‘ভাবুন তো এমন একটি দেশের কথা, যেখানে কোনো শিল্পী নেই’: ভেনিসে মাতৃভূমি নিয়ে আফগান চলচ্চিত্রকারদের আর্তনাদ
তালেবানরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাওয়া নারী চলচ্চিত্রকাররা নিজ দেশের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা ভুলেননি। শনিবার ইতালির ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের এক বিশেষ আলোচনাসভায় যোগ দিয়ে তাদের কণ্ঠে ঝরে পড়ে সেই বেদনাবোধ।
আলোচনায় অংশ নেন আফগান ফিল্ম অর্গানাইজেশনের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট সাহরা করিমি এবং ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্রকার সাহরা মনি।
কিছুতেই দেশ ছেড়ে পালাবেন না, তালেবানরা কাবুল দখলের পর জীবন-মৃত্যুর দোলাচলে এমন সিদ্ধান্তে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনড় থাকলেও অবশেষে আফগানিস্তান ছাড়তে বাধ্য হন চলচ্চিত্রকার করিমি। সে গল্প তিনি রিপোর্টারদের শুনিয়েছেন।
তার বেশ কিছু চলচ্চিত্র প্রকল্প এখনো প্রি-প্রোডাকশন ও পোস্ট প্রোডাকশন পর্যায়ে রয়েছে। সেগুলোর ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।
'আফগানিস্তানের আখ্যান পাল্টে দেওয়ার স্বপ্ন ছিল আমাদের। কেননা দেশটির এমন বাস্তবতা নিয়ে আমরা হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম নানা রকমের চলচ্চিত্র বানিয়ে আমাদের গল্পগুলোকে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে, একটু ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখাতে, যেন দেশটির প্রকৃত সৌন্দর্য ফুটে ওঠে,' বলেন সাহরা করিমি।
কিন্তু আচমকাই তার সেই স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায়।
'ভাবুন তো এমন একটি দেশের কথা, যেখানে কোনো শিল্পী নেই, কোনো চলচ্চিত্রকার নেই, তাহলে সে দেশের নাগরিকেরা কীভাবে আত্মপরিচয় প্রকাশ করবে?' প্রশ্ন রেখে করিমি বলেন, 'আমরা হয়তো রাজনৈতিক দূত নই, তবে আমরা আমাদের নিজেদের গল্পের, আমাদের আত্মপরিচয়ের দূত।'
'আমরাই সেই মানুষ, যারা আমাদের চলচ্চিত্রের মাধ্যমে, আমাদের সংগীতের মাধ্যমে, আমাদের সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে নিজেদের আত্মপরিচয় বিশ্বের কাছে হাজির করি,' যোগ করেন ওই চলচ্চিত্রকার।
সাহরা করিমি জানান, 'থাকব নাকি চলে যাব- জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্তের সামনে পড়ে' কয়েক ঘণ্টা দোলাচলে কাটিয়ে, ১৫ আগস্ট সকালে তিনি দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।
আফগানিস্তানের বেশ কিছু তরুণ ও উজ্জ্বল নক্ষত্রও দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান তিনি; তবে আরও জানান, এখনো প্রতিশ্রুতিশীল অনেক চলচ্চিত্রকার দেশে আটকা পড়েছেন। নিরাপত্তার খাতিতে তারা তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টগুলো মুছে ফেলছেন।
অন্যদিকে, সাহরা মনি জানান, প্রতিদিনই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, নানা বিড়ম্বনার মধ্যে তাকে নিজ দেশে সময় কাটাতে হয়েছে। তার বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ ও ইন্টারনেট সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে। কেননা, নিজ দেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে এবং দেশটিতে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পুনরায় চালু করতে চেয়েছিলেন তিনি।
'আমরা দেশেই ছিলাম। কেননা, আমরা ছিলাম আশাবাদী মানুষ,' বলেন তিনি। কিন্তু তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পর 'মনে হলো, আমাদের লড়াই করার আর কিছুই নেই। আমরা সবকিছু খুইয়ে ফেলেছি।'
-
সূত্র: এপি/দ্য ন্যাশনাল