সিলেট এখন ভুতুড়ে নগরী, ৫ টাকার মোমবাতি ৩০ টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে না
সিলেট এখন বিদ্যুৎ, ইন্টারনেটবিহীন ভুতুড়ে নগরী। একে তো বিদ্যুৎ নেই, তার উপর নগরীতে মোমবাতির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে অন্ধকারে ঢাকা পড়েছে সিলেট শহর। বন্ধ রয়েছে দোকানপাট, খাবারের হোটেল। ফলে ব্যস্ত জনপদে হঠাৎ নেমে এসেছে পিনপতন নীরবতা, সেই সঙ্গে অজানা আতঙ্ক। যারা ফুডপান্ডা বা বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে খেতেন, বিশেষ করে ব্যাচেলররা পড়েছেন চরম বিপাকে।
সিলেট শহরের ভাতালি এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে কয়েকজনের সঙ্গে মিলে থাকেন ঊর্মি দে। তিনি জানান, 'ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষার জন্য সিলেট শহরে এসেছি ৩ মাস হলো। জীবনের প্রথম বাইরে এসে থাকছি, রান্নাবান্নাও পারি না, তার উপর প্রচুর পড়াশোনার চাপ। সুনামগঞ্জে পানিবন্দি বাবা-মা। একে তো তাদের চিন্তা, কারণ যোগাযোগ করতে পারছি না; তার উপর সিলেট শহরে নেই বিদ্যুৎ। সেই সাথে বন্ধ সব খাবারের রেস্টুরেন্ট। ইচ্ছে করলেও রান্না করার উপায় নেই, কারণ গ্যাসও নেই। দুশ্চিন্তায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে গেছি।'
ব্যস্ততম এলাকা জিন্দা বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল মতিন জানান, 'পানির কারণে দোকান বন্ধ। বাসায়ও পানি। শুয়ে থাকার অবস্থা নেই, কারণ আশপাশের ছিন্নমূল মানুষকে জায়গা দিয়েছি। সেই সাথে খাবারের সংকট। আমি বুঝছি না আসলে কী করা উচিত। সাপের ভয়ে বাইরে গিয়ে দাঁড়াতে ভয় লাগছে। দিন-রাত একই জায়গায়। আর বেরই বা হব কোথায়? সব জায়গায় পানি।'
অন্ধকার আতঙ্ক বাড়াচ্ছে আরও। বিদ্যুৎহীন সিলেটে বাসাবাড়িতে কমে এসেছে আলোর পরিমাণ। গতকাল ৫ টাকার মোমবাতি ১০ থেকে ৫০ টাকায় মিললেও আজ কোথাও মোমবাতি নেই। ফলে অন্ধকারে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এতে আতঙ্ক বেড়েছে।
অসুস্থ মানুষদের আতঙ্ক আরও বেড়েছে মেডিকেল সেবা বিঘ্নিত হওয়ার ঘটনায়। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। হাসপাতালে পানিও উঠে গেছে। ফলে কেউ অসুস্থ হলে কোথায় যাবেন, তা নিয়েও আতঙ্কিত হয়ে আছেন অসুস্থ মানুষজন।
সিলেটের সাপ্লাই এলাকায় থাকেন আব্দুল রহমান। তিনি জানান, এমন আতঙ্ক আর অজানা শঙ্কা জীবনে কখনও আসেনি। 'পাশের মানুষজন কেমন আছে জানি না, নিজের অবস্থাও জানাতে পারি না। আশপাশের মানুষের অভাব হাহাকার দেখে পাশে দাঁড়াতে পারছি না, কারণ নিজেরই খাদ্য সংকট। জানি না কীভাবে এই সময় পার করব। কত দ্রুত এই পানি নেমে যায় আর জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়, তার অপেক্ষা করছি।'
ব্যবসায়ী তানভির রুহেল বলেন, বিকল্প উপায়ে যেকোনোভাবে নেটওয়ার্ক চালু করা সবচেয়ে জরুরি। এতে অন্তত আমরা জানতে পারব কার কী প্রয়োজন, স্বজনরা বেঁচে আছেন কি না।