শিকদার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আগুন নেভাতে গিয়ে আমাদের আহত হয়েছেন ১৪ জন।"
চমেক বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান রফিক উদ্দিন আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "হাসপাতালের বার্ন ইউনিট ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি হওয়া ৫০ শতাংশ রোগীই আশঙ্কাজনক। স্থান সংকুলান না হওয়ায় বেশ কয়েকজন রোগীকে অন্যান্য ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে।"
সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, "যাদের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে তাদের জন্য সামনে আইসিইউ প্রয়োজন হবে। কারণ সকাল হতেই পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। এ জন্য বেশ কয়েকটি বেসরকারী হাসপাতালকে আইসিইউ রেডি রাখার জন্য বলা হয়েছে। অন্যদিকে, বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে ১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের কারো হাত নেই, আবার কারো পা নেই। একজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অন্যদের অভিভাবকদের যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।"