মাইকেল জ্যাকসনের জন্মবার্ষিকী ও তার ৩ আবিষ্কার
সমসাময়িক অন্য শিল্পীদের চাইতে নিজেকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে চেয়েছিলেন তিনি। উপস্থাপনায় সৃজনশীলতা, গানের সাথে মনোমুগ্ধকর নাচ, ব্যক্তিগত আদর্শ, জীবনযাপনের ধারা নিয়ে বহুবার আলোচিত-সমালোচিতও হয়েছেন। আলোড়ন তুলেছেন পশ্চিমা সংগীত জগতে। তার সেসব অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য আজও তাকে আলাদা করে চেনায়। বলা হচ্ছে পপ সম্রাট মাইকেল জ্যাকসনের কথা। বেঁচে থাকলে আজ ৬৩ বছরে পা রাখতেন এই কিংবদন্তি।
গায়ক হিসেবে মাইকেল জ্যাকসন তার প্রতিভার কদর পেয়েছেন বিশ্বের সব জায়গায়। কিন্তু আমরা অনেকেই হয়তো জানি না যে, মাইকেল ছিলেন একজন অসাধারণ উদ্ভাবক। শুধু তাই নয়, নিজের উদ্ভাবিত একটি গ্যাজেটের জন্য পেটেন্টও রয়েছে তার।
নিশ্চয়ই ভাবছেন, একজন গায়ক হয়েও কী এমন উদ্ভাবন করেছিলেন পপ সম্রাট? আজ পাঠককে জানাব মাইকেল জ্যাকসনের তেমনই কিছু সৃজনশীলতার কথা, যা আপনাকে আবারও বুঝিয়ে দেবে তিনি কেন অদ্বিতীয়।
মাধ্যাকর্ষণকে ফাঁকি দিয়েছিল যে জুতা!
১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয় মাইকেল জ্যাকসনের হিট গান 'স্মুদ ক্রিমিনাল'। গানের মিউজিক ভিডিওতে জ্যাকসনকে অভিনব সব নাচের মুদ্রায় দেখা যায়। কিন্তু এর মধ্যে একটি ছিল খুবই আশ্চর্যজনক যা দর্শক-শ্রোতাকে বিস্মিত করেছিল।
ব্যাকআপ নৃত্যশিল্পীদের সঙ্গে নিয়ে সেই অদ্বিতীয় নাচ পরিবেশন করেছিলেন তিনি। নাচের মাঝে তাকে দেখা যায় সামনের দিকে ৪৫ ডিগ্রি ঝুঁকে আছেন, অথচ তার পা মাটিতে পড়ছে না! কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার ফিরে আসছেন আগের অবস্থানে।
আপনি নিজেও হয়তো গানটির ভিডিও দেখতে দেখতে ভেবেছেন, এটা হয়তো স্রেফ ক্যামেরার কারসাজি কিংবা ভিডিও সম্পাদনা কৌশল। কিন্তু না, এই দুর্দান্ত স্টান্ট নেওয়ার পেছনে ছিল একজোড়া বিশেষ জুতার ভূমিকা। এই জুতাজোড়ার নকশা করেছিলেন জ্যাকসন নিজেই। নানা প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, নিজের দুই সহকারী, মাইকেল বুশ ও ডেনিস টাম্পকিনকে সঙ্গে নিয়ে তিনি এর নকশা করেন।
জ্যাকসনের এই জুতা 'অ্যান্টি-গ্র্যাভিটি শু' নামে পরিচিত। ১৯৯৩ সালের অক্টোবরে জ্যাকসনসহ তিন সহপ্রতিষ্ঠাতাকে তাদের উদ্ভাবনের জন্য পেটেন্ট দেওয়া হয়।
কিন্তু মাধাকর্ষণকে ফাঁকি দেওয়া এই জুতাজোড়ার পেছনের রহস্য কি? মঞ্চের মেঝে থেকে উঠে আসা একটা রড এবং এই বিশেষ জুতার সমন্বয়ে তৈরি হয় এই গ্যাজেট। অ্যান্টি গ্র্যাভিটি শু'র মধ্যে ভারসাম্য ধরে রাখার জন্য অ্যাঙ্কল সাপোর্ট এবং কাট-আউট হিল থাকে যা ওই রডের উপর দিয়ে গড়িয়ে যেতে পারে। এর ফলেই মঞ্চে সেই ৪৫ ডিগ্রি তির্যক ইফেক্ট তৈরি করা সম্ভব হয়।
তার নাচ এবং...অবশ্যই 'মুনওয়াক'
কাউকে যদি মাইকেল জ্যাকসনের একটি বিশেষ গুণের কথা বলতে বলা হয়, তাহলে সে একবাক্যে বলবে তার অভিনব নাচের কৌশলের কথা। গানের পাশাপাশি একই সময়ে জড়তাহীনভাবে নাচতে পারার ক্ষমতা ছিল তার। জ্যাকসনের সেসব নাচের মধ্যে 'মুনওয়াক' অন্যতম।
তবে নাচের এই মুদ্রাটি পুরোপুরি জ্যাকসনের নিজের আবিষ্কার নয়। মুনওয়াকের মতো একই ধাঁচের নাচ ১৯৩০ সালের দিকে আমেরিকায় প্রচলিত ছিল। সে সময় জ্যাজ মিউজিশিয়ান ক্যাব ক্যালোওয়ে একই রকম নাচ পারফর্ম করতেন। ক্যালোওয়ে এই মুদ্রার নাম দিয়েছিলেন 'দ্য বাজ'।
নিজের মস্তিষ্কপ্রসূত না হলেও, ত্রিশের দশকের সেই নাচের মুদ্রাকে নতুন করে 'মুনওয়াক' (চাঁদে হাঁটা) নামকরণের জন্য ব্যাপক প্রশংসা পান জ্যাকসন। এরপর থেকে এটি তার সাথে এতটাই জড়িয়ে যায় যে মানুষ একে জ্যাকসনেরই উদ্ভাবন হিসেবে ধরে নেয়।
১৯৮৩ সালে 'মোটাউন টুয়েন্টি ফাইভ: ইয়েস্টারডে, টুডে, ফরেভার' নামক একটি বিশেষ টিভি শোতে হাজির হন জ্যাকসন। শো'তে নিজের হিট গান 'বিলি জিন' এর তালে নাচার সময় প্রথমবারের মতো 'মুনওয়াক' দেখান তিনি। এরপর থেকে প্রায় প্রতিটি শো'তেই মুনওয়াক পারফর্ম করেছেন তিনি।
শিল্প জগতের অনুপ্রেরণা
মাইকেল জ্যাকসনই প্রথম শিল্পী নন, যিনি নিজের গানের মিউজিক ভিডিও প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তারপরেও, পপ গানে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসায় তাকে প্রায়ই নানা সম্মানজনক পদকে ভূষিত করা হয়েছে। এই পরিবর্তনের আরম্ভ হয়েছিল 'থ্রিলার' দিয়ে।
জ্যাকসনের ১৫ মিনিটের মিউজিক ভিডিও 'থ্রিলার'কে বলা হয় সর্বকালের সেরা মিউজিক ভিডিও। এটি ছিল এমন এক ভিডিও, যা সংগীত জগত আগে কখনো দেখেনি।
বড় বাজেট, দারুণ সব কস্টিউম, স্পেশাল ইফেক্ট এবং অসাধারণ কোরিওগ্রাফি ও মেকআপ—এই সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছিল 'থ্রিলার'-এর ভিডিও। ওই সময়ে থ্রিলারকে একটা গান নয়, বরং ছোটখাটো চলচ্চিত্রই মনে হয়েছিল! বলা হয়ে থাকে, এই ভিডিওর মাধ্যমে পপ সংস্কৃতি ও সঙ্গীতের জগতে থাকা সব বর্ণবৈষম্যমূলক ধারণাকে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন মাইকেল জ্যাকসন।
- সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট