১৫০,০০০ ডলারের মোটরসাইকেলে চড়েন কিয়ানু রিভস! কী কী আছে অভিনেতার সংগ্রহে?
পপ সংস্কৃতির জগতে কিয়ানু রিভস একজন অসামান্য খ্যাতিমান অভিনেতা। 'দ্য ম্যাট্রিক্স' তারকার ঝুলিতে রয়েছে বেশকিছু ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র; ডিসি কমিকসের অ্যান্টি-হিরো হিসেবে দৈত্য-দানবদের পরাহত করেছেন, 'স্পিড'-এ সান্দ্রা বুলকের সঙ্গে উঠেছেন বাসেও। শেষোক্ত বিষয়টি এই কানাডিয়ান অভিনেতার নামের সাথে সবচেয়ে বেশি মানানসই। কারণ 'স্পিড' বা গতিই অভিনেতার প্রিয় শখ ও অ্যাডভেঞ্চার! আর সেই শখের নাম হলো মোটরসাইকেলে চড়া!
কানাডার টরন্টোতে বেড়ে ওঠার সময় কিয়ানু রিভস দেখতেন ইয়র্কভিলেতে প্রায়ই মোটরসাইকেল গ্যাং জড়ো হয়। বাইক, বাইকের গতি, বাইক চালক- এই সবকিছুই যেন ১০ বছরের কিয়ানুর মাথায় আলোড়ন তৈরি করে, যা বড় হওয়ার পরেও দূর হয়ে যায়নি। ১৯৮৬ সালের গ্রীষ্মে জার্মানির বাভারিয়াফিল্মপ্লাটজ-এ শ্যুটিং করছিলেন কিয়ানু। সেসময় তিনি এক নারীকে দেখেন একটি কাওয়াসাকি এনডুরো বাইকে করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তখন তিনি ঐ নারীকে অনুরোধ করলেন তাকে বাইক চালানো শিখিয়ে দিতে। সেবার শ্যুটিং থেকে ফিরেই নিজের প্রথম মোটরসাইকেল কিনে ফেলেন এই হলিউড তারকা। তার প্রথম বাইকের মডেল ছিল কাওয়াসাকি ৬০০ এনডুরো। আর এখান থেকেই মোটরবাইকের প্রতি তার নেশা শুরু!
এর এক বছর পর নিজের দ্বিতীয় বাইকটি কেনেন কিয়ানু রিভস, সেটি ছিল একটি ১৯৭৩ নর্টন কমান্ডো ৮৫০ এমকেটুএ। একথা না বললেই নয় যে, এই বাইকে চড়েই টরন্টো থেকে ফ্লোরিডা ১৩০০ মাইল পাড়ি দিয়েছেন 'জন উইক' খ্যাত অভিনেতা! সাথে নিয়েছিলেন 'মাই ওউন প্রাইভেট আইডাহো'র চিত্রনাট্য। মার্কিন অভিনেতা রিভার ফিনিক্স যেন এই ছবিতে তার সঙ্গে কাজ করেন, সেজন্য তাকে বুঝিয়ে রাজি করানোর উদ্দেশ্য ছিল তার।
নতুন নতুন ঝাঁ চকচকে মোটরসাইকেলের পাশাপাশি ব্যবহৃত বাইক কিনে সেটি ফিল্মের সেটে কাজে লাগানোর জন্যও তিনি পরিচিত। সাধারণত, সিনেমা শেষ হয়ে যাওয়ার পর তিনি সেই বাইক বিক্রি করে দেন- তবে সবসময় নয়। শ্যুটিং এর কাজের জন্য আনা বাইকগুলো থেকে ইতোমধ্যে ৪-৫টি বিক নিজের মালিকানায় নিয়েছেন এই কানাডিয়ান তারকা।
তবে কিয়ানু রিভসের ব্যক্তিগত বাইকের সংগ্রহ দেখলে এবং এর বিস্তারিত শুনলে যে কারো অবাক হওয়া স্বাভাবিক। যদিও তার সংগ্রহের বাইকগুলোই বিশ্বের সবচেয়ে দামি বা সেরা বাইক নয়। কিন্তু হলিউড তারকার মালিকানায় থাকা বাইকগুলোও যে বেশ উচুদরের- তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
কিয়ানু রিভসের সংগ্রহের সবচেয়ে দামি বাইক হলো ওয়েস্ট কোস্ট চপার-এর জেসে জেমসের তৈরি একটি কাস্টম বাইক এল ডায়াবলো। 'রিচেস্ট' সূত্র বলছে, এই বাইকটির মূল্য প্রায় ১৫০,০০০ ডলার এই ব্ল্যাক চপারে রয়েছে একটি ওয়ান-অফ গ্যাস ট্যাংক যেখানে কোম্পানির বিখ্যাত লৌহ ক্রস লোগো খোদাই করা।
হলিউড অভিনেতার সংগ্রহের দ্বিতীয় গতিদানব হলো এআরসিএইচ মোটরসাইকেল কোম্পানির একটি বাইক। ২০১১ সালে হাই-এন্ড কাস্টম বাইক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গার্ড হলিংগার সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন কিয়ানু রিভস। এই মুহূর্তে গার্ড হলিংগারকে ধরা হয় আমেরিকার সবচেয়ে সেরা মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। এআরসিএইচ তাদের বাইকগুলোর জন্য ২০০ বিলেট অ্যালুমিনিয়ামের যন্ত্রাংশ তৈরি করে এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকেও যন্ত্রাংশ নিয়ে আসে। কিয়ানু রিভসের গাড়িটির মডেল হলো ২০১৯ আর্ক কেআরজিটি-১। এতে রয়েছে একটি এস অ্যান্ড এসে ১২৪ সিআই ভি-টুইন ইঞ্জিন, যার আনুমানিক দাম হতে পারে ৮৫,০০০ টাকা।
কিয়ানু রিভসের কাছে থাকা তৃতীয় সেরা বাইকটি হলো ২০,০০০ ডলার মূল্যের 'স্পেশাল ম্যাট্রিক্স গিন' ডুকাটি ৯৯৯৮। ২০০৩ সালে 'স্য ম্যাট্রিক্স রিলোডেড' মুক্তি পাওয়ার পর বাজারে এই বাইকের চাহিদা এত বেড়ে যায় যে, ডুকাটিকে ২০০৪ সালে বাজারে ছাড়ার জন্য একটি নতুন '৯৯৮ ম্যাট্রিক্স রিলোডেড এডিশন' তৈরি করতে হয়। বাইকের এই বিশেষ সংস্করণে আছে 'ম্যাট্রিক্স রিলোডেড' গ্রাফিক্স; ক্লাচ এবং ব্রেক ধরার অংশে থাকবে স্বর্ণের কিছু কারুকাজ, ওয়াইন্ডস্ক্রিন হবে রূপার প্রলেপ দেওয়া এবং নবও থাকবে স্বর্ণের প্রলেপ দেওয়া। ৯৯৮ সিসি ও ভি-টুইন ইঞ্জিনের এই বাইকে থাকবে ১২৩ হর্সপাওয়ার।
জিকিউ'কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিয়ানু রিভস জানিয়েছিলেন, বাইকে চড়ে ভ্রমণ তাকে সুন্দরভাবে ভাবতে, অনুভব করতে ও ছুটে চলতে শেখায়। সে কারণেই নিজের সংগ্রহে বিখ্যাত বাইকগুলো জড়ো করছেন এই অভিনেতা।
সূত্র: স্ল্যাশ গিয়ার, জিকিউ