সুনামগঞ্জে যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত বিচ্ছিন্ন, আটকা পড়েছেন ৩ শতাধিক পর্যটক
টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরতে গিয়ে পানিবন্দী হয়ে আটকা পড়েছেন ৩০০ এর বেশি পর্যটক। যাদের বড় একটি অংশ সুনামগঞ্জ শহরের পানসী রেস্টুরেন্টের দুই তলায় অবস্থান করছেন।
ইতোমধ্যে ২/৩শ পর্যটককে উদ্ধার করে নিজ নিজ গন্তব্য পাঠিয়েছে টুরিস্ট বুট এসোসিয়েশন।
জাহাজি দ্যা কিং অফ ট্যাঙ্গুয়ার মালিক বিজয় কুমার ঘোষ জানান, "বৃষ্টির ভয়াবহতা দেখে আমাদের বোটগুলোর যাত্রা বাতিল করে দিয়েছি ১৫ তারিখ। তারপরেও কিছু অতি উৎসাহী ট্যুরিস্ট সুনামগঞ্জ আসে। পরে তারা বিভিন্ন স্পটে আটকা পরে।"
"আমাদের রেসকিউ টিম তাদের বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার করে। বালু বোঝাই বল্কহেড দিয়ে আমাদের ই ট্যুরিজম এসোসিয়েশনের তত্ত্বাবধানে মোহনগঞ্জ হয়ে ঢাকা পাঠানো হয় তাদেরকে," বলেন তিনি।
আজ সকালেও ৯ জনকে অন্য দুটি হোটেল থেকে উদ্ধার করেছেন তারা।
এছাড়া ওয়াচ-টাওয়ার, টেকেরঘাট, তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ থেকে তারা ২০০ থেকে ৩০০ জন পর্যটক উদ্ধার করেছেন বলে জানান। কয়েকটি দলকে হাওড় থেকেও উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে বেশিরভাগই ১৫-১৬-১৭ তারিখে এই অঞ্চলে আসে বলে জানান তিনি।
"আমাদের সকল ট্যুরিস্ট বোট সম্পূর্ণ বিনা খরচে উদ্ধার অভিযানে কাজ করছে। এখনো অনেক ট্যুরিস্ট আটকা আছেন।"
বিজয় কুমার জানান, এখনো তিনশোরও বেশি পর্যটক আটকা আছেন। তবে, পর্যটকদের সঠিক হিসাব দিতে পারেন নি তিনি।
ট্যুরিস্ট বোট এসোসিয়েশন অফ সুনামগঞ্জের প্রায় ৭০টি বোট ও শতাধিক সেচ্ছাসেবী কাজ করে যাচ্ছে আটকে পড়া মানুষের উদ্ধারে।
এদিকে আটকে পড়াদের একটি অংশ না খেয়ে আছেন দুইদিন ধরে। নেটওয়ার্ক না থাকায় কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা।
ইকবাল হোসেন গত বৃহস্পতিবার আরো কয়েকজন বন্ধুদের নিয়ে মৌলভীবাজার থেকে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে যান ৫টি মটর সাইকেল নিয়ে। গিয়ে আটকা পড়েন সুনামগঞ্জে। গতরাতে এই প্রতিবেকের সাথে কথা বলেন তিনি।
ইকবাল জানান, সুনামগঞ্জের পুলিশ লাইনে তারা দাঁড়িয়ে আছেন দুইদিন যাবত। তাদের সাথে থাকা মটরসাইকেলগুলো চোখের সামনে পানির নিচে ডুবে আছে। তারা বসার জায়গাও পাচ্ছেন না। নেই খাবার এবং পানি। তিনি প্রতিবেদককে অনুরোধ জানান, যেভাবেই হোক একটু খাবারের ব্যবস্থা করতে।
একই অবস্থা ঢাকা থেকে ঘুরতে যাওয়া ১৬ জনের আরেকটি দলের। তারা ২ দিন ধরে সুনামগঞ্জের দিরাই রাস্তার মুখে একটি জায়গায় অবস্থান করছেন। সাথে টাকা আছে, কিন্তু ফিরতে পারছেন না। করতে পারছেন না খাবারের ব্যবস্থাও।
তাদেরকে উদ্ধার করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সিলেটের বাসিন্দা, তাদের বন্ধু লেখক বিমান ধর।
বিমান ধর বলেন, "আমি আজ সকালে সিলেট থেকে নৌকা নিয়ে গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করব বলে ভাবছিলাম কিন্তু সারারাতে আর তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছিনা। তারা স্থান পরিবর্তন করলো নাকি এখানেই আছে বা অন্যদিকে যাওয়ার চেষ্টা করছে তা নিশ্চিত না হয়ে যেতে পারছিনা।"
এদিকে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো হটলাইনে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছেনা। ফলে কার্যত বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সেবা।