সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ: আর্থিক ক্ষতি ১ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা
সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে প্রায় ১ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা ক্ষতির কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) ও ফায়ার সার্ভিস। এর মধ্যে পোশাক রপ্তানি খাতের উদ্যোক্তাদের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪০০ কোটি টাকার বেশি বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ।
বিজিএমইএর সহসভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বিএম কনটেইনার ডিপোতে যাদের পণ্য ছিল, তাদের তথ্য দিতে বলা হয়েছিলো। শনিবার দুপুর পর্যন্ত আমাদের ১২৮ ইউনিট থেকে মোট ৪০ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৩৭৭ কোটি টাকা)-এর মালামালের ক্ষতি হয়েছে বলে রিপোর্ট করেছে। পুরো হিসাব পেলে ক্ষতির পরিমাণ ৪০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।'
তিনি বলেন, 'চট্টগ্রামের রপ্তানিকারকদের মধ্যে ফোর এইচ গ্রুপ, প্যাসিফিক জিনস, ক্লিপটন, এশিয়া গ্রুপের রপ্তানির পণ্যের চালান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া প্রাণ ও অনন্ত গ্রুপের রপ্তানি পণ্য ছিল।'
এদিকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত সীতাকুণ্ড থানায় এ–সংক্রান্ত ৮টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের হয়েছে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন সীতাকুণ্ড থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফ সিদ্দিকী।
এর মধ্যে বিটপী গ্রুপের দুটি পোশাক কারখানার ৭ লাখ ৭৭ হাজার ডলারের তৈরি পোশাক পুড়ে গেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। মেট্রো নিটিং এন্ড ডাইং লিমিটেডের ক্ষতির পরিমাণ ৩ লাখ ১৩ হাজার ডলার, এপেক্স লনজারে লিমিটেডের ১ লাখ ৯০ হাজার ডলার, এপেক্স টেক্সটাইল এন্ড প্রিন্টিং লিমিটেডের ৪২ হাজার ৪০০ ডলার, পারাপার শিপিংয়ের ক্ষতির পরিমাণ ৫৬ হাজার ২৩০ ডলার বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ক্লিপটন গ্রুপ ও লিংডে পৃথক তিনটি জিডিতে পণ্য ধ্বংসের কথা জানালেও ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করেনি।
বিটপী গ্রুপের রপ্তানি ব্যবস্থাপক (এক্সপোর্ট ম্যানেজার) কামরুল হাসান জানান, সীতাকুণ্ডের আগুনে তাদের গ্রুপের রেমি হোল্ডিংসের ১ লাখ ৪৭ হাজার ডলার ও তারাসিমা অ্যাপারেলসের ৬ লাখ ৩০ হাজার ডলারের তৈরি পোশাক পুড়েছে।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, যেসব পোশাক কারখানা মালামাল ক্ষতির হিসাব পাঠিয়েছে, তাদের মধ্যে জেএফকে ফ্যাশন, একেএইচ নিটিং অ্যান্ড ডায়িং, ভার্সেটাইল টেক্সটাইল, ভিশন অ্যাপারেলস, ইমপ্রেস-নিউটেক্স কম্পোজিট টেক্সটাইলস, আয়শা ক্লথিং, ভ্যানগার্ড গার্মেন্টস, অ্যারো ফেব্রিকস, ডিভাইন ইনটিমেটস, প্যাসিফিক জিনস, সি ব্লু অ্যান্ড সি টেক্স টেক্সটাইল, রিও ফ্যাশনওয়্যার অন্যতম। এসব পোশাকের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে মূলত সুইডেনভিত্তিক বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম, ডাচ ব্র্যান্ড সিঅ্যান্ডএ, যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেট, পিভিএইচ এমবিএইচ, বেস ও ফেম এলএলসি এর মতো প্রতিষ্ঠান।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, 'রপ্তানিকরণের জন্য আমাদের বেশকিছু খাদ্যপণ্যের চালান বিএম কনটেইনার ডিপোতে ছিলো। এ পর্যন্ত যতটুকু জেনেছি, তাতে প্রায় ২৫ কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছি।'
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) তথ্যমতে, আগুন লাগার সময় বিএম ডিপোতে চার হাজার ৩১৮ একক কনটেইনার ছিল। এর মধ্যে ২,৮৯৭টি ছিল খালি কনটেইনার। বাকি ৮৬৭টি কনটেইনারে ছিল রপ্তানি পণ্য আর ৫৫৭টি কনটেইনারে ছিল আমদানি পণ্য।
বিকডা সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিকদার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সাধারণত প্রতি ২০ ফুটের কনটেইনারে ৫০ লাখ ও ৪০ ফুটের কনটেইনারে এক কোটি টাকার পণ্য থাকে। সেই হিসাবে কনটেইনারে থাকা রপ্তানি পণ্যের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার। পুড়ে যাওয়া ওয়্যারহাউসে ছিল আরও প্রায় ৩০০ কোটি টাকার রপ্তানি পণ্য। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪০০ কোটি টাকার আমদানি পণ্যও। পুড়ে যাওয়া ৪০০ কনটেইনারের দাম ৪০ কোটি; এর সঙ্গে ডিপো কর্তৃপক্ষের ক্ষয়ক্ষতি ৩০০ কোটি টাকার বেশি।'
এসব হিসাবের বাইরে সীতাকুণ্ডের বিস্ফোরণে ও আগুনে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, কাভার্ড ভ্যান, কনটেইনার পরিবহনকারী গাড়ি ও আশপাশের ২ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা প্রায় ১০০ বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অক্ষত পণ্যগুলোর দ্রুত শিপমেন্টের ব্যবস্থা করা জরুরী জানিয়ে বিজিএমইএর সহসভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, 'আমরা চাচ্ছি অক্ষত পণ্যগুলো দ্রুত শিপমেন্টের ব্যবস্থা করতে। কারণ, এসব কনটেইনার রপ্তানি করা না গেলে রপ্তানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যত দ্রুত সম্ভব বিএম ডিপো থেকে পণ্যগুলো অন্য ইয়ার্ডে নিয়ে সেখান থেকে জাহাজীকরণের ব্যবস্থা করতে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান ও কাস্টমসকে মৌখিকভাবে অনুরোধ করেছি, যাতে রপ্তানিকারকদের পেমেন্ট নিয়ে কোনো জটিলতা না হয়।'