বান্দরবানের থানচিতে ডায়রিয়ায় ৯ জনের মৃত্যু
বান্দরবানের থানচি উপজেলার দুর্গম রেমাক্রি ইউনিয়নে কয়েকটি পাড়ায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এপর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে রোববার পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
মৃত্যর সংখ্যা বেড়ে এখন ৯ জনে দাঁড়িয়েছেন বলে বুধবার (১৫ জুন) বিকেলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতা (ইউএইচএফপিও) ডা. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ।
তিনি বলেন, দুর্গম রেমাক্রি ইউনিয়নে বড়মদকের থেকে উচ্চতায় অবস্থিত বিভিন্ন পাড়ায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আজ বুধবার পর্যন্ত ৯ জন মারা গেছে বলে নিশ্চিত হয়েছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সমন্বয় করার জন্য বুধবার দুপরে চার ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও পাড়ার কারবারীদের নিয়ে একটি জররি সভা হয়েছে। সেখানে জেলা সিভিল সার্জন ও জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য বিষয়ক আহবায়কও উপস্থিত ছিলেন।
''এলাকাটি বেশ দুর্গম হওয়ায় রোগ বিস্তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি এখনও অস্থিতিশীল রয়েছে। দুর্গমতার কারণে রোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসে চিকিৎসা করানোও যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য বিভাগের কয়েকটি টিম ছাড়াও কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) ও এলাকার কিছু স্বেচ্ছাসেবকরাও জররি সেবা দিয়ে যাচ্ছে।"
এদিকে বুধবার দুপুড়ে থানচিতে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় ডায়রিয়া প্রাদুর্ভাবে আক্রান্ত অঞ্চলের কাছাকাছি ম্রংওয়া এলাকায় পরিস্থতি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত একটি ফিল্ড হাসপাতাল (সাময়িক) করার সিন্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন নীহার রঞ্জন নন্দী।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নীহার রঞ্জন নন্দী বলেন, ''দুর্গম হওয়ায় যেহেতু রোগীদের উপজেলা সদরে নিয়ে এসে চিকিৎসা করানো যাচ্ছে না- সে কারণে আক্রান্ত এলাকার কাছাকাছি এলাকায় ম্রংওয়া নামের একটা জায়গায় একটি ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করা হবে। সেখানকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মেম্বার, কারবারী, হেডম্যান ও বিজিবি সদস্যদের সহযোগিতায় এই ফিল্প হাসপাতালটি জররি-ভিত্তিতে করা হবে।"
থানচি উপজেলার সবচেয়ে দুর্গম এলাকা রেমাক্রি ইউনিয়ন। এলাকাটি সম্পূর্ণ মোবাইল নেটওয়ার্কবিহীন। নৌপথই থানচি সদর থেকে সেখানে যাওয়ার একমাত্র উপায়। ইঞ্জিনচালিত ছোট নৌকায় মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকা বড়মদক বাজারে পৌঁছাতে সময় লাগে চার ঘন্টা। নৌকায় বড়মদক থেকে আরও এক ঘন্টার দূরত্বে ডায়রিয়া আক্রান্তদের এলাকা।
দুর্গত এলাকা থেকে ফিরে রেমাক্রি ইউপি ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মাংচং ম্রো বুধবার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, মূলত তার ওয়ার্ডের ছয়টি পাড়া য়ংনং পাড়া, সিংচং পাড়া, পাকতোয়া পাড়া, নারেশা লংঙান পাড়া, মেনতান পাড়া ও নেপিউ পাড়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। এই কয়েকটি পাড়ায় এখনও পর্যন্ত ৮০ জনের মত ডায়রিয়া রোগী রয়েছে।
দিন যত যাচ্ছে আক্রান্তদের অবস্থা আরও অবনতি হচ্ছে। খাবার স্যালাইন ও কিছু ঔষধপত্র নিয়ে আজকে আবারও এলাকায় ফিরে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এই জনপ্রনিধি।
রেমাক্রি ইউপি চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা বলেন, তার ইউনিয়নে ৬, ৮ ও ৯ নম্বর তিনটি ওয়ার্ড এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপটা বেশি। অন্যান্য ওয়ার্ডে দুই একজন করে রোগী রয়েছে। ফিল্ড হাসপাতালের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া শুরু হলে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। বিভিন্ন এলাকায় ম্যালেরিয়া রোগীও রয়েছে। তাদের জন্য আজ থেকে মশারিও বিতরণ করা হচ্ছে।
আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) সকালে উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আরেকটি মেডিকেল টিম দুর্গত এলাকায় চিকিৎসা সেবা প্রদানে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ডায়রিয়া আক্রান্ত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সংকট রয়েছে। এছাড়া এই সময়ে বৃষ্টি হলে পাহাড়ে সব ময়লা-আবর্জনা ঝিরি-ঝর্ণায় গিয়ে পড়ে। এসব থেকে সংগ্রহ করা পানি ফুটিয়ে পান করার কারণে ডায়রিয়া রোগের প্রার্দুভাব দেখা দেয়।