বিশ্ব নেতাদের জলবায়ু নীতিতে চটেছেন শোয়ার্জনেগার
জলবায়ু সংকট মোকাবিলা করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বৈশ্বিক অর্থনীতি- বিশ্ব নেতৃবৃন্দের এমন বক্তব্যে চটেছেন আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার। যেসব নেতা এমন দাবি করেছেন তাদের 'মিথ্যাবাদী নয়তো নির্বোধ' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন 'দ্য টারমিনেটর' তারকা।
জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন কপ-২৬ কে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সাবেক এই গভর্নর বলেন, কার্বন নির্গমন হ্রাসের ফলে বরং বিশ্ব অর্থনীতি উপকৃত হবে।
আবার পরিবেশগত কারণে অনেকেই মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়ে একপ্রকার ত্যাগ স্বীকার করেছেন বলে দাবি করছেন। তাদের উদ্দেশে নিজের উদাহরণ টেনে শোয়ার্জনেগার বলেন, এই পরিবর্তনের ফলে তার বরং লাভই হয়েছে। মাংস না খাওয়ার ফলে তিনি আগের চাইতেও বেশি স্বাস্থ্যবান এখন।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কারণে সৃষ্ট দূষণের দিকে নজর দিতে বলেছেন আর্নল্ড।
বিবিসির সাথে এক রেডিও সাক্ষাতকারে শোয়ার্জনেগার দাবি করেন, ক্যালিফোর্নিয়ার একের পর এক অর্থনৈতিক সাফল্য এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এটাই প্রমাণ করে যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড হ্রাস এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিপরীত নয়, বরং একই সমান্তরালে চলে।
"তারা (নেতৃবৃন্দ) মিথ্যাবাদী, তারা মূর্খ। কিংবা তারা হয়তো জানেই না কীভাবে এর বাস্তবায়ন করতে হয়। আমরা এটি করে দেখিয়েছি, কারণ এর জন্য যে সাহস থাকা দরকার তা আমাদের ছিল"।
উল্লেখ্য, ২০০৩-২০১১ মেয়াদে গভর্নর থাকাকালীন শোয়ার্জনেগার বিশুদ্ধ বায়ু এবং পুনর্বায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারে চ্যাম্পিয়ন নির্বাচিত হয়েছিলেন। এগজস্ট গ্যাস এবং গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন কমাতে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল তার প্রশাসন।
এমনকি গভর্নরের দপ্তর ছাড়ার পরেও তিনি নিজের খ্যাতি এবং প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে 'শোয়ার্জনেগার ক্লাইমেট ইনিশিয়েটিভ' এর মতো উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং কার্বন-হ্রাস নীতির প্রচারে ব্যবহার করেন।
সাবেক এই বডিবিল্ডার চ্যাম্পিয়ন জানান, গত কয়েক বছরে তিনি তিন-চতুর্থাংশ পরিমাণ মাংস খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন এবং এর ফলে তার কোন ক্ষতি হয় নি, যা হয়েছে তা হলো 'অর্জন'।
তিনি বলেন, "বেশি বেশি শাকসবজি এবং উদ্ভিদজাত খাদ্য গ্রহণের পর থেকে আমার ধমনীর সংকোচন বন্ধ হয়ে গেছে বলে আমার হার্টের ডাক্তার জানিয়েছেন"।
"তাহলে এখানে আমি কী ত্যাগটা করলাম? বরং আমি আমার সুস্বাস্থ্য ফিরে পেয়েছি, আরও দু'বছরের আয়ু বেশি পেয়েছি"।
প্রযুক্তির কাছেও জলবায়ু সংকট সমাধানের অনেক উপায় আছে বলে শোয়ার্জনেগার মনে করেন। সম্প্রতি তিনি তার সামরিক ধাঁচে তৈরী হামার মোটরযানটিকে ডিজেল থেকে ব্যাটারিচালিত যানে রূপান্তর করেছেন। কারণ, জ্বালানীর চেয়ে বৈদ্যুতিক সংস্করণটিই অধিক গতিসম্পন্ন।
বৈশ্বিক পণ্য পরিবহনে যে বায়ু দূষণ এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হয়ে থাকে সে বিষয়ে বিশেষ সতর্ক করেছেন তিনি। কার্বনের নিঃসরণ কমাতে তার পরামর্শ হলো, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য ক্রয় করা।
"স্থানীয় বাজার থেকে পণ্য কিনুন। প্রতিবার যখনই আপনি বিদেশ থেকে কিছু কিনছেন, সেটি পরিবেশের ক্ষতি করছে- আর এটি আপনার করা সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজও"।
একজন রিপাবলিকান রাজনীতিবিদ হিসেবে তার বৈশ্বিক পুঁজিবাদ সমর্থন করা উচিত, এমন ধারণা নাকচ করে দিয়ে এই সাবেক গভর্নর বলেন, "প্রতিযোগিতা তো থাকবেই তবে আপনাকে কৌশলী হতে হবে...কারণ এর জন্য যদি লোকে মারা পড়ে, তাহলে তো আর কিছুই বাকি থাকল না"।
তিনি আগামী সপ্তাহে গ্লাসগোতে জলবায়ু আলোচনায় অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তবে বিদ্যমান 'টপ টু ডাউন' সিস্টেমে তার আস্থা নেই বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন। তার মতে, সমাধান আসতে হবে জনতার চাপে এবং প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের মাধ্যমে।
- সূত্র- বিবিসি