আমি সাধারণ অভিনেতা হতে চাইনি: আশীষ খন্দকার
অভিনেতা, অনুবাদক ও নির্দেশক হিসেবেই দেশের মিডিয়ায় পরিচিত আশীষ খন্দকার। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অভিনেতা আশীষকে নিয়েই আলোচনা হচ্ছে বেশি।
সম্প্রতি আবু রায়হানের পরিচালনায় 'অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন' নামের একটি শিশুতোষ সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের গল্প অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমায় গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন। তার চরিত্রটির নাম 'নসু ডাকাত', যাতে তিনি অভিনয় করে প্রশংসিত হচ্ছেন।
এতে অভিনয় প্রসঙ্গে আশীষ খন্দকার বলেন, 'জাফর ইকবাল আমার পছন্দের একজন লেখক। তার লেখার ভক্ত আমি এমনিতেই। যখন তার গল্প নিয়ে নির্মিত সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব পাই, তখন অন্যরকম একটা আগ্রহ কাজ করছিল। আমি অভিনয়ের আগে তার সেই গল্পটি পড়েছিলাম। এই সিনেমায় আমার জার্নিটা মোটেও কল্পনানির্ভর কিংবা স্ক্রিপ্টনির্ভর ছিলো না। এটি ছিল একটি গভীর জার্নি। ছবিটি নিয়ে দর্শকের বর্তমান উৎসাহ কোন পর্যায়ে আছে তা আমি ঠিকমতো বলতে না পারলেও এটি বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে দারুণ প্রভাব বিস্তার করেছে বলে আমি মনে করছি। এ ধরনের সিনেমা নিয়মিত তৈরী হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি।'
এদিকে তার অভিনীত আরেকটি সিনেমা শিগগিরই মুক্তি পাবে। সেটির নাম 'সুলতানপুর'। পরিচালনা করেছেন সৈকত নাসির। এতে তিনি কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এই সিনেমা নিয়ে আশাবাদী আশীষ খন্দকার। তিনি বলেন, 'এটির মূল চরিত্র আমি। মূলত এতে আমার চরিত্রটি নেতিবাচক। মানে খলচরিত্র। সেন্সর ছাড়পত্রও পেয়েছে এটি। আশা করছি এটিও বক্তব্যের কারণে দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে।'
এদিকে তার অভিনীত একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে। এটি হলো আ কা রেজা গালিবের পরিচালনায় 'ধর'। যেটির গল্প লিখেছেন আফসান চৌধুরী। এছাড়া নুরুল আলম আতিকের পরিচালনায় 'লাল মোরগের ঝুঁটি' নামের একটি সিনেমাতেও অভিনয় করেছিলেন তিনি। সেটিও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে।
আশীষ খন্দকারের সিনেমায় অভিষেক হয় অভিনয় শুরুর অনেক পরে। সেলিম আল দীনের 'চাকা' নামের একটি গল্প নিয়ে মোরশেদুল ইসলাম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। যাতে অভিনয় করে প্রশংসিত হন আশীষ খন্দকার। সেই ছবিটি দেশ-বিদেশে আলোচিত ও পুরস্কৃত হয়েছিল।
তারপর তিনি অং রাখাইনের পরিচালনায় 'দ্য পোস্ট অফিস' নামের আরেকটি বিকল্প ধারার সিনেমায় অভিনয় করে সাড়া জাগিয়েছিলেন। তবে প্রচলিত বাণিজ্যিক ধারার সিনেমায় তাকে অভিনয়ে দেখা যায়নি। এ প্রসঙ্গে আশীষ খন্দকার বলেন, 'মোরশেদুল ইসলামের 'চাকা' করার পর যে ধরনের সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব পাচ্ছিলাম, তা যদি করতাম, তাহলে আমি এতোদিনে মূল লক্ষ্য থেকে হারিয়ে যেতাম। আমি আসলে সাধারণ অভিনেতা হতে চাইনি। আমি অভিনয়ের পুরো জায়গাটাকে নিজের রুচি এবং স্বাধীনতার জায়গা থেকে দেখার চেষ্টা করেছি। তাই হয়ত কমার্শিয়াল ভ্যালু তৈরী হয়নি। কিন্তু একজন শিল্পী হিসেবে আমি যেভাবে পরিভ্রমণ করতে চেয়েছি, মনে হয় ঠিক সেভাবেই যেতে পারছি। এই কাজটি আমাদের এখানে মোটেও সহজ নয়। তবু আমি আমার মতোই এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব।'
আশীষ খন্দকার উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করার কয়েক বছর পর ভারতের ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামাতে অভিনয়ের উপর তিন বছরের ডিপ্লোমা ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। ১৯৯১ সালে সেখানকার পাঠগ্রহণ শেষ করে দেশে ফিরেই মঞ্চনাটকের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। মূলত তিনি অভিনয় প্রতিভাধরদের খুঁজে বের করে প্লাটফর্ম দেয়ার কাজটি করে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি তিনি মলিয়রের একটি নাটক অনুবাদ করেছেন। ৪০ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই নাটকটি তিনিই নির্দেশনা দিচ্ছেন। এটি আগামী ১০ ও ১১ মার্চ ঢাকার আলিয়স ফ্রঁসেজে মঞ্চস্থ হবে। সেখানে তিনি প্রতি শুক্রবার ২ ঘণ্টা করে ৬ থেকে ১৪ বছর বয়স্ক শিশু-কিশোরদের অভিনয় শেখানোর কাজ করেন। এছাড়া নিজের থিয়েটার সংগঠনের কাজ তো করছেনই।
এভাবেই নিজেকে সাংস্কৃতিক জগতের স্রোতধারায় মিশিয়ে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন আগামীর দিকে।