খোলার অনুমতি পেয়েও বন্ধ বেশিরভাগ প্রেক্ষাগৃহ, দর্শকও কম
অর্ধেক আসন খালি রাখা, স্বাস্থ বিধি মানা, মুখে মাস্ক পরে প্রবেশসহ বেশকিছু নিয়ম মানার শর্তে সাতমাস পর গতকাল (১৬ অক্টোবর) থেকে তথ্য মন্ত্রনালয় দেশের সবগুলি প্রেক্ষাগৃহ খোলার অনুমতি দিয়েছে। তবে খোলার অনুমতি পাওয়ার পরও অধিকাংশ হল বন্ধ রয়েছে। বিশেষ করে রাজধানীর বড় প্রেক্ষাগৃহগুলিতে জ্বলেনি রঙিন আলো।
গতকাল সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। রাজধানীর মধুমিতা, বলাকা, জোনাকী, এশিয়ার মতো বড় হল গুলি এখনো তালাবন্ধ। তাদের হল চালু না করার পেছনে বড় কারণ ভালো চলচ্চিত্র মুক্তি না দেওয়া।
বড় বাজেটের প্রায় ২২ টি ছবি সেন্সর ছাড়পত্র পেলেও, সেগুলি মুক্তি দেওয়া হয়নি সাত মাস পর খোলা কোনো সিনেমা হলে। করোনার মহামারির প্রকোপ কাটিয়ে দর্শক সিনেমা হলে আসবে না বলেই ছবিগুলির প্রযোজকেরা চলচ্চিত্র মুক্তি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে নিম্ন মানের চলচ্চিত্র 'সাহসী হিরো আলম' দিয়েই তাই সাতমাস পর প্রেক্ষাগৃহের পর্দায় রঙিন আলো জ্বলে উঠলো। মুকুল নেত্রবাদি পরিচালিত ওই ছবিটিতে নায়ক আলোচিত ও সমালোচিত হিরো আলম নিজেই। প্রযোজকও তিনি। মুক্তি পেয়েছে দেশের প্রায় ৪০ টি সিনেমা হলে।
ঢাকার আনন্দ সিনেমা হলে চলছে ছবিটি। তবে পাশের প্রেক্ষাগৃহ ছন্দতে চলছে পুরোনো ছবি 'রাজধানীর রাজা'। মর্নিং শোতে দুটি হলের একটিতেও আশানুরুপ দর্শক হয়নি।
অনেকদিন পর চালু হয়েছে সিনেমা হল। মানুষ খুব একটা জানেনা বলে দর্শক কম, এরকম মন্তব্য দুই হলের ম্যানেজার মো. আলাউদ্দিনের।
তিনি বলেন, 'এই হলের প্রায় ৩০ জনের মতো কর্মচারি সবাই গত সাতমাস ধরে বেকার ছিল। বেতন ভাতা পায়নি। ধার-দেনা করে দিন পার করেছি। হল খোলার অনমুতি পেয়েছে জেনে সবাই খুব আনন্দিত। প্রয়োজনীয় সাস্থবিধি মেনেই আমরা চালু করেছি। আসনগুলোতে জীবাণুনাশক ছিটিয়েছি। মাস্ক ছাড়া দর্শকদের মাস্ক সরবরাহ করছি। সাত মাস আর আজ প্রথমদিন, তাই দর্শকও একটু কম। তবে ধীরে ধীরে দর্শক বাড়বে বলে আমাদের মনে হয়।'
গতকাল দুপুরে আনন্দ হলে সিনেমা দেখতে আসেন তেজকুনী বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শামীম মিয়া। প্রেক্ষাগৃহে ঢোকার আগে বলেন, অনেকদিন পর খুলেছে জেনে সিনেমা দেখতে এসেছি। কী সিনেমা চলছে, সেটা দেখে আসিনি।' তিনি সবশেষ শাকিব খানের পাসওয়ার্ড সিনেমা দেখেছেন। এতদিন হল বন্ধ থাকায় তার খারাপ লেগেছে বলেও জানান।
রাজধানীর বলাকা সিনেমা হলে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান গেট লাগানো। একজন নিরাপত্তকর্মী সেখানে বসে আছেন।
তিনি জানান, কবে হল খুলবে তিনি তা জানেন না। মোবাইলে হলের ম্যানেজার মো শাহিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,'আমাদের হল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি এখনও। আগে পরিস্থিতি দেখেশুনে তারপর আমরা ব্যবসা চালুর সিদ্ধান্ত নেব।'
রাজধানীর মতিঝিলে মধুমিতা প্রেক্ষাগৃহেও একই অবস্থা। পুরো হলে শুনশান নীরবতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী জানান, হল খোলা বিষয়ে তারা কিছুই বলতে পারবেন না।
মোবাইলে মধুমিতা হলের কর্ণধার ও সাবেক প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, 'সিনেমাবিহীন ও দর্শকবিহীন সিনেমা হল খুলে কী করব? যে নতুন ছবি মুক্তির মাধ্যমে হল খুলেছে, এসব ছবি তো আমাদের হলে চালাতে পারবো না। দর্শক ফেরাতে ভালো মানের বড় বাজেটের সিনেমা দরকার।'
ভালো মানের কোন চলচ্চিত্র মুক্তি না পাওয়াতে পুরান ঢাকার ইংলিশ রোডে অবস্থিত চিত্রমহলেও চলছে 'সাহসী হিরো আলম'।
সরেজমেনি গিয়ে এই হলের ম্যানেজারকে পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেল গেটম্যান মো. আসলমাকে।
তিনি জানান, সাত মাস বন্ধ থাকলেও হলটির মালিক তাদের পরিবার নিয়ে চলার মতো অর্থ দিয়েছেন সকল কর্মচারিদের। শুক্রবার হল খোলায় তারা যেনো নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। মনিং শো'তে দর্শকদের উপস্থিতি আশানুরুপ না থাকলেও, দুপুরের শো'তে ভালোই দর্শক হয়েছে। হিরো আলম হলটি প্রদর্শন করবে বলে দর্শকদের উপস্থিতি বেশি, বলেই জানালেন আসলাম। দর্শকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই প্রেক্ষাগৃহে প্রবেশ করছেন বলে জানান তিনি।
ঢাকার বাইরেও সব হল খোলেনি বলে জানা গেছে। যশোরের সবচেয়ে বড় প্রেক্ষাগৃহ মনিহার খুললেও খুব বেশি দর্শক আসেনি । হলটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর জিয়াউল হক জানান, আমরা সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল চালু করেছি। তবে খুব বেশি দর্শক আসেনি। এখনও সবাই জানে না যে হল চালু হয়েছে।'
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুক্তির জন্য ২২টির বেশি ছবি সেন্সর সনদ পেলেও হিরো আলম ছাড়া কোন প্রযোজকই সিনেমা মুক্তির জন্য আবেদন করেননি। প্রেক্ষাগৃহ চালু না হওয়ার পেছনে এটাই বড় কারণ।
রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্স খুলবে আগামী ২৩ অক্টোবর। এখন পুরো প্রেক্ষাগৃহ পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতা-সহ গোছানোর কাজ চলছে। তবে রাজধানীর যমুনা শপিং মলের ব্লকবাস্টার সিনেমাস খুলে গিয়েছে। সেখানেও খুব বেশি দর্শক আসেনি বলে জানিয়েছেন যমুনা গ্রুপের একজন কর্মকর্তা।